কোচবিহার : রাজ্যের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলি কি এখন দুর্নীতির আঁতুড়? কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনা সবার জানা। এবারে কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল ও হাসপাতালের দিকেও অনেকের কড়া নজর। এই হাসপাতালের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। প্রাক্তন এমএসভিপি রাজীব প্রসাদের অপসারণের পরই বিস্ফোরক নানা তথ্য উঠে আসছে। এই সম্পর্কিত অভিযোগ জানিয়ে কর্মীদের একাংশ অধ্যক্ষের কাছে লিখিত চিঠি জমা করেছেন। টাকার বিনিময়ে কর্মীদের কাজ দেওয়া হত বলে সেখানে উল্লেখ করা রয়েছে।
হাসপাতালেরই তিন কর্মী বাবুলকুমার দে, দেবতোষ তলাপাত্র ও সুশান্ত মোদক সেই অবৈধ আর্থিক লেনদেনে জড়িত বলে অভিযোগ। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই রাজীব প্রসাদ-ঘনিষ্ঠ। অভিযোগ, ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক নিরাপত্তারক্ষীকে কাজ দেওয়া হয়। এছাড়াও কারও কারও কাছে ৩০ হাজার, কারও কাছ থেকে আবার আরও বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। কর্মীরা ঘটনাগুলির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তদন্তের আশ্বাস দিয়ে এমজেএন মেডিকেল ও হাসপাতালের অধ্যক্ষের বক্তব্য, ‘অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে।’
এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। বারবার এই মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে যেভাবে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছে তাতে কর্তৃপক্ষের ওপর অনেকেই ভরসা হারিয়েছেন। সিটি স্ক্যান, রোগীদের খাবার, বেডশিট ধোওয়ার খরচ সহ নানা বিষয়ে আগেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। পরীক্ষার নম্বর বাড়ানো, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলানোর অভিযোগেও বহুবার উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এবার নতুন করে এখানে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
যে কর্মীরা এই সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষের কাছে চিঠি জমা করেছেন তাঁদের তরফে সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘রাজীব প্রসাদ-ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অন্য কর্মীদের হয়রানি করতেন। কারও কাছে ৮০ হাজার, কারও কাছে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ওই কর্মীদের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের কাছে এ বিষয়ে প্রমাণও রয়েছে। অধ্যক্ষকে সবকিছু জানানো হয়েছে।’ হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘২৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আমি সেই টাকা দিয়েওছিলাম। অবশ্য পরে সেটা আমাকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তদের অন্যতম হাসপাতালের কর্মী দেবতোষ তলাপাত্র বলেছেন, ‘প্রতিটি অভিযোগই মিথ্যে। টাকাপয়সা লেনদেনের কোনও অধিকার আমাদের নেই। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কেউ কেউ এসব অভিযোগ করছেন।’
এদিকে, মঙ্গলবারও হাসপাতালের এমএসভিপির ‘চার্জ হ্যান্ডওভার’ সম্পর্কিত জটিলতা কাটেনি। মঙ্গলবার এখবর লেখা পর্যন্ত রাজীব প্রসাদ নতুন এমএসভিপিকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেননি। তবে নতুন এমএসভিপি সৌরদীপ রায় এদিন তাঁর ব্যবহারের জন্য সরকারি গাড়ি পেয়েছেন।