নকশালবাড়িঃ দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর নকশালবাড়িতে মিলল দূরপাল্লার ট্রেনের স্টপেজ। শুক্রবার থেকেই নকশালবাড়ি স্টেশনে দাঁড়ায় আলিপুরদুয়ার শিয়ালদা কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। দীর্ঘ বহুবছর পর নেপাল সীমান্তবর্তী প্রান্তিক শহর নকশালবাড়িতে নতুন করে দূরপাল্লার ট্রেনের স্টপেজ মেলায় খুশি সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘ চার দশক পর ফের নতুন করে দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়াতে শুরু করল নকশালবাড়ি স্টেশনে। করোনাকালের পর থেকেই কাঞ্চনকন্যার রুট বদল করে নকশালবাড়ি দিয়ে চলাচল শুরু হয়। তারপর থেকেই নকশালবাড়ি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন দাবি করেন নকশালবাড়িতে কাঞ্চনকন্যার স্টপেজের। এতদিন নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, বাতাসি সহ বিস্তির্ণ এলাকার বাসিন্দাদের কলকাতা যেতে হলে শিলিগুড়ি জংশন বা নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে আসতে হত। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে নকশালবাড়ির ব্যবসায়ী মহল থেকে বার বার সাংসদকে জানান হয়েছিল কাঞ্চনকন্যার স্টপেজের। স্থানীয়দের দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিষ্ট। গত ২৩ মে ভারতীয় রেল মন্ত্রক থেকে নকশালবাড়ি স্টেশনে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের স্টপেজের নির্দেশিকা জারি করা হয়। অবশেষে স্টপেজ পেয়ে উচ্ছ্বসিত নকশালবাড়িবাসী। তবে এই স্টপেজের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ট্রেনের টিকিট বিক্রির উপর। প্রায় এক মাস ট্রায়াল চলবে। জানা গিয়েছে, শনিবার শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যায় নকশালবাড়ি এসেছেন ১২ জন যাত্রী। আজ সকালেই ২০ জন যাত্রী কলকাতা যাওয়ার টিকিট করেছেন অসংরক্ষিত কামরায়। সংরক্ষিত কামরায় আজকের তারিখে টিকিট রয়েছে ১২ জনের।
নকশালবাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিখিল ঘোষ বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর আগে নকশালবাড়ি স্টেশনে অসমমেল এবং গুয়াহাটি-লখনউ এক্সপ্রেসের স্টপেজ ছিল। সেই সময় মিটার গেজে ট্রেন চলাচল করত। কিন্তু সেভাবে টিকিট বিক্রি না হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ব্রডগেজ হওয়ার পর এই রুটে দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল করলেও এতদিন কিন্তু কোন ট্রেনের স্টপেজ ছিল না। ব্রডগেজ হওয়ার পর প্রথমবার নলশালবাড়িতে দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়াবে। এইজন্য আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সাংসদকে একটি সম্বর্ধনা জানাব।
খড়িবাড়ি পানিট্যাঙ্কি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী বলেন, ভারত নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায় দূরপাল্লার ট্রেনের স্টপেজের দাবি আগে থেকেই ছিল। পড়াশোনা, চিকিৎসা, ব্যবসার তাগিদে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি নেপাল থেকেও বহ যাত্রীকে কলকাতা যাওয়ার ট্রেন ধরতে এনজেপি ছুটতে হয়। নকশালবাড়িতে স্টপেজ হওয়ায় ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রচুর অগ্রগতি হবে। নকশালবাড়ির এক কাপড় ব্যবসায়ী মহ: গুলু বলেন, কাপড় ব্যবসাটাই পুরোপুরি কলকাতার উপর নির্ভর করে। এই কাপড় আনতে ব্যবসায়ীদের কলকাতা ছুটতে হয়। বাড়ির কাছে ট্রেন পেলে আরও সুবিধা হবে শিলিগুড়ি দৌড়াতে হবে না।
শুক্রবার রাতে শিয়ালদা গামী কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়ায় নকশালবাড়িতে। আজ সকালে শিয়ালদা থেকে সময়মতো নকশালবাড়িতে পৌঁছায় আলিপুরদুয়ারগামী কাঞ্চনকন্যা। এদিন সকালে স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিং-এর সাংসদ রাজু বিস্ট, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন। সবুজ পতাকা নাড়িয়ে স্টপেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তাঁরা।
এদিন সাংসদ রাজু বিস্ট বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মহল তাঁর কাছে দাবি করেছিলেন নকশালবাড়িতে স্টপেজের। সেই দাবি আদায় করেছি রেলমন্ত্রীর কাছে দরবার করে। নকশালবাড়ি স্টেশনের একটা গরিমা রয়েছে। সেই সব কথা মাথায় রেখেই কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের স্টপেজ পেল নকশালবাড়ি। আগামীতে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করবে কেন্দ্রীয় সরকার।