সমীর দাস, কালচিনি: তিন বছর আগে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার যখন আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) কালচিনির একটি গির্জার সামনে তঁার দেখা মেলে তখন চেহারা একেবারে বদলে গিয়েছে। পেটে খাওয়া নেই। ধুলোমাখা পোশাক। জীর্ণ অবস্থায় গির্জার সামনে আশ্রয় নিয়েছিলেন অসমের বছর আটত্রিশের নিকোদীপ তিরকি। আর কখনও বাড়ি ফিরতে পারবেন তা হয়তো ভাবেননি। আর ভাববেনই বা কী করে। পাচারকারীদের ফঁাদে পা দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন হাওড়ায় (Howrah)। অবশেষে ইচ্ছেশক্তির জোরে কালচিনি পৌঁছেছেন। এবার বাড়ি ফিরতে পারবেন নিকোদীপ।
এদিন ওই গির্জা কমিটির সদস্য সুজিত ওরাওঁ ওই তরুণকে পড়ে থাকতে দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৃপার সম্পাদক কমল কুজুর, উপদেষ্টা হরিহর নাগবংশীকে জানায়। এরপর তাঁরা সেখানে পৌঁছে তরুণকে উদ্ধার করেন। তঁারা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা তরুণকে কালচিনির লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। ওই সংগঠনের তরফে বিষয়টি কালচিনি থানায় জানানো হয়েছে। কালচিনি থানার পুলিশ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক বছর আগে। অসমের (Assam) শোণিতপুর জেলার গোবরাজুলি চা বাগানের ওই তরুণ সহ তিনজনের কয়েকজন পাচারকারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। মোটা টাকা মাইনে, বাসস্থান, খাবার সহ একাধিক টোপ দিয়ে তাঁদের এ রাজ্যের হাওড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই তঁাদের জীবনটা পালটে যায়। হাওড়া পৌঁছানোর পর অন্য দুই তরুণকে আলাদা জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর নিকোদীপের ওপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। ওই তরুণের কথায়, তাঁকে হাওড়ায় কখনও হোটেলে আবার কখনও বাড়ির পরিচারকের কাজ দেওয়া হত। তবে কোথাও বেতন তো দূরের কথা, ভরপেট খাবারও দেওয়া হত না। শুধু তাই নয়, তঁাকে নিয়মিত মারধর করা হত মালিকের বাড়িতে। সঙ্গে মোবাইল ফোন না থাকায় বাড়িতে যোগাযোগের রাস্তাও বন্ধ ছিল তাঁর। তবে কথায় আছে না ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। দিন কয়েক আগে সুযোগ বুঝে কাজ থেকে পালিয়ে যান ওই তরুণ। এক ট্রাকচালকের সাহায্যে এদিন তিনি কালচিনি পৌঁছান। আশ্রয় নেন এক গির্জার সামনে। সেখান থেকেই তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
কমল কুজুর বলেন, ‘ওই তরুণ একটু সুস্থ হলে আমরা তাঁকে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব। তরুণের মাধ্যমে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হবে। আপাতত তিনি লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চা বাগানের সহজসরল মানুষ বারবার পাচার হচ্ছেন। আমরা চা বাগানের মানুষকে সচেতন করছি।’