সমীর দাস ও প্রণব সূত্রধর, হাসিমারা ও আলিপুরদুয়ার: অপারেশন সিঁদুরের পর গোটা দেশেই যুদ্ধের দামামা বাজছে। দেশজুড়ে টানটান উত্তেজনা। তারই মধ্যে হাসিমারায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে উঁকিঝুঁকি মারতে গিয়ে সেনার হাতে ধরা পড়ল এক তরুণ। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ধৃতের নাম সুজিত ঘোষ। তার বাড়ি আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন ঘাগড়া এলাকায়। ঘাগড়া থেকে এতদূরে এসে সে কেন এই কাজ করতে গেল, তা নিয়ে রহস্য ছড়িয়েছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতীয় সেনা পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জিঙ্গ ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিয়েছে আকাশপথে অতর্কিতে হামলায়। হাসিমারার এই ঘাঁটিতে রয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান। আকাশপথে যুদ্ধে এই রাফালই কিন্তু ভারতের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে ওই তরুণের সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটির সীমানা প্রাচীরের পাশে একটি গাছে উঠে সে ঘাঁটির ভেতরে উঁকি দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি ঘাঁটির দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের নজরে আসে। বায়ুসেনার তরফে ওই তরুণকে গাছ থেকে নামিয়ে আনা হয়। বুধবার বিকেলে ধৃতকে হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশ তাকে জয়গাঁ থানায় পাঠিয়ে দেয়। জয়গাঁ থানার তরফে বৃহস্পতিবার তরুণকে আলিপুরদুয়ার মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে। অভিযুক্তকে ৭ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজিত দীর্ঘদিন ধরে নেশাসক্ত। সে নিছক নেশার ঘোরে গাছে উঠেছিল, নাকি এর পেছনে আর কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে, তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার সেই তরুণের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, নিম্নবিত্ত পরিবার। তরুণের বাবা পেশায় রাজমিিস্ত্র। তিনি বললেন, ‘ছেলে বহুদিন ধরে নেশায় আসক্ত। নবম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেনি।’
এর আগে তাকে নেশার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য আলিপুরদুয়ারের একটি হোমে কয়েক মাস রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পর সুপারির ব্যবসা শুরু করে। তিনদিন আগে সুজিত জানিয়েছিল, এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সে কালচিনির নিমতি এলাকায় একটি ধাবায় কাজ করতে যাচ্ছে। বাবা বলেন, ‘আমরা সেই ব্যক্তির নাম ঠিকানা জানতে চাইলেও ছেলে খুলে কিছু বলেনি। ছেলের কাছে কোনও মোবাইল ফোন নেই। বুধবার ওই ধাবা থেকে আমাকে জানায় সুজিত কিছু টাকা অগ্রিম নিয়ে ধাবা ছেড়ে চলে গিয়েছে।’
পুলিশও জানিয়েছে, ধৃতের কাছে কোনও মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। সুজিত যে ব্যক্তির সঙ্গে নিমতি এসেছিল, তার সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশের কাছে নেই। জয়গাঁর এসডিপিও প্রশান্ত দেবনাথ জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে পুলিশি হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটি চত্বর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। বাইরে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বায়ুসেনা ঘাঁটি সংলগ্ন ৩১সি জাতীয় সড়কের গুরদোয়ারা এলাকায় মেটাল ডিটেক্টর আনা হয়েছে। সেখানে জোরদার নাকা চেকিং শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে যান আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী। ওই এলাকায় প্রতিটি গাড়িতে তল্লাশি করছে পুলিশ।