বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

মার্কিন আত্মকেন্দ্রিকতা

শেষ আপডেট:

‘আমেরিকাকে ফের এক নম্বর’ করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন সব কাণ্ডকারখানা শুরু করেছেন, যাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মানচিত্রটাই বদলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।‌ ট্রাম্পের রাশিয়া-প্রীতি বেড়ে চলেছে।‌ সম্প্রতি ওভাল অফিসে ট্রাম্প, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির বাগযুদ্ধ হল। ২০২২-এ যে ন্যাটোয় কিভের অন্তর্ভুক্তির দাবি ঘিরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সূচনা, সেই ন্যাটোর অস্তিত্বই এখন প্রশ্নের মুখে।

জেলেনস্কির ‘অপরাধ’ হল, ভান্সের কথামতো বৈঠকে ট্রাম্পকে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পুতিনের নিন্দা এবং ইউক্রেনের হাজারো সমস্যা উত্থাপন। ঠিক ছিল, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তির প্রসঙ্গ তুলবেন জেলেনস্কি। নিজের মতো তা তাঁর বলে যাওয়াই কাল হল। শাস্তিস্বরূপ তাঁকে কার্যত বৈঠক ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।

যদিও ট্রাম্পের মুখের ওপর কথা বলার সাহস, ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসা-করতালি কুড়িয়েছেন জেলেনস্কি। ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ বহু দেশ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে শান্তিপ্রস্তাবও ওই দেশগুলি তৈরি করেছে। রাশিয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করতে পারে বলে খবর।‌

দেরিতে হলেও জেলেনস্কি বুঝেছেন, বাড়াবাড়িই করে ফেলেছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে তাঁর ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। তাই ট্রাম্পকে চিঠি লিখে আমেরিকার প্রতি তাঁর চিরকৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে চুক্তিতে তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহের কথাও লিখেছেন। চিঠি পেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুশি বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল।‌

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ট্রাম্পের রাগ তো পড়েনি, বরং বেড়েছে। ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য করা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানও বন্ধ করে দিয়েছেন। ওভাল বৈঠকের ঘাতপ্রতিঘাত যে এতদূর গড়াবে, তা কেউ অনুমান করেননি।‌ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জেলেনস্কিকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।‌ চলতি সপ্তাহেই সৌদি আরবে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কর্মসূচি আছে ইউক্রেনের।

ট্রাম্প আসলে কী চাইছেন, বোঝা কঠিন।‌ প্রেসিডেন্ট হয়ে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন তিনি।‌ তার অনেকগুলি ইতিমধ্যে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।‌ বিচারকরা তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছেন।‌ চমক দিতে দিতে কোথায় থামবেন, ট্রাম্প নিজেও জানেন না।‌ আর আছেন তাঁর পারিষদরা! ‘বাবু যত বলে, পারিষদদলে বলে তার শতগুণ।’

গত দেড় মাসে ট্রাম্পের বিভিন্ন ঘোষণার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর পারিষদদের। সমাজমাধ্যমে ট্রাম্পপন্থী এক প্রভাবশালী গুন্থের ইগলম্যান লিখেছেন, ‘ইটস টাইম টু লিভ ন্যাটো অ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড নেশনস।’ প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর, মন্ত্রীসভায় সতীর্থ এলন মাস্ক তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে ইগলম্যানের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। ইগলম্যানের বক্তব্য, এখনকার পরিস্থিতিতে উপকৃত হচ্ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশ। বরং ন্যাটোতে থেকে আমেরিকার কোনও লাভ হচ্ছে না।‌

রিপাবলিকানদের মধ্যেও এই ধারণা দানা বাঁধছে। একই কারণে রাষ্ট্রসংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার থেকেও আমেরিকার বেরিয়ে আসা উচিত বলে রিপাবলিকান কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জনমত গড়ে তোলা হচ্ছে।‌ এক্ষেত্রেও যুক্তি হল, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এতে উপকৃত হলেও আমেরিকার লাভের লাভ কিছু হয় না।‌ রিপাবলিকান সেনেটর মাইক লি’র সাফ কথা, এ ধরনের সব সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে আমেরিকার নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।‌

ট্রাম্পের মসনদে বসার এখনও দু’মাস হয়নি।‌ এর মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। ট্রাম্প এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের ‘কল্যাণে’ থরহরিকম্প অবস্থা এখন গোটা বিশ্বের। আগামী চার বছরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা সহজে অনুমেয়।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

কাঠগড়ায় অধিকার

বিচারপতিই যদি অভিযুক্ত হন...। আগে কখনও হয়নি, এমন নয়।...

পদ্মের চালে তসলিমা  

চৌষট্টি খোপের দাবায় রাজা-মন্ত্রী, হাতি-ঘোড়া-নৌকার চেয়ে বিপদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে...

সর্বব্যাপী নীতিহীনতা

রাজনীতিতে দলবদলের প্রসঙ্গ উঠলে ‘আয়ারাম গয়ারাম’ কাহিনী আসবেই। বহুলপ্রচলিত...

সুখের খোঁজ

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী মান্না দে গেয়েছিলেন, ‘সবাই তো সুখী হতে...