পিকাই দেবনাথ, কামাখ্যাগুড়ি: দারিদ্র্য কখনও সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে না। আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) কামাখ্যাগুড়ি হাইস্কুলের (Kamakhyaguri High School) দশম শ্রেণির ছাত্র রোহিত সরকার সেটাই প্রমাণ করল। চলতি মাসে জম্মু-কাশ্মীরে ৬৮তম ন্যাশনাল স্কুল গেমস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উশু চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১৭, ৮৫ কেজি বিভাগে সারা দেশে তৃতীয় স্থান অর্জন করে রোহিত ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। রোহিতের কথায়, ‘খেলাধুেলার পরিকাঠামো উন্নয়ন হোক। ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল ও ভলিবল খেলার প্রতি যতটা নজর রয়েছে, উশু খেলার প্রতি সেভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় না। কামাখ্যাগুড়িতে ক্রীড়া পরিকাঠামোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। উশুর জন্য খেলার মাঠ থাকলে সুবিধা হত। সরকারি সুযোগসুবিধা পেলে আগামীদিনে খেলা চালিয়ে যেতে পারব।’
ছয় মাস আগে রোহিতের বাবা সঞ্জিত সরকার প্রয়াত হন। তাঁর বাবার একটি ছোট প্রসাধনীর দোকান ছিল। তা দিয়ে কোনওমতে তাদের সংসার চলত। রোহিতের বাবা ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তাদের সংসারে অভাব দেখা দেয়। রোহিত ছোটবেলা থেকে খেলাধুেলা, পড়াশোনা ও ছবি আঁকায় পারদর্শী। তার মা পার্বতী রায় সরকার রোহিতের বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। পার্বতীর কথায়, ‘ওর বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে খেলায় সাফল্য পাবে। সেটা বাস্তবায়িত হল। আগামীতে সরকারি সাহায্য পেলে ভালো হয়। তাহলে ও খেলা চালিয়ে যেতে পারবে।’ রোহিতের যখন নয় বছর বয়স তখন থেকে সে উশু প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। তার বাবা মারা যাওয়ার পর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বাধাও আসে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে এবার জাতীয় স্তরে রোহিত ব্রোঞ্জ পদক জয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ন্যাশনাল স্কুল গেমসের জন্য সে মাত্র দু’মাস অনুশীলন করেছে। রোহিতের সঙ্গে তার দুজন কোচ উৎপল রায় ও অনুপ রায় দু’মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। দুই প্রশিক্ষক জানান, রোহিত অসম্ভব পরিশ্রমী। ওর অধ্যবসায় ওকে এই সাফল্যে পৌঁছে দিয়েছে। ভবিষ্যতে ও আরও অনেক পদক জিতবে বলে তাঁরা আশাবাদী।