আলিপুরদুয়ার: রামায়ণের শ্রবণকুমারকে মনে আছে? নিজের অন্ধ বাবা-মাকে যিনি নিজের কাঁধে করে তীর্থস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন। বাবা-মা’র প্রতি এধরনের ভালোবাসা আজকের দিনে কার্যত বিরল। যদিও আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের উত্তর পানিয়ালগুড়ির ১১/২৫৪ বুথের বাসিন্দা পরিমল কর্মকার এই শ্রবণকুমারকেই কার্যত মনে করাচ্ছেন। নিজে ৮৫ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম হয়েও ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য জোগাড় করতে হামাগুড়ি দিয়ে দোরে দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এইজন্য প্রশাসনিক দপ্তরে যেমন গিয়েছেন, তেমনি নিজে তৃণমূলের বুথ কমিটির সদস্য হওয়ায় গিয়েছেন জেলা পার্টি অফিসেও। যদিও দলের কোনও নেতৃত্বই তাঁর এবং মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ।
পরিমলের কথায়, মায়ের চিকিৎসার জন্য আমি এই অবস্থাতেই আজ জেলা পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। ব্লক প্রশাসনকেও আমি বিষয়টি জানিয়েছি। জানি না মায়ের চিকিৎসা করাতে পারব কি না। ’ছোটবেলাতেই পোলিও আক্রান্ত হয়ে বাঁ হাত এবং দুই পা অকেজো হয়ে পড়ে পরিমলের। সেই থেকে কখনও হামাগুড়ি দিয়ে, কখনও আবার ট্রাইসাইকেলে চলাচল করতে হয় তাঁকে। বাবা আগে দিনমজুরের কাজ করতেন। বর্তমানে বয়সের ভারে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাড়িতেই থাকেন। ফলে সংসার চালাতে বাবা-মায়ের দেখভালের পাশাপাশি স্থানীয় বাচ্চাদের টিউশন পড়ান পরিমল। ইতিমধ্যেই পরিমল মায়ের
চিকিৎসায় সাহায্যের আর্জি জানিয়ে আলিপুরদুয়ার-২ ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। এছাড়াও আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের অঞ্চল সভাপতির কাছেও আবেদন জানিয়েছেন। যদিও এখনও অবধি কোথাও থেকে কোনও সাহায্য না পেয়ে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সহযোগিতায় মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য একাধিকবার গুয়াহাটি, কলকাতা, বেঙ্গালুরুতে গিয়েছেন।
বিষয়টিতে আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের বিডিও নিমা শেরিং শেরপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই তরুণের আবেদন আমাদের কাছে এসেছে। আমরা সেটা আলিপুরদুয়ার জেলা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সেকশনে পাঠিয়েছি।’ এছাড়া মঙ্গলবার ব্লকের মিটিং রয়েছে। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকেও সাহায্য করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে তিনি পরিমলের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং এবিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।