চন্দ্রনারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জ: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই শুরু হয়েছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের পঠনপাঠন। কিন্তু স্কুলের প্রায় ১৬০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা ভীষণ কম। এই পরিস্থিতিতে স্কুলছুটদের ক্লাসমুখী করতে মাঠে নামলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। ঘটনা হেমতাবাদ (Hemtabad) ব্লকের দুধুণ্ডা আলোকতীর্থ বিদ্যালয়ে। স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সদস্যদের সাথে নিয়ে স্কুলছুটদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদেরকে ক্লাসে আসার বার্তা দিচ্ছেন ওই বিদ্যালয়েরই প্রাক্তনীরা। তাদের এই প্রচেষ্টায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে গোটা গ্রামে। অভিভাবকরাও ভুল বুঝতে পেরে কথা দিচ্ছেন, তাঁরা এবার থেকে ছেলেমেয়েদের আর স্কুল কামাই করতে দেবেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতার হুসেন বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষে স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এবার পড়ুয়াদের উপস্থিতি প্রথম থেকেই কম। কেরল, দিল্লি, মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তাই প্রাক্তনীদের নিয়ে আলোচনায় বসি। ওঁরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে পড়ুয়া আনতে উদ্যোগী হন।’
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মর্তুজা আলি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে তাদের বাড়িতে পৌঁছাই। গিয়ে দেখি, অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে কাজ করতে চলে গেছে। ছোট পড়ুয়াদের কেউ খেলছে, কেউ আত্মীয় পরিজনদের বাড়ি ঘুরতে গেছে। অভিভাবকদের বোঝাই যে, মানুষ করতে হলে বা পড়াশোনা করতে হলে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতেই হবে।’ অপর দুই প্রাক্তনী মহসিন আলি ও ইমাম হোসেনের বক্তব্য, ‘এই স্কুলে ৩৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন। উচ্চ মানের ল্যাবরেটরি আছে। স্কুলের লাইব্রেরিতে প্রচুর বই আছে। এছাড়াও সরকারি নির্দেশিকা মেনে মিড ডে মিলে প্রায় দিনই পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ডিম দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছেছি। স্কুলে না আসার মানসিকতা তৈরি হয়ে গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।’
প্রাক্তন ওই ছাত্রদল গত কয়েকদিন ধরে এলাকার মহীপুর, টুঙ্গাইল বিলপাড়া, কাকরশিং, হরিনারায়ণপুর, দুধুন্ডা, তিলগ্রাম, মল্লাহারের গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন স্কুলছুটদের ধরে আনতে। তাঁদের এই উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।