নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: একজন আজীবন কাজ করে এসেছেন টোটো ভাষা নিয়ে। আরেকজন সময় দিয়েছেন নারী পাচার রোধে। প্রথমজন আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) টোটোপাড়ার (Totopara) বাসিন্দা ধনীরাম টোটো। আরেকজন ওদলাবাড়ির (Odlabari) বাসিন্দা রাজু নেপালি। বুধবার এই দুজনকেই সম্মানিত করা হল গভর্নর এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিয়ে।
কোনও না কোনও ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু অবদান রয়েছে, এমন কাউকে না কাউকে প্রতিবছরই এই সম্মান দেওয়া হয় রাজভবনের তরফে। মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় এসেছিলেন রাজ্যপাল ডঃ সিভি আনন্দ বোস। তিনি নিজেই ধনীরাম ও রাজুকে এই সম্মানে ভূষিত করেন তাঁদের বিশেষ অবদানের জন্য। দৃশ্য স্মারক ছাড়াও ১০ হাজার টাকা করে তাঁদের দেওয়া হয়।
ধনীরামের নাম তো ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় স্তরে। আগেই পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তাঁর শিরোপায় নতুন পালক হল এদিনের এই সম্মান। টোটো ভাষার লিপি তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। টোটোদের লিপি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি টোটো কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে রক্ষার কাজও করে চলেছেন। লড়াই করছেন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য। এদিন পুরস্কার পাওয়ার পর ধনীরাম বললেন, ‘আমি টোটোদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কাজ করে চলেছি। টোটোদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারে, সেটাই আমার লক্ষ্য।’
অন্যদিকে, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রাজুর ধ্যানজ্ঞানজুড়ে নারী পাচার রোখার ভাবনা। মধ্যবয়স্ক রাজু নিজের সবটা সময়ই এই কাজে ব্যয় করেন। আর কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত নন। সংস্থার সহকর্মীদের সঙ্গে এই কাজটাই করে আসছেন গত প্রায় দেড় দশক ধরে। রাজু জানালেন, গত দুই মাসে তাঁর সংগঠনের সহায়তা উত্তরের ৩টি জেলা আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং থেকে সব মিলিয়ে ২২ জন পাচার হওয়া শিশু ও মহিলাকে উদ্ধার করা গিয়েছে। রাজু বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন সমাজবন্ধু বলে মনে করি। তাই আর কোনও পেশায় যুক্ত হইনি। ভবিষ্যতেও এই কাজটাই করে যেতে চাই।’
এদিন এই দুজনের হাতে রাজ্যপাল পুরস্কার তুলে দিয়ে তাঁদের কীর্তির কথা কিছুটা তুলে ধরেন। রাজু এবং ধনীরাম, দুজনেই এই পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত। জানালেন, রাজ্যপালের হাত থেকে এমন সম্মান পাওয়া জীবনের এক পরম প্রাপ্তি।