Thursday, March 28, 2024
Homeজাতীয়হুমায়ুনের রহস্যময় 'টোকেন’ ছিল ছাড়পত্র! গরু পাচারে নেপথ্যে থেকেই কলকাঠি নাড়তেন অনুব্রত?

হুমায়ুনের রহস্যময় ‘টোকেন’ ছিল ছাড়পত্র! গরু পাচারে নেপথ্যে থেকেই কলকাঠি নাড়তেন অনুব্রত?

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল সহ কম করে এক ডজন অভিযুক্তের কথা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ২০৪ পাতার সুদীর্ঘ চার্জশিটে তুলে ধরেছে৷ চার্জশিটের সূত্র ধরে প্রকাশ্যে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য, যাতে চোখ কপালে উঠেছে তামাম বঙ্গবাসীর। এই চার্জশিটের ১১-১৪ পাতা তথা পরবর্তীতে ১৮০ থেকে ১৮৩ পাতায় উল্লিখিত হয়েছে কোন কোন পথে এবং কী ভাবে ভারতের সীমান্ত টপকে অন্য দেশে(পড়ুন বাংলাদেশ) অবৈধভাবে পাচার হতো লক্ষ লক্ষ গরু। ইডির চার্জশিটে এই পাচার চক্রে অনুব্রত মণ্ডল ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ সহ বিএসএফের একটি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলেও বেনজির দাবি করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকরভাবে জানান হয়েছে, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে ট্রাকে করে বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার করার সময়, পাচারকারীরা একটি বিশেষ ‘টোকেন’ ব্যবহার করতো, যা দেখে ট্রাকপগুলিকে সীমান্ত অতিক্রম করার ছাড়পত্র দিত বিএসএফ। এই ‘টোকেন’ এর ব্যবস্থা করেছিল অনুব্রত মণ্ডলের বিশ্বস্ত পার্টনার এনামুল হকের ‘খাস লোক’  হুমায়ুন কবির ওরফে পিন্টু হাজি। একটা সামান্য টোকেন দেখিয়ে কিভাবে বর্ডার পার হওয়ার জন্য ছাড়পত্র পেত চালানকারীরা, তা নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তদন্তকারীরা।

প্রসঙ্গত, ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, বীরভূমে পশু হাট থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের মূল দায়িত্বে ছিল অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগল হোসেনের বিশ্বস্ত শেখ আব্দুল লতিফ। তিনি অনুব্রতেরও আস্থাভাজন ছিলেন। বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদের গোটা সিস্টেম,  অর্থাৎ, গরু হাট থেকে গরু সংগ্ৰহ থেকে শুরু করে তার ট্রান্সপোর্ট সব কিছুই এই আব্দুল লতিফ দেখভাল করত বলে ইডির দাবি। নেপথ্যে থেকে পুরো বিষয়টি নজরে রাখতেন সেহগল, এবং দৈনন্দিন রিপোর্ট দিতেন অনুব্রতকে৷ অনেক ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন ‘নেপথ্য সঞ্চালক’, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নেতা হিসেবে প্রশাসনের উপরিমহলে প্রভাব খাটিয়ে পাচারের পথে অন্তরায় এমন বহু সমস্যার সমাধান অক্লেশে করতেন ‘কেষ্ট’ মণ্ডল। কিন্তু কখনই সরাসরি কোনও কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করতেন না, যা কিছু করণীয় ‘সেকেন্ড’ ও ‘থার্ড ইন কম্যান্ড’ সেহগল হোসেন এবং এনামুল হককে দিয়ে করাতেন। ইডির দাবি, গরু পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুল ও তাঁর ভাইপো জাহাঙ্গীর আলম,  হুমায়ুন কবির,  মেহেদী হাসানের কোম্পানি জেএইচএম ব্রাদার্স-এর কর্মচারী মনোজ সানার ডায়েরি থেকে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ জানা গিয়েছে,  সেই ডায়রিতে নাকি লেখা হয়েছিল আব্দুল লতিফ ঘনিষ্ঠ শেখ আনোয়ারকে বিভিন্ন তারিখে মোট ৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, শেখ আনোয়ার কে? ইডির চার্জশিটে বর্ণিত, প্রাক্তন রাজ্য পুলিশ কর্মচারী সেহগল যেমন অনুব্রত মণ্ডলের ‘রাইট হ্যাণ্ড’,  তেমনই অভিযুক্ত শেখ আনোয়ার ছিলেন আব্দুল লতিফের ‘রাইট হ্যাণ্ড’। লতিফ আবার সেহগলের বিশ্বস্ত জন। গরু পাচারের লভ্যাংশ আব্দুল লতিফের বকলমে এই আনোয়ার সংগ্রহ করতেন। এই ভাবেই পাচারচক্র ঘুরেছে চক্রাকারে। বীরভূম থেকে আব্দুল লতিফ ‘সবুজ সংকেত’ দিলে বিভিন্ন সময় হাটে গরু সংগ্রহ করত আনোয়ার,  রিপোর্ট করত লতিফকে, বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে ইডি। এই আব্দুল লতিফ ও এনামুল হক, দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী তথা গরু পাচার কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত সেহগল হোসেনের। ইডি-র দাবি,  অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশেই তাঁর হয়ে প্রোটেকশন মানি সংগ্রহ করত সেহগল। গরু পাচার করে ট্রাক ভর্তি করে মুর্শিদাবাদে এনামুল হক ও জেএইচএম ব্রাদার্সের ‘সোনার বাংলা’  অফিসে পাঠানো হত। এখান থেকেই গোটা ‘অপারেশন’ সামলাতেন হুমায়ুন কবির।

ইডি জানাচ্ছে, ঠিক এখান থেকেই ভারত-বাংলাদেশ বর্ডারে হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে গোটা পাচারকাণ্ড পরিচালনা হতো৷ সীমান্ত সন্নিকটে এই অফিস থেকেই চলতো পাচারপর্ব। শয়ে শয়ে ট্রাকে রাত ১১ টা থেকে ভোর ৩টে পর্যন্ত বাংলাদেশে পাচার হতো গরু। বিএসএফ তরফে বিষয়টি দেখভাল করতেন সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিএসএফ-এর কম্যান্ডান্ট সতীশ কুমার। পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে যাতে সীমান্ত পার হতে পারেন,  তার জন্য হুমায়ুন বরাদ্দ করেছিল কাগজের প্যাডে এক বিশেষ ভাবে তৈরি ‘টোকেন।’  ট্রাকচালকরা সীমান্তে এই টোকেন দেখালেই তাদের দেওয়া হতো ‘সেফ প্যাসেজ’। এই টোকেনের নেপথ্যে সেহগল হোসেনের কেরামতিও কিছু কম ছিল না বলে দাবি ইডির। পুলিশ কর্মী হওয়ার দরুন,  অনুব্রতের নির্দেশে ‘টোকেন’ যাতে বাধা না পায়,  তার জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে রাখতেন সেহগল, যার নেপথ্যে অবশ্যই থাকতেন পাচারকাণ্ডে ‘হেড মাস্টার’ অনুব্রত স্বয়ং৷ আর এভাবেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল অনুব্রত এণ্ড কম্পানির কোটি কোটি টাকার গরু পাচারের ‘নেক্সাস’, দাবি ইডির।

Sourav Roy
Sourav Royhttps://uttarbangasambad.com
Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular