অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: মাল পুরসভার (Mal Municipality) কর্মীদের একের পর এক কীর্তি সামনে আসছে। নতুন সংযোজন, পুরসভার এক স্থায়ী কর্মীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ। পুরসভার সংগৃহীত ট্যাক্সের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে সেটা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ চার বছর ধরে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সেই কর্মী। পুরসভার চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ‘এই কর্মীকে শোকজ করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে আর কারা যুক্ত আছেন, সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে।’
পুরসভার এই কর্মীর নাম সুব্রত বন্দো। মাল শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি কলোনিতে বাড়ি তাঁর। পুরসভার ক্যাশ সেকশনের পিওন পদে নিযুক্ত তিনি। সারাদিনে পুরসভার যা খাজনা আদায় হয়, সেটা ব্যাংকে গিয়ে জমা করার দায়িত্ব ছিল সুব্রতর ওপর। তবে সম্প্রতি, তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পুরসভার নিজস্ব তহবিলের যে টাকা ব্যাংকে জমা করার কথা, তার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন সুব্রত। টাকার পরিমাণ কয়েক লক্ষ। সম্প্রতি, পুরসভার পাসবুক আপডেট করলে সামান্য কিছু গরমিল ধরা পড়ে। সেই গরমিলের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই কাণ্ডটি সামনে আসে পুরসভার অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছে।
জানা গিয়েছে, রোজকার যে টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন সুব্রত, তার আসল রসিদ পুরসভায় জমা হত না। পুরসভা থেকে যে ডিপোজিট ফর্ম লিখে দেওয়া হত, সেটার কাউন্টার অংশে ব্যাংকের সিল কীভাবে লাগত সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। পুরসভার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলে এসএমএস আসত অ্যাকাউন্ট্যান্টের মোবাইলে। যদিও দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে অ্যাকাউন্ট্যান্টের মোবাইলে কোনও এসএমএস আসছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে পুরসভায় অভিযুক্ত সুব্রতকে ডেকে পাঠান চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের ঘরেই ফিন্যান্স অফিসার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট সহ কাউন্সিলারদের সামনেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সুব্রতকে। সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় সমস্ত ঘটনা স্বীকার করেছেন সুব্রত। তারপরেই তাঁকে শোকজ নোটিশ ধরানো হয়। সূত্রের খবর, আত্মসাৎ করা টাকা ধাপে ধাপে পুরসভায় জমা করার চেষ্টা করছেন সুব্রত। মঙ্গলবার বিকেলেই পুরসভায় একটি চেক জমা করেছেন তিনি। এছাড়া নিজের বসতবাড়ির একটি অংশ বিক্রি করেও টাকা মেটাতে চেষ্টা করছেন। তবে সুব্রত কি একা এত টাকা আত্মসাৎ করেছে, নাকি এর পেছনে পুরসভার অন্য কোনও কর্মী যুক্ত আছেন, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে পুরসভার কর্মী মহলে। পুরসভার তরফে এখনও পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। যদিও, এই অভিযোগ নিয়ে সুব্রত বলেন, ‘যা বলার চেয়ারম্যানকে বলেছি, আর কিছু বলব না।’ প্রসঙ্গত, সুব্রত দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সমিতির সক্রিয় সদস্য।
এ বিষয়ে সিপিএমের মাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘যে-ই জনগণের টাকা আত্মসাৎ করুক, তাকে সেটা ফেরত দিতে হবে এবং পুরসভাকেও তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বিজেপির টাউন মণ্ডল সভাপতি নবীন সাহা বলেন, ‘পর পর দুটো অডিট হল, ক্যাশ বুকে সব হিসাব রাখা হয়, তার পরেও কেন পুরসভার অ্যাকাউন্ট্যান্টের চোখে এত বড় দুর্নীতি ধরা পড়ল না।’ কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সৈকত দাসের মন্তব্য, ‘মাল পুরসভা হল দুর্নীতিবাজদের আঁতুড়, সেখানে হাতেকলমে দুর্নীতি শেখানো হয়।’