রবিবার আইএসএলে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হতে চলেছে। অথচ এই ম্যাচ ঘিরে বাঙালির রক্তচাপ কই তেমনভাবে তো বাড়ছে না! বিখ্যাত সাহিত্যিক-সাংবাদিক মতি নন্দী একবার লিখেছিলেন কলকাতার ডার্বি সম্পর্কে, ‘বিশ্বের যত বাঙালি আছেন, আজ নব্বই মিনিটের জন্য তাঁরা দু’ভাগ হয়ে যাবেন- ঘটি ও বাঙাল। কেননা আজ কলকাতার বড় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান।’
রবিবারের ডার্বি নিয়ে আজকের কোনও মতি নন্দী তো সেই কথা লিখতে পারছেন না। আসলে ডার্বি ঘিরে বাঙালির আবেগটা যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে দুটি দলে বাঙালি ফুটবলার না থাকায়। দু’হাজার সাল পর্যন্ত বাঙালি ফুটবলারদের রমরমা ছিল। একটা সময়ে এই আইএসএলের কলকাতা ডার্বিতেও দু’দলে সর্বাধিক ন’জন বাঙালি ফুটবলার দেখা গিয়েছে। সত্তর কিংবা আশির দশকের কথা তো বাদই দিলাম। তখন তো মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল’এর দল বাঙালি ফুটবলার ছাড়া ভাবাই যেত না।
উনিশশো চুরাশি সালে এশিয়ান কাপে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় দলে অতনু ভট্টাচার্য, সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যর মতো খেলোয়াড়দের ভারতীয় দলের জার্সি পরতে দেখে সিঙ্গাপুর মনিটর কাগজের সাংবাদিক আলফানসো চান আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এঁরা কি সবাই ভাই? সবার পদবি এক?
আলফানসোকে সেদিন সগর্বে উত্তর দিয়েছিলাম, ওঁরা সবাই ফুটবলতুতো ভাই। আসলে তখন কী ভারতীয় দল, কী মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে বাঙালি ফুটবলারের আধিক্য আমাদের, অর্থাৎ বাঙালি সাংবাদিকদের শ্লাঘা বাড়িয়ে দিত। দর্শকরাও উত্তেজনায় ফুটতেন। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ তখনও ডার্বি হয়নি। বড় ম্যাচ বলেই চিহ্নিত ছিল। তারও আগে এই ম্যাচ যখন চ্যারিটি ম্যাচের অভিধা পেয়েছে, তখন থেকে বাঙালি ঘরে ঘরে এই ম্যাচের দিন সবুজ-মেরুন কিংবা লাল-হলুদ পতাকা টাঙিয়েছে। বাজারে ইলিশ কিংবা চিংড়ির দর বেড়েছে কিংবা কমেছে। ফুটবল জ্বরে বাঙালি জর্জরিত হয়েছে।
রবিবার-এর ডার্বির খেলোয়াড় তালিকাটি দেখুন। বাঙালি ফুটবলার খুঁজতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার তালিকায় প্রথম দলে শুধু বাঙালি মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী আর অতিরিক্ত তালিকায় আরেক মাঝমাঠের খেলোয়াড় সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। ইস্টবেঙ্গলে তবু তো দুজন… মোহনবাগানে শিবরাত্রির সলতের মতো জ্বলছেন শুভাশিস বসু। বাকি সব খেলোয়াড় হয় বিদেশি, নয় ভিনরাজ্যের। আইএসএলের নিয়ম অনুযায়ী ছ’জন বিদেশিকে দলে রাখা সম্ভব হলেও পাঁচজনের বেশি বিদেশিকে মাঠে রাখা যাবে না। অর্থাৎ ছয় ভারতীয় ফুটবলার দলে থাকবেন। এই ভারতীয়দের মধ্যেও বাঙালি ফুটবলার কোথায়?
কলকাতার ডার্বি ঘিরে বাংলার আবেগ কি এমনি এমনি কমেছে? সাত কিংবা আটের দশকের মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড় তালিকাটি ভাবুন। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, তনুময় বসু, সুমিত মুখোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ পাঁজি, কৃশানু দে, সমরেশ চৌধুরী, রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, মিহির বসুর মতো নামগুলো জ্বলজ্বল করত তালিকায়। তখন কি ভিনরাজ্যের ফুটবলাররা থাকতেন না? হাবিব-আকবর-শ্যাম থাপা-সাবির আলি-জেভিয়ার পায়াস-বাবু মানিরাও বাঙালি বনে গিয়েছিলেন। আরও আগে চুনী-পিকের রমরমে রাজত্বের মধ্যেও বলরাম, জার্নাল সিং, পিটার থঙ্গরাজরা ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও তো প্রায় হাফ বাঙালি। তাই সেদিনের বড় ম্যাচ ঘিরে বাঙালির রক্তে অ্যাড্রিনালিনের প্রবাহ বয়ে যেত।
কিন্তু হঠাৎ বাঙালি ফুটবলাররা ডোডো পাখির মতো শিডিউলড বি শ্রেণির দুষ্প্রাপ্য প্রাণীতে পরিণত কেন হল? এর বহুবিধ কারণ আছে। আতশকাচের তলায় ফেললে বাঙালি খেলোয়াড় উঠে না আসার অনেক কারণ মিললেও একটি প্রধান কারণ হল ফুটবল স্কাউটের অভাব। কোথায় গেল অচ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, খোকন বসু মজুমদার, কালিদাস মুখোপাধ্যায়, অশ্বিনী বরাটের সেই সন্ধানী চোখ, যা বাংলার মাঠময়দান থেকে জহুরির মতো চোখ দিয়ে মণিমাণিক্য তুলে আনতেন? সে একটা সময় ছিল, যখন আন্ডার হাইট টুর্নামেন্ট রমরম করে চলত আর প্রধান অতিথির আসনে বসে এঁরা কিংবা জ্যোতিষ গুহ, বাঘা সোমরা রত্ন খুঁজে নিতেন। তখন বাঙালি বাবা-মায়েরাও ছেলেদের পিকে-চুনী পরে সুব্রত, মনোরঞ্জন-কৃশানু-ভাস্কর বানানোর জন্যে হাত ধরে কোচিং ক্যাম্পে নিয়ে যেতেন। এখন যেমন যান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বানাতে। ফুটবল খেললে কুইক মানি মেলে এই মিথটিও তরুণ প্রতিভাবানদের খেপ খেলায় উৎসাহিত করছে। এক-একদিনে তিন-চারটি খেপ খেললেই হাজার দুয়েক কিংবা তিনেক টাকা। এই লোভের ইশারায় প্রতিভাবানদের প্রতিভার অকালমৃত্যু ঘটছে। সর্বভারতীয় বহু টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়াও বাঙালি ফুটবলার উঠে না আসার অন্যতম কারণ।
কোথায় গেল নাগজি ট্রফি, বরদলৈ ট্রফি, রোভার্স, ডিসিএমের মতো প্রতিযোগিতা? পিকে-অমল দত্তর মতো কোচই বা কোথায় গেলেন? আসলে আইএসএল হয়তো ভারতীয় ফুটবলকে একটা বেগ দিয়েছে কিন্তু কেড়ে নিয়েছে বাঙালির ফুটবল আবেগ! আজ তাই বাঙালি ডার্বি নিয়ে নয়, রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে আগ্রহী হয় বেশি। রাজনীতি যেন শুষে নিয়েছে ফুটবলের প্রাণভোমরাটিকে। সব খেলার সেরা বাঙালির ফুটবলকে!
(লেখক সাংবাদিক)
শিলিগুড়ি: সন্তান জন্মের পর থেকেই বাড়ির বৌকে যৌন ব্যবসায় নামানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন খোদ স্বামী…
শিলিগুড়ি: স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই গৃহবধূকে অত্যাচারের অভিযোগ শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে। দুই কন্যা সন্তান…
মানিকচক: তৃণমূল (TMC) অঞ্চল সভাপতিকে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের (Congress) বিরুদ্ধে। মালদার মানিকচকের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক : নন্দীগ্রাম গণহত্যা নিয়ে ফের বিস্ফোরক মমতা। এবার নাম না করে…
মালদা: নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দোষীর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল মালদা জেলা আদালত। এছাড়া…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বিচারপতির চেয়ার ছেড়ে জনতার দরবারে হাজির হয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguli)।…
This website uses cookies.