মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার তোর্ষা, বাসরা, জয়ন্তী, রায়ডাক সহ ভুটান (Bhutan) পাহাড় থেকে নেমে আসা ১৪টি নদী (River) এবং ঝোরার উপর সমীক্ষা করছে সেচ দপ্তর। পাহাড়ি নদী, ঝোরাগুলি নাব্যতা হারানোয় সেগুলি ঘনঘন গতিপথ বদল করছে। এতে বসতি এলাকা, বনাঞ্চল, কৃষিজমি, চা বাগানগুলির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
সেচ দপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকার অমরেশকুমার সিং বলেন, ‘সেচ দপ্তরের নির্দেশে দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা জেলার ১৪টি নদী এবং ঝোরাকে চিহ্নিত করেছেন। ওই নদী, ঝোরাগুলিতে কত বালি-পাথর, পলি জমে রয়েছে তা মূল্যায়ন করে রাজ্যের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠানো হবে।’ তিনি জানান, পরবর্তীতে সেই মূল্যায়নের ভিত্তিতে ডিপিআর তৈরি করে সেচ দপ্তর অর্থ বরাদ্দ করবে।
ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলি বর্ষাকালে অনেক জায়গায় বাসিন্দাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। সেরকমই একটি নদী জয়ন্তী। নদীটির বেড উঁচু হওয়ায় জয়ন্তী গ্রামের অস্তিত্ব সংকটের মুখে। বনাঞ্চলে নদীর জলের তোড়ে অনেক গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জয়ন্তী গ্রামের পাশে একসময় নদী গ্রাম থেকে প্রায় ৩০ ফুট গভীর খাত দিয়ে বয়ে যেত। সেই নদীখাত এখন বালি-পাথর জমে গভীরতা হারিয়েছে। শীতকালে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় জয়ন্তী নদীতে পাথর-বালি ছাড়া জল খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে বক্সার বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের পানীয় জলের জন্য দূরদূরান্তে যেতে হয়। জয়ন্তীর বাসিন্দা কমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জয়ন্তী নদীর ড্রেজিং করলে বন্যপ্রাণীদের জলের সমস্যা মিটবে। অন্যদিকে, বনাঞ্চলে ভাঙন হবে না।’
একই সমস্যা বাসরা নদীরও। বেড উঁচু হওয়ায় বর্ষাকালে খরস্রোতা ওই নদী সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে। তোর্ষার কারণে ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট মেচিয়াবস্তি এবং বড় মেচিয়াবস্তি গ্রামগুলিতে ২০২১ সাল থেকে ভাঙন চলছে। ইতিমধ্যে সেখানকার ৪০টি বাড়ি সহ বিঘার পর বিঘা চাষের জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। তোর্ষার দলসিংপাড়া রণবাহাদুর বস্তিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা রায়ডাক নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বর্ষাকালে জল উপচে কুমারগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশনের দাবিতে সরব হয়েছেন। জেলায় নদীভাঙন এবং নদীর নাব্যতা হারানোর ব্যাপারে সম্প্রতি অগ্নিনির্বাপণ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বিষয়ক বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। বর্ষার পর নদী এবং ঝোরাগুলিতে ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবায়িত হয়, সেটাই দেখার।