মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: হকারদের(Hawkers) পুনর্বাসনের জন্য তিনটি জায়গা বেছে দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু সেই জোনগুলি মূলত গলিপথে। রাস্তার উপর থেকে সরে গিয়ে ভেতরের অংশে নতুন করে দোকান দিলে খদ্দেররা আসবেন তো? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে হকারদের মধ্যে। পুনর্বাসনের জায়গা পাবেন বলে আশার আলো দেখেছিলেন হকাররা। কিন্তু এখন নির্ধারিত হকার জোনের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাঁদের।
প্রাথমিকভাবে আলিপুরদুয়ার(Alipurduar) শহরে তিনটি জায়গা ‘হকার জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে পুরসভা। পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর বলেন, ‘হকারদের স্বার্থে আমরা তিনটি জায়গা চিহ্নিত করেছি।’ আলিপুরদুয়ার শহরের বিএমসি মাঠ লাগোয়া মায়া টকিজ রোডের ধারে প্রায় ৫ ডেসিমাল জায়গা হকারদের জন্য রাখা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হলে বিএমসি মাঠ থেকে চিহ্নিত ওই এলাকায় ভিড় হয়। হকাররা সেখানে দোকান দিলে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তবে সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ যায় না। দিনেও শুনসানই থাকে। এছাড়া, চৌপথি এলাকার হকারদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়ার ভাবনা চলছে। চৌপথিতে খাবারের স্টল ছিল প্রলয় দত্তের। তিনি ব্যবসা নিয়ে বেশ চিন্তায়। বললেন, ‘চৌপথি, সুপার মার্কেটে বাইরে থেকে অনেকেই আসতেন। লাভও হত। কিন্তু এখন চৌপথি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূর গলির রাস্তায় কি আদৌ খদ্দের পাব?’
দ্বিতীয় ‘জোন’ হল, থানা রোডের গলিপথের ধারে প্রায় ৫ ডেসিমাল জায়গা। সেখানে পার্ক রোডের আশপাশের হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যদিও সেখানে পুরসভা কোনও শেড কিংবা স্থায়ী দোকানপাট গড়ে দেবে না। ডালা অথবা ভ্যানগাড়ি নিয়ে এসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থেকে ব্যবসা করে পরে গুটিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবে প্রয়োজনে এবড়োখেবড়ো অবস্থা থাকলে ওই জায়গায় মাটি ফেলে সমান করে দেওয়া হবে হকারদের সুবিধার্থে। আলো ও জলের ব্যবস্থা করবে পুরসভাই। কিন্তু হকারদের চিন্তার কারণ সেখানকার হোটেল ও রেস্তোরঁাগুলি। তঁাদের প্রশ্ন, কেউ কি আর হোটেল ছেড়ে গলিতে আসবেন খেতে?
পার্ক রোডে ফাস্ট ফুডের ব্যবসা ছিল গ্র্যাজুয়েট তরুণ প্রহ্লাদ পণ্ডিতের। শিক্ষিত ওই তরুণ একসময় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। ভালো রোজগার না হওয়ায় বাবার ব্যবসা শুরু করেন নতুন করে। ওই ব্যবসাতেই চলত পণ্ডিত পরিবার। এই উচ্ছেদ ঝঞ্ঝাটে চারদিন টানা রোজগার বন্ধ। হতাশার সুরে বললেন, ‘পার্কে আসা-যাওয়ার পথে অনেকেই খাওয়াদাওয়া করতেন। রোজগার হত ভালোই। থানা রোডে কি সেই ব্যবসা হবে? ওখানে শুধুই কি খাবারের টানে মানুষজন ভিড় করবেন? আমাদের মনে হয় না।’
বিমল রায়ও থানা রোডে ব্যবসা নিয়ে সন্দীহান। কিন্তু প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে থানা রোডে ‘শিফট’ করবেন তিনি। পার্ক রোডের ফুচকা বিক্রেতা বিপুল পণ্ডিত প্রশ্ন তোলেন, ‘খদ্দের না এলে দোকান বসিয়ে কী লাভ? শুধুমাত্র খাবারের জন্য কেউ পার্ক রোড থেকে থানা মোড়ে আসবেন?’
এদিকে, আরেকটি জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শহরের ফ্লাইওভারের নীচের অংশ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেভাবে সবজি, ফল বাজার বসে সেখানে, ফাঁকা জায়গা নামমাত্র। মেরেকেটে সেখানে ২০ জন হকারকে বসানো যেতে পারে। তাও একেবারে চলাফেরার জায়গা থাকবে না বললেই চলে। পথচারীদের নীচ দিয়ে যেতে সমস্যা হতে পারে। তখন কি ফের সরানো হবে হকারদের? এখন এই প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। পুরসভার অবশ্য আশ্বাস, হকার জোন হিসাবে আরও কয়েকটি জায়গা খেঁাজা হচ্ছে।