প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানের এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি, পাখির ডাকে জেগে’। কিন্তু বর্তমান সময়ে নগরায়ণের কারণে যখন গাছ কিংবা জলাশয়ের সংখ্যা দিনের পর দিন কমেই চলেছে, তখন এর বাস্তবায়ন আদৌ কতটা সম্ভবপর সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু এরকম এক বাড়ি রয়েছে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার পররপার গ্রাম পঞ্চায়েতের চাপাতলি গ্রামে, যেখানে ভোরবেলা ঘুম ভাঙে অ্যাবটস ব্যাবলার, পাফ থ্রোটেড ব্যাবলারের মতো পাখিদের গানে। যেই বাড়ির বাগানে সারাদিন খেলে বেড়ায় ময়না, টিয়া, কোকিল, শালিক ছাড়াও কয়েক প্রজাতির বুলবুল ও পাপিয়া এবং তিনরকমের প্যাঁচা। অনেকেই মনে করেন, ‘এই বাড়ির মালিকের নাম জীবনকৃষ্ণ হতে পারে কিন্তু এখানকার প্রকৃত বাসিন্দা পাখিরাই।’
পাখিপ্রেমী জীবনকৃষ্ণ রায় বাড়িতে প্রায় দেড়শো রকমের গাছ লাগিয়েছেন যাতে সেখানে পাখিরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। আর পাখিরাও তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে প্রাণভরে। ফলাফল, সারাবছর ওই বাড়ির বাগানে কমবেশি প্রায় ৯০ রকমের পাখির দেখা মেলে। বছর পয়ষট্টির জীবনকৃষ্ণ কর্মজীবনে চাকরি করতেন সেরিকালচার বিভাগে। যদিও গাছ লাগানোর শখ সেই স্কুলজীবন থেকে। তাঁর কথায়, ‘মা ছোটবেলায় গ্রামের বিভিন্ন পাখিদের চিনিয়েছিলেন। সেই থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে পাখি এবং প্রকৃতির প্রতি এক অন্যরকম ভালোবাসা তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রকৃতিকে বাঁচাতে হলে গাছ ও পাখিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তাই আমার এই সামান্য প্রচেষ্টা।’ গাছ লাগানো ছাড়াও একাধিক সুউচ্চ পর্বত শিখরে আরোহণ করেছেন। কয়েকশো প্রকৃতি পাঠ শিবিরে অংশ নিয়ে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিকে ভালোবাসার পাঠ দিয়েছেন।
এখনও সময় পেলেই নিজের গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে পাখি চিহ্নিতকরণ চলে। ইতিমধ্যেই গ্রামে প্রায় ১২৬ প্রজাতির পাখি চিহ্নিত হয়েছে। তাদের নাম, তালিকা ও বৈশিষ্ট্য রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগের ঠিকানা অবশ্য জীবনকৃষ্ণেরই বাড়ি। তাঁর থেকেই জানা গেল, বাড়ির তিন বিঘা জমিতে প্রায় ৮০ রকমের ফুল গাছ, ৭০ রকমের ফল ও বড় গাছ, ২০ প্রজাতির ঔষধি ও ১০ রকমের লতাগুল্ম এবং কয়েক প্রজাতির ঘাস রয়েছে। আর এই ফুল ও ফলের টানেই বাড়িতে পাখিরা তো বটেই সেইসঙ্গে প্রজাপতি, মৌমাছিরও আনাগোনা লেগেই রয়েছে।