ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার: এখন তিনি কোনও জনপ্রতিনিধি নন। সরকারি কোনও বড় পদেও আর নেই। তা সত্ত্বেও নীলবাতি লাগানো গাড়িতে চেপে বিতর্কে জড়ালেন আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) তৃণমূল (TMC) নেতা সৌরভ চক্রবর্তী।
মঙ্গলবার ফালাকাটার (Falakata) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক। তখনই তিনি একটি নীলবাতি লাগানো গাড়ি থেকে নামেন। কেবল এদিনই নয়, অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় নীলবাতি লাগানো গাড়িতে চেপেই তাঁকে নাকি যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কোন পদাধিকার বলে নীলবাতির গাড়িতে চাপছেন সৌরভ? প্রশ্ন উঠেছে। সরব হয়েছেন বিরোধীরাও।
এব্যাপারে সৌরভের কাছেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, ‘ওটা আমার গাড়ি ছিল না। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য একটি পুলকারে উঠেছিলাম। সেখানে কোনও বাতি লাগানো ছিল কি না, সেটা দেখা হয়নি। তবে আমার মনে হয়েছে গাড়িটি এনবিডিডি বা জেলা পরিষদের ছিল।’
এই অজুহাত কিন্তু খুব একটা ধোপে টিকছে না। সৌরভ যতই অন্যের গাড়ি বলে চালাতে চান না কেন, সরকারি তথ্য অন্য কথা বলছে। এদিন তিনি যে গাড়িতে করে যাতায়াত করেছেন, তার নম্বর থেকে স্পষ্ট যে গাড়িটি জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। খোদ ট্রাফিক পুলিশের থেকেই এই তথ্য মিলেছে। এই ব্যাংকেরই চেয়ারম্যান হলেন সৌরভ।
রাজ্য সরকারের গাইডলাইন কী বলছে? ২০২১ সালের ২৩ জুলাই রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি নোটিফিকেশন জারি করা হয়। সেখানে কারা গাড়িতে লাল, নীল সহ কোন ধরনের বাতি লাগাতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। ফ্ল্যাশারহীন নীলবাতির গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সহ অন্য সচিবরা, কমার্সিয়াল ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইবিউনালের চেয়ারম্যান, ভূমি সংস্কার ট্রাইবিউনালের চেয়ারম্যান, রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা, পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ও অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল সহ জেলায় জেলা শাসক ও এসপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা, ভিজিলেন্স কমিশনার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ আরও বেশ কয়েকজন সরকারি পদাধিকারী। সৌরভ তো এর মধ্যে কোনওটাই নন।
এদিন তাঁর নীলবাতির গাড়ি কারও চোখ এড়ায়নি। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি জয়ন্ত রায় জেলা পুলিশের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘আলিপুরদুয়ারের জনগণ ২০২১ সালেই সৌরভ চক্রবর্তীকে ছেঁটে ফেলে দিয়েছে। তার পরেও ক্ষমতার লোভ ছাড়তে পারেননি প্রাক্তন বিধায়ক। তাই নিজের ক্ষমতা দেখাতে বেআইনিভাবে গাড়িতে নীলবাতি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
প্রাক্তন বিধায়কের এমন নীলবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে অবশ্য তেমন কিছু বলতে চাননি আলিপুরদুয়ারের বর্তমান বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। তাঁর কথায়, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। তাই আমি কিছু বলব না।’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইককে অবশ্য এদিন ফোনে পাওয়া যায়নি।