আসানসোল: রাইস মিলের অ্যাকাউন্ট খুলে দিন। ২০০ শ্রমিকের বেতন আটকে রয়েছে। আদালতে কাতর আবেদন তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের। বৃহস্পতিবার সকালে গোরু পাচার মামলায় আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেন। তবে এদিনের শুনানিতে তাঁদের হয়ে কোনও আইনজীবী সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এজলাসে উপস্থিত ছিলেন না। এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বা আইও উপস্থিত না থাকলেও, সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার হাজির ছিলেন।
এদিন শুনানির শুরুতেই বিচারক অনুব্রত মণ্ডলকে দেখে বলেন, ‘আপনাকে খুব ক্লান্ত লাগছে?’। তার উত্তরে অনুব্রত বলের, ‘আমার শরীর ভালো নেই।’ বিচারক জানতে চান, ‘চিকিৎসক দেখাচ্ছেন? চিকিৎসা হচ্ছে?’ অনুব্রত বলেন, ‘হ্যাঁ। হাসপাতালের মেডিকেল ওয়ার্ডে আছি।’ তখন বিচারক বলেন, ‘চিকিৎসা নিয়ে বিশেষ কিছু বলার হলে আমাকে বলতে পারেন। আমি বিষয়টি দেখব।’ এরপর অনুব্রত বলেন, ‘আমাকে আসানসোল জেলে ফেরত পাঠানো হোক।’ বিচারক বলেন, ‘এতে আমার কিছু করার নেই। দিল্লি হাইকোর্ট তো আপনার আবেদন খারিজ করেছে।’ অনুব্রত আরও বলেন, ‘রাইস মিলের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হোক। ওই মিলে ২০০ জন কাজ করেন। তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় ইলেকট্রিকের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।’ এর প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, ‘আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করুন।’ এই প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘তদন্ত এখনও চলছে। অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে আইওর সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
পাশাপাশি এদিন আরও একবার সায়গল বিচারককের কাছে তাঁর বাজেয়াপ্ত করা গয়না ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। তখন বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন, ‘অনেকদিন হয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিনে গয়না নিয়ে পুরো রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে।’ আগামী ৭ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এদিন শুনানির পর বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী দিল্লির তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি মেল পাঠান। তাতে অনুব্রতর শারীরিক অবস্থা ও তাঁর চিকিৎসার দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গোরু পাচার মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে দিল্লির তিহাড় জেলে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। অন্যদিকে, গোরু পাচারের অন্য একটি মামলা আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে চলছে। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে গোরু পাচার মামলায় দিল্লির তিহাড় জেল থেকে অনুব্রত ও সায়গলের ভার্চুয়াল শুনানি হয়েছিল। সেদিনও অনুব্রত বিচারকের কাছে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে দরবার করেছিলেন। পাশাপাশি তাকে দিল্লির তিহাড় জেল থেকে আসানসোল জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাতর আবেদন করেছিলেন। এই তিহাড় জেলে রয়েছেন অনুব্রত মন্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। তদন্তে সহযোগিতা না করায়, গত ২৬ এপ্রিল ইডি দিল্লিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।