নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: তদন্তকারী আধিকারিকরা আগেই দাবি করেছিলেন, আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) মাদারিহাটের (Madarihat) সেই মৃত তরুণ রবি ওরাওঁয়ের স্মার্টফোনটি পেলে রহস্যের জট অনেকটাই কাটবে। অবশেষে মিলল রবির সেই ফোন। শনিবার বিকেলে মাদারিহাট রেঞ্জ অফিসের সেই কোয়ার্টারের পাশেই থাকা একটি পরিত্যক্ত কুয়োর ভেতর থেকে স্মার্টফোনটি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার মাদারিহাটে বন দপ্তরের কোয়ার্টারে মিলেছিল ৩টি দেহ। একটি তরুণ রবি ওরাওঁয়ের। একটি তার ভাইপো বিবেক ওরাওঁয়ের। আরেকটি রবির সৎমা বিবি লোহার ওরাওঁয়ের। সেই ঘটনার পর থেকেই তো খুনের অস্ত্র আর রবির স্মার্টফোন হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। গত শুক্রবার সেই কোয়ার্টারের রান্নাঘর থেকে মিলেছিল একটি সবজি কাটার ছুরি। পুলিশের অনুমান, সেই ছুরি দিয়েই ভাইপোকে খুন করেছিল রবি। আর শনিবার মিলল স্মার্টফোন। এবার পুলিশের দাবি, আস্তে আস্তে তদন্তের জাল গুটিয়ে আনছে তারা। মাদারিহাট থানার এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, তারা নিশ্চিত যে ওই দুটি খুন রবি নিজেই করেছে এবং খুন করার পর আত্মঘাতী হয়েছে।
শনিবার বিকালে কুয়োর ভেতর নামেন বীরপাড়া দমকলকেন্দ্রের কর্মী ও মাদারিহাট থানার অভিজ্ঞ সিভিক ভলান্টিয়ার। কুয়োতে সামান্য জল ছিল। সেখান থেকেই স্মার্টফোনটি উদ্ধার করা হয়। তবে সেটির কিছু অংশ ভাঙা ছিল। পুলিশ নিশ্চিত স্মার্টফোনটি রবির। অপরদিকে যে দুটি জিনিসের খোঁজ এতদিন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিল না, সেই ধারালো অস্ত্র এবং স্মার্টফোন দুটোই পাওয়ার পর পুলিশ রেঞ্জ অফিসের ওই কোয়ার্টারটির সিল খুলে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জলপাইগুড়ি থেকে ফরেন্সিক দলের তিনজন সদস্য তল্লাশি শুরু করেন। সঙ্গে রাখা হয়েছিল বন দপ্তরের দুটি কুকুর সায়না ও ট্রফিকে। এই দুই কুকুর ওই কুয়োর চারদিকে ঘুরপাক খেয়েছিল। এরপরেই শনিবার ওই কুয়োর ভেতর খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তার ফলও মেলে হাতেনাতে।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী জানিয়েছেন, রবি প্রথমে তার মা বিবি লোহার ওরাওঁকে শ্বাসরোধ করে মেরেছিল। ওই দৃশ্য হয়তো দেখে ফেলেছিল রবির দাদা বিনোদ ওরাওঁয়ের বড় ছেলে বিবেক। এরপর রবি ছুরি দিয়ে বিবেককেও মেরে ফেলে। এরপর রবি ওই ছুরিটি জল দিয়ে ধুয়ে গ্যাসের টেবিলের ওপর রেখে দেয়। আর নিজে হয়তো পালানোর ছক কষেছিল। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে না পালিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার আগে স্মার্টফোনটি ওই কুয়োর ভেতর ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে বলা যায়। আর এই খুনের ঘটনার মূল আসামি যে রবি নিজেই ছিল, তা আমরা নিশ্চিত। তবে ফরেন্সিক রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এখনও পাইনি। সেসব পেলে এব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা যাবে।’
তবে রবি এতসব ঘটনা ঘরের ভেতর ঘটনালেও ঘুণাক্ষরেও টের পাননি পাশের ঘরেই থাকা রবির দাদা বিনোদ ও বৌদি পুষ্পা ওরাওঁ। তাহলে কি সত্যিই রবি জলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাঁদের খাইয়ে দিয়েছিল? তার কি পরিকল্পনা ছিল পুরো পরিবারকেই শেষ করে দেওয়ার? এইসব প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যাচ্ছে। তবে রবির সঙ্গে ওর দাদা এবং সৎমায়ের সঙ্গে যে টাকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রাগারাগি চলছিল এটা তদন্তে পুলিশ জেনেছে। ওদের খুনের পেছনে এই কারণটাই প্রধান বলে পুলিশের সন্দেহ।