স্বরূপ বিশ্বাস, কলকাতা: পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলকে কেন্দ্র-বিরোধিতার সুরেই বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। আরজি কর কাণ্ডে পরিস্থিতি লাগাতার জটিল হওয়ার আশঙ্কায় এই কৌশলই নিলেন তিনি। কার্যত মুষড়ে পড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের কিছুটা চাঙ্গা করতেই মঙ্গলবার বিধানসভায় ধর্ষণ-বিরোধী কড়া বিল পাশের পদক্ষেপ তাঁর। এই ধরনের কড়া আইন কেন্দ্রের হাতে না থাকাটাই যে চরম ব্যর্থতা, সেই প্রচারকেই হাতিয়ার করে এবার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ এগোতে চান তিনি। কেন্দ্র-বিরোধিতার পাশাপাশি এব্যাপারে ব্যর্থতার জন্য মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের খবর, আরজি কর কাণ্ডের মোকাবিলায় সরকার ও দলের ‘চরম অস্বস্তি’ কাটাতে এই প্রচারকেই সামনে আনতে চান তিনি। মঙ্গলবার থেকে প্রচার প্রস্তুতি শুরুও হয়ে গিয়েছে দলে। দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে একান্তে কথাও হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর।
কেন্দ্র-বিরোধিতার সুর তুলে সম্প্রতি লোকসভা ভোটে রাজ্যে ভালোরকম ‘ডিভিডেন্ড’ পেয়েছে দল। কেন্দ্র-বিরোধিতার সুরকে কাজে লাগাতে পারলে আগামী দিনেও তা মিলবে বলে নিশ্চিত দলনেত্রী ও অভিষেক। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আরজি কর ইস্যু মোকাবিলাতেও সেই কেন্দ্র-বিরোধিতাকেই অস্ত্র করছে তৃণমূল। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ দমনে কেন্দ্রের সদর্থক আইন ও পদক্ষেপ কোথায়, এই প্রশ্নই এখন জনমানসে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস শুরু করেছে দল। এর পালটা রাজ্যের শাসক দল ‘অপরাজিতা’ বিল আনাতেই পরিষ্কার দুই সরকারের ফারাক, এই কথাটাই এখন মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিতে চান তৃণমূল নেতারা।
অভিষেক অবশ্য ইতিমধ্যেই আরজি কর কাণ্ডে কেন্দ্র-বিরোধিতার সুর তোলার প্রাথমিক কাজটা করে ফেলেছেন। ধর্ষণ-বিরোধী কঠোর আইনে ফাঁসির দাবি তুলে কেন্দ্রকে পদক্ষেপ করতে বলেছেন। এমনকি কেন্দ্র এই ব্যাপারে পদক্ষেপ না করলে তাঁরা দিল্লি গিয়ে আন্দোলন করবেন, সেই হঁশিয়ারিও দিয়েছেন অভিষেক। এদিন থেকে তৃণমূলও প্রচারে এই ঝাঁঝই তুলবে বলে প্রস্তুতি দলের সর্বস্তরে। এক্ষেত্রেও ব্যর্থতার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিও মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই দল তুলবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
রাজনৈতিক মহলের অবশ্য ধারণা, আরজি করের নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে জুনিয়ার ডাক্তারদের অরাজনৈতিক আন্দোলন যেভাবে দিন দিন জোরালো হচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এই ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলন যেভাবে শুরু হয়েছে, তাতে এই কেন্দ্র-বিরোধিতার কৌশল কতটা কাজে দেবে তা আগামী দিনেই বোঝা যাবে।