আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারের কলেজগুলোর স্নাতক স্তরের ফলাফল এবার হতাশাজনক। সোমবার নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি স্নাতক স্তরের পরীক্ষার প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের ফল প্রকাশ করেছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এনবিইউ’র অন্তর্গত আলিপুরদুয়ারের প্রতিটি কলেজেই পাশের হার অত্যন্ত কম। বিশেষ করে প্রথম সিমেস্টারের ফলাফল একেবারেই হতাশাজনক। বেশিরভাগ কলেজেই প্রথম সিমেস্টারে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীও পাশ করতে পারেনি।
আলিপুরদুয়ার মহিলা মহাবিদ্যালয়ে প্রথম সিমেস্টারে পাশের হার মাত্র ২০ শতাংশ। তৃতীয় সিমেস্টারে ৩০ শতাংশ, আর পঞ্চম সিমেস্টারে তুলনামূলক ভালো ফল করে পাশের হার হয়েছে ৫৪ শতাংশ। শামুকতলা সিধো-কানহো কলেজের ফলাফল আরও ভয়াবহ। প্রথম সিমেস্টারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৮১ জন, পাশ করেছেন মাত্র তিনজন। তৃতীয় সিমেস্টারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৬৮ জন, তার মধ্যে পাশ করেছেন ১৫ জন। পঞ্চম সিমেস্টারে ৭৫ জনের মধ্যে পাশ করেছেন ৩৭ জন।
আলিপুরদুয়ার কলেজের ভূগোল বিভাগে আরও ভয়াবহ অবস্থা। তৃতীয় সিমেস্টারে একজন লিখিত পরীক্ষায় একটি পেপারে শূন্য পেয়েছেন। বিভাগীয় প্রধান সুশান্ত দাস বলেন, ‘যে শিক্ষার্থী শূন্য পেয়েছে, সে প্রথম এবং দ্বিতীয় সিমেস্টারে বেশ ভালো নম্বর পেয়েছিল। এমনকি, ওই পেপারের প্র্যাকটিকাল পরীক্ষায়ও তার ভালো নম্বর রয়েছে। কিন্তু ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সে সম্পূর্ণ পরীক্ষা দেওয়ার পরও শূন্য পেল কেন, তা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।’
পাশের হার এত কম হওয়ার কারণ নিয়ে চিন্তায় শিক্ষক মহল। আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ জয়দেব রায় বলেন, ‘কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম। অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করে। ফলে ক্লাস করার সময় পায় না। অনিয়মিত ক্লাস করার কারণেই ফল খারাপ হয়েছে।’
শামুকতলা সিধো-কানহো কলেজের অধ্যক্ষ আশুতোষ বিশ্বাসের সাফাই, ‘প্রথম সিমেস্টারে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীরা খুব কম সময় পেয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরপরই পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা পড়ার সুযোগই পায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফল খারাপ হয়েছে।’
আলিপুরদুয়ার মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায়ও একই মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি কম। প্রথম সিমেস্টারের সময় তারা পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি। এ কারণে ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।’
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবার অনেকেই বলছেন, সঠিক গাইডেন্স এবং পর্যাপ্ত ক্লাস পেলে ফলাফল আরও ভালো হতে পারত। শিক্ষার্থী সৌরজিৎ ঘোষ, অস্মিতা ভট্টাচার্যরা জানান, পরীক্ষার আগে সিলেবাস সম্পূর্ণ শেষ করা যায়নি। কিছু বিষয় না বুঝতে পারায় ফলাফলও ভালো হয়নি।
এদিকে, শিক্ষকদের মতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত টিউটোরিয়াল বা রিভিশনের ব্যবস্থা করলে ফলাফল উন্নত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোচিং বা রেমেডিয়াল ক্লাস চালু করার পরামর্শও দিচ্ছেন অনেকে।
শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে ইতিমধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা বিভাগ চিন্তিত। আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং পড়াশোনার মানোন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। একইসঙ্গে, প্রথম সিমেস্টারের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে পরেরবার থেকে।