হলদিবাড়ি: ৮০০, ৮০১, ৮০২। ৯০০, ৯০১, ৯০২… হাতে একটি খাসি নিয়ে একজন এমনই হেঁকে চলেছেন। বহিরাগত কারও কাছে বিষয়টি খুবই কৌতূহলের বলে মনে হতে পারে। হলদিবাড়িতে হুজুর সাহেবের মাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত অস্থায়ী পশু বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বিষয়টি অবশ্য আশ্চর্যের নয়। হুজুর সাহেবের দানঘরে দেওয়া মানতের গবাদিপশু এখানে এভাবে বিক্রি করা হয়। মেলায় ঘুরতে এসে অনেকেই তা কিনে নিয়ে যান। নেওয়ার কথাই। যেখানে খাসির মাংস অনেকটাই দামী সেখানে মাত্র ৯০০ টাকায় একটি গোটা খাসি মিললে কেউ কি তা না কিনে থাকতে পারে! মেলার দু’দিনে এভাবে দানঘরে দেওয়া গবাদিপশু বিক্রি করে ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকা আয় হয়। সেই টাকা সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহার করা হয়।
উত্তরবঙ্গ সহ ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী হুজুরের মেলা চত্বরে চুড়ি, খেলনা, প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি জিনিস থেকে শুরু করে ফল সহ বিভিন্ন খাদ্যের পসরা নিয়ে হাজির হন। বিকিকিনির পর্বে অবশ্য অস্থায়ী গৃহপালিত পশু বিক্রির বাজারই সবচেয়ে নজর কাড়ে। হুজুরের কাছে মানতে দেওয়ার জন্য এই বাজারই প্রয়োজনীয় গৃহপালিত পশুর জোগান দেয়। পুণ্যার্থীদের কাছে সেই সমস্ত পশু বিক্রি করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেশ লাভ হয়। ভালো মুনাফা হওয়ায় তঁাদের মুখে চওড়া হাসি। অনেকেই আবার নিলামে সেই মানতে দেওয়া গবাদিপশু কিনে সেগুলি ফের চড়া দামে বিক্রি করেন। অনেকে বাড়িও নিয়ে যান।
পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, ভক্তিভরে হুজুর সাহেবের কাছে মানত করা হলে হাতেনাতে তার ফল মেলে। এক্রামিয়া ইসালে সওয়াব কমিটির তরফে মানতের সেইসব গবাদিপশু নেওয়ার জন্য একটি পৃথক দানঘর করা হয়েছে। নিজের মানতের পশুটি ওই বাজার থেকে কিনে পুণ্যার্থীরা সেখানে গিয়ে ভক্তিভরে তা জমা দেন। কমিটির কোষাধ্যক্ষ নুর নবিউল ইসলাম বলেন, ‘পুণ্যার্থীদের কাছে প্রাপ্ত গবাদিপশু দানঘরের কাছেই নিলামে বিক্রি করা হয়। সেই অর্থ সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কিছু মানতের পশু অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহার করা হয়।’
বক্সিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা পশুপালক সাবিরুল হক বললেন, ‘এবছর পর্যন্ত প্রচুর মুরগি বিক্রি হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবছর সবচেয়ে বেশি আয় হবে বলেই মনে করছি।’ স্থানীয় ব্যবসায়ী সুজন বণিক বললেন, ‘মেলার জন্য প্রতিবার বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজন আসেন। তাঁদের আপ্যায়নের জন্য মেলার নিলামে অংশ নিয়ে মুরগি কিনে নিয়ে যাই। বাজারের থেকে কম দামে মুরগি মেলায় অনেকটা উপকার হয়।’