গ্রাফিক্স: শুভঙ্কর চৌধুরী
বাংলায় অরণ্যদেব কমিকস পড়ার সময় শৈশবে কিছু অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদের কথা পড়া যেত। ইদানীংকালের বাংলার রাজনীতি তো কমিকস হওয়ার মতোই ব্যাপার, সেখানে কোনও প্রবাদের কথা বলা হলে এরকম লাইন লেখা যেতে পারে।
তুমি যদি অনেক বড় এলাকায় সম্রাট হয়ে থাকতে চাও তো সেভাবে কাজ করো, নইলে শেষপর্যন্ত তোমায় পাড়ার দাদা হয়েই থাকতে হবে।
উদাহরণ এক, অধীর চৌধুরী। লোকসভার বিরোধী নেতার মতো পদ পেয়েও মুর্শিদাবাদের বাইরে কংগ্রেস পার্টিটাকে ছড়াতে ব্যর্থ। রাজ্য কংগ্রেসকে শেষ করার অন্যতম চরিত্র হিসেবে ইতিহাস মনে রাখবে তাঁকে। অধীর মানে ঘুরে ফিরে সেই মুর্শিদাবাদ। বাকি জেলার কী হাল, কোনও নজর নেই। উদাহরণ দুই, শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভায় বিরোধী নেতা হওয়ার সুবাদে কলকাতায় কিছু অনুষ্ঠান করেন প্রচারের জন্য। আসল নজর সেই কাঁথি এবং পূর্ব মেদিনীপুর।
অধীর-শুভেন্দু তবু একটা জায়গায় এগিয়ে। কলকাতা ভিত্তিক প্রচার চালান বলে গোটা বাংলায় তাঁদের নামটা অন্তত পরিচিত। আমাদের উত্তরবঙ্গের দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বারলার আরও ক্ষুদ্র বৃত্তে বাস। দুজনেই দলবদলিয়া। দুজনেই কলকাতার মানচিত্র জানেন বলে মনে হয় না। বিজেপির রাজ্যভিত্তিক কোনও কাজকর্মে এঁদের দেখা যায় না। অমিত শা বা জেপি নাড্ডা বরং এঁদের থেকে কলকাতায় বেশি যান। কলকাতায় গেলেই যে বড় নেতা হওয়া যাবে, এমন নয়। প্রশ্ন হল, এঁরা দুজনে বাংলায় এলে ভেটাগুড়ি বা বানারহাটের বাইরে পা রাখেন না কেন? এঁরা কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী না পাড়ার মন্ত্রী? গোটা বাংলা ঘুরে কাজ করবেন না কেন?
এঁরা মুখে বলবেন, উত্তরবঙ্গ অবহেলিত, আর কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়ে বাংলার অন্য জেলাগুলোকে অবহেলা করে যাবেন, এ তো বড়রকম দ্বিচারিতা। বাংলার বিজেপির কর্মসূচি নিয়ে নিশীথ বা বারলারও যেমন মাথাব্যথা নেই, সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপদেরও মাথাব্যথা নেই এই দুজনকে আরও বেশি করে বঙ্গ রাজনীতিতে জড়িয়ে নেওয়ার। বিজেপির খ্রিস্টান মন্ত্রী হিসেবে অনেক সুবিধা পান বারলা। কথায় কথায় ঘুরে বেড়ান কেরল, গোয়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চল। বাংলার মালদা, নদিয়া, মেদিনীপুরের খ্রিস্টানদের সুখদুঃখের বারোমাস্যা জানার সময় হয় না তাঁর। মাঝে মাঝে রাজধানী থেকে আসেন, আলিপুরদুয়ার-চাঁদমণি বাগান হয়ে ঘুরে নয়াদিল্লি চলে যান।
সংস্কৃতি, বিনোদনে বাংলা শুধু কেন কলকাতা কেন্দ্রিক হবে, এই ন্যায্য প্রশ্ন প্রায়ই তোলেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। রাজনীতিক ও সাহিত্যিকদেরও দেখি। তবু কলকাতায় কোনও সাহিত্য উৎসবে ডাক পেলে ফেসবুকে বাড়তি উল্লাস দেখান অধিকাংশ কবি। নেতা চেষ্টা করেন কলকাতার টিভি চ্যানেলের সান্ধ্য কলতলার ঝগড়ায় অংশ নিতে। এতে অস্বাভাবিকত্ব কিছু নেই। রাজ্যের রাজধানী তো আমাদের নিজেদেরই। কিন্তু মুখে কলকাতার দুর্নাম করব, আর বাস্তবে কলকাতার ডাকে অপরিসীম উল্লাস দেখাব, এমন দ্বিচারিতাও অসহ্য। আর কেউ যদি কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রী হন, তা হলে তাঁকে নিজের অঞ্চলের পাশে পুরো রাজ্যের কথা ভাবতেই হবে। শুধু পাড়ার দাদা হয়ে লাভ নেই।
নিশীথ যেমন ভেটাগুড়ি বা কোচবিহারের বৃত্তে আটকে থাকেন, রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহও তাই। দিনহাটা ও কোচবিহারের বাইরে বেরোতে ব্যর্থ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর রোল মডেল সম্ভবত টিটি প্লেয়ার মান্তু ঘোষ। মান্তু যেমন উত্তরবঙ্গ টিটি সংস্থা তৈরি করে শিলিগুড়ি বাদে উত্তরবঙ্গের কোনও জেলা নিয়ে এতটুকু ভাবলেনই না, কার্যত আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, মালদা, বালুরঘাট, রায়গঞ্জের টিটি মুছে দিলেন, উদয়নও তাই।
গৌড়, আদিনা যে পর্যটক টানতে পারছে না, এখানে যে বাড়তি নজর দরকার, এই ভাবনাটাই উদয়নের মধ্যে কাজ করেনি। যেমন করেনি উত্তরের আরেক মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের। উদয়ন ফেসবুক পোস্ট আর আক্রমণাত্মক বিবৃতি নিয়ে যত ভাবেন, উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক উন্নয়নে সেই ভাবনার দশ শতাংশও দেখা যায়নি। গৌড়বঙ্গ তাঁর অভিধানে নেই। পাহাড় বা ডুয়ার্সও কতটা রয়েছে, খুব সন্দেহ।
উদয়ন, নিশীথ, বারলার মতো দলবদলিয়া উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ মন্ত্রীও। গোলাম রব্বানি, বিপ্লব মিত্র, সত্যজিৎ বর্মন, তজমুল হোসেন ছিলেন অন্য পার্টিতে। আদর্শ নেই, উন্নয়নও নেই।
মমতার হাতে সব ভুবনের ভার দিয়ে এঁরা দাঁড়িয়ে আছেন ল্যাম্পপোস্ট হয়ে। নিশীথ-বারলারাও যেমন মোদির হাতে সব ছেড়ে দাঁড়িয়ে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে। সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক ঘুরে তৃণমূলে নাম লেখানো তজমুলের কথা অমৃতসমান। তাঁর এলাকায় উজ্জ্বল দাস নামে এক পরিচিত তৃণমূল নেতা হরিশ্চন্দ্রপুরের সবচেয়ে জনবহুল শহিদ মোড়ে প্রকাশ্যে খুন হন ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর।
সিঙ্গুর দিবস উদযাপন চলছিল থানা থেকে কয়েক ফুট দূরে। তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধেই ছিল খুনের অভিযোগ। তারা ফেরার হয়। হায়, এই মুহূর্তে সেই নেতারাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কলার তুলে। উজ্জ্বলের হতভাগ্য সন্তানরা এখনও হুমকি ও প্রলোভন জয় করে চাঁচল আদালতে যাচ্ছেন সুবিচারের আশায়। তাঁদের পাশে কেউ নেই আর। তজমুল এবং তাঁর সঙ্গী মন্ত্রীরা কেউ উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে তদ্বির করেননি। আট বছর ধরে জেলার নেতারাও কুম্ভকর্ণের নিদ্রায়। কাকে বাঁচাতে চান সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক-আরএসপি ফেরত তৃণমূল নেতারা?
মন্ত্রীদের দলচ্যুতির ইতিহাস খুঁজতে খুঁজতে টের পাই, উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ পরিচিত বিধায়ক-সাংসদ একই স্টাইলে ভাবের ঘরে চুরি করতে সিদ্ধহস্ত। দলবদল, আদর্শ বদলে ওস্তাদ। শিলিগুড়ির শংকর ঘোষ, শিখা চট্টোপাধ্যায়, মালদার মৌসম নুর, শ্রীরূপা দত্ত চৌধুরী, খগেন মুর্মু, আলিপুরদুয়ারের সুমন কাঞ্জিলাল, রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী, নাটাবাড়ির মিহির গোস্বামী, মেখলিগঞ্জের পরেশ অধিকারী, মালতীপুরের আবদুর রহিম বক্সি, রতুয়ার সমর মুখোপাধ্যায়,…। তালিকা অসীমে মিশে যাবে। সেজন্যই হয়তো শহরে শহরে প্রচুর দুর্নীতি হলেও বিরোধীরা স্পিকটি নট।
যে প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছে, যে প্রশ্নটা যথেষ্ট তিক্ত অথচ বাস্তব, সেটা না করেই পারছি না। অত্যন্ত সংকোচ ও যন্ত্রণার সঙ্গে বিনীতভাবে প্রশ্নটা। উত্তরবঙ্গের ভোটাররা কি আজকাল দলবদলিয়াদেরই প্রশ্রয় দেন বেশি? আদর্শ ব্যাপারটা তাঁদের কাছেও সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন তাহলে? যেসব নেতা আদর্শ ভুলে দল পালটায়, তার সঙ্গে কিন্তু আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত নেতার বিশেষ ফারাক নেই কোনও। এটাও বঙ্গ রাজনীতিতে অরণ্যের প্রবাদ হতে পারে এই মুহূর্তে।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ৮০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বিনয় বিশ্বাস!…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সিকিমে (Sikkim) আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধার অভিযানে এগিয়ে এসেছে বর্ডার রোড…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: পাটনার জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Patna Airport) বোমা হামলার হুমকি। ইমেলের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কাঞ্চনজঙ্ঘা বিপর্যয়ে (Train Accident) মালগাড়ির চালক ও সহকারি চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ…
গাজোল: অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছিল বলে অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের (Kanchanjungha Express) জেনারেল কামরায় উঠতে পারেননি।…
চোপড়া: বজ্রপাতে মৃত্যু হল এক যুবকের। মঙ্গলবার চোপড়া থানার আমবাড়ি-লোধাবাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায়…
This website uses cookies.