আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার শহরের প্যারেড গ্রাউন্ড চেনেন না এমন লোক কি আছে? কিংবা অসম গেটের উপর রেলের ওভার ব্রিজ? পথ চলতে এগুলো তো সবার চোখেই পরে। তবে বৃষ্টির রাতে প্রেমিক যুগলের ছাতা নিয়ে ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটা কেমন হবে? কিংবা কোনও পূর্ণিমার রাতে প্যারেড গ্রাউন্ডের কোনও এক কোনার রূপটাই বা কেমন হয়? স্বচক্ষে এই অভিজ্ঞতা না পাওয়া গেলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই, এই রকম বিভিন্ন কল্পনা আর্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে আলিপুরদুয়ারের কিছু চিত্র শিল্পী। ডিজিটাল আর্টের সেই কল্পনাগুলো বাস্তবের মত ফুটে উঠছে। আর এভাবেই শহরের কিছু চেনা জায়গা অন্য আঙ্গিকে দেখার স্বাদ মিলছে আলিপুরদুয়ারবাসীর।
তবে শুধু শহর নয় জেলার বিভিন্ন জায়গাই যে ওই শিল্পীদের ডিজিটাল আর্টে ফুটে উঠছে সেটা আর বলার বাকি থাকে না। সেটা দমনপুর চার্চ হোক কিংবা রাজাভাতখাওয়ার কোনও মোমোর দোকান। আলিপুরদুয়ারের মুষ্টিমেয় শিল্পী নিঃশব্দে তাদের কাজ করছে। কিছু মুখ বেশ পরিচিতি পেয়েছে অসম্ভব কিছু কাজের দরুন, কিছু মুখ আবার ভালো কাজ করে ডিজিটাল আর্টে জুড়তে চাইছেন অনেকে। এই ডিজিটাল আর্ট শিল্পীদের মধ্যে অরিন্দম বাসু নাম একটা। আলিপুরদুয়ারবাসীর কাছে অবশ্য এই নামটার থেকে স্কেচম্যান নামটাই বেশি পরিচিত। এই নামেই শহরের কোর্ট কমপ্লেক্সের বাসিন্দা অরিন্দম বিভিন্ন ডিজিটাল আর্টের কাজ করে চলছে। সেই কাজের সুনাম কিন্তু জেলার পরিধি ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা ছড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কেচম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেকেই তাঁর আঁকা ছবি কিনেছেন। গত কালীপুজোয় জংশনের একটি ক্লাবের মণ্ডপে আবার ওঁর ডিজিটাল আর্ট গুলোর প্রদর্শনীও হয়।
রং তুলি উঠেছিল ছোট বেলায়, তবে ট্যাব আর আই পেন দিয়ে ছবি তৈরির হাতে খড়ি বছর তিনেক আগেই হয়েছে পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক অরিন্দমের। সম্প্রতি মাঝেরডাবড়ি চা বাগানের মুন লাইটে চা পাতা তোলার একটি ডিজিটাল আর্ট অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। ডিজিটাল আর্ট বিষয়টি কারও কাছে নয়, বরং ইন্টারনেট ঘেটেই শিখেছেন বলে জানালেন তিনি। অরিন্দমের কথায়, ‘বাড়িতে ছোট মেয়ে থাকায় রং তুলির বদলে মোবাইলে ছবি আঁকা শুরু করি। মোবাইলের ছবি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেই থেকেই শুরু। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে লাইভ ছবি করি, কখনও সেটা তুলে এনে বাড়িতেই আঁকি। একটা ছবি তৈরি করতে ৩ দিন লেগে যায়।’
আলিপুরদুয়ারে কয়েক বছর আগেও এই ডিজিটাল আর্টের বিষয়টি না শোনা গেলেও বিগত দু’বছরে যুবক যুবতীদের মধ্যে এই নিয়ে কৌতুহল বেড়েছে। শহরে অনেক পরিচয় চিত্র শিল্পী থাকলেও ডিজিটাল আর্টের শিল্পীর অভাব। সেটা পূরণ করতে বেশ কিছু জন পরিশ্রম করছে। আর ডিজিটাল আর্ট বিষয়টি কাগজে ছবি আঁকার মত হলেও একটা আলাদা সুবিধা আছে। এই নিয়ে তমাল বসাক নামে সূর্যনগরের এক যুবকের কথায়, ‘অ্যাপে ছবি তৈরি করলে রং নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আলাদা কোনও খরচও নেই। আর ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল আর্টের কদর রয়েছে। এক দিকে মোবাইলে বিভিন্ন বিষয়ে আসক্তির বদলে যেমন ছবি তৈরির মত একটা ভালো অভ্যাস হতে পারে, তেমনই সাবলম্বীও হওয়া সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং, ডিজিটাল আর্ট কিংবা বিভিন্ন গেমের স্টোরি বোর্ড ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল আর্টের শিল্পীরা নিজেদের কেরিয়ার গড়তে পারে। উনিও এই ডিজিটাল আর্ট শেখার ক্ষেত্রে অনেকে গাইড করছেন। আলিপুরদুয়ার শিল্পীদের শহর। সে জায়গায় নতুন যুগের নতুন শিল্পীরা কতটা ছাপ ছাড়তে পাড়ে এই শিল্পীদের মানচিত্রে, ভবিষ্যতে যেন সেদিকেই তাকিয়ে।’