ইতনি করিব আনে কে বাদ ভি। হামারা প্রবলেম কেয়া হো রাহা হ্যায়?
অস্ফুটে কথাগুলো বলে দিলেন জয় শা। শুনে মনে হল আর্তনাদ। নাকি বিলাপ? কে জানে।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের রাত তখন গভীর। ঘড়ির কাঁটা বলছে, প্রায় রাত দেড়টা। ১৯ নভেম্বর ২০২৩ পার হয়ে ক্যালেন্ডারে ততক্ষণে ২০ নভেম্বর শুরু হয়ে গিয়েছে। একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার হারের যন্ত্রণায় তখন কাতর আসমুদ্রহিমাচল। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণার মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সচিব জয় মোদি স্টেডিয়ামের সেই রাতেই গুজরাট ক্রিকেট সংস্থার সভাপতির ঘরে কিছু সাংবাদিককে ডেকেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, কেন বারবার নক আউট পর্বে সমস্যায় পড়ছে টিম ইন্ডিয়া।
আচমকা সেই আলোচনায় ছন্দপতন!
দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত এক সৈনিক। প্রথম দর্শনেই দেখে মনে হল, দিকশূন্যপুরের বাসিন্দা। যিনি নিজের যাবতীয় সত্তা হারিয়ে ফেলেছেন। শেষ কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটে গিয়েছে, হজম করতে পারছেন না কিছুতেই। টানা দশ ম্যাচে দাপুটে জয়ের পর এমন আবার হয় নাকি! ঘরে রোহিত প্রবেশ করতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় ইতি জয়ের। শুরু হল বোর্ড সচিব ও ভারত অধিনায়কের রুদ্ধদ্বার আলোচনা। সেই রাতে তাঁদের মধ্যে ঠিক কী আলোচনা হয়েছিল, জানা যায়নি। তবে নিশ্চিতভাবেই সেই রাতে শুরু হয়েছিল আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে চর্চা। আর অবশ্যই কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়কে ধরে রাখার পরিকল্পনা।
মাঝে প্রায় আট মাস পার। মার্কিন মুলুকে টি২০ বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গিয়েছে। টিম ইন্ডিয়াও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে অভিযান শুরু করেছে। ৯ জুন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ। তার আগে অতীতের মতোই সেই আলোচনাটা ফের শুরু হয়ে গিয়েছে ক্রিকেট মহলে। দীর্ঘ ১১ বছরের আইসিসি ট্রফি খরার যন্ত্রণা কি এবার কাটবে রোহিতদের? চলতি কুড়ির বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করে রয়েছে, একমাত্র সময়ই তার সঠিক জবাব দিতে পারে। কিন্তু তার আগে ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণে সামনে আসছে নানা দিক।
যার প্রথমটা অবশ্যই মার্কিন মুলুকের বাইশ গজ। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ড্রপ ইন পিচ তৈরি করে নিয়ে আসা হয়েছে নিউ ইয়র্কের নাসাউ ক্রিকেট মাঠে। সেই ভ্যাবচ্যাক বাইশ গজ যে এখনও সর্বোচ্চ মানের ক্রিকেটের উপযুক্ত নয়, ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। পিচ বিতর্ক নিয়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসিকে ঘোষণা করতে হয়েছে, রবিবারের ইন্দো-পাক ম্যাচে ভালো পিচ হবে। আমেরিকায় টিম ইন্ডিয়া পৌঁছানোর পর থেকেই সেখানকার পরিবেশ, পরিকাঠামো নিয়ে এত বেশি চর্চা শুরু হয়েছে যে, পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে ভারতীয় দলের কম্বিনেশন ও পরিকল্পনার রূপরেখা। যার মধ্যে সাফল্যের স্বপ্ন স্বাভাবিকভাবেই যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিস্তর কাঁটাও।
কাঁটা নম্বর এক, অবশ্যই হার্দিক পান্ডিয়া। গত অক্টোবরে পুনেতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। ছিটকে গিয়েছিলেন বাকি বিশ্বকাপ থেকেও। সেই হার্দিক ফিট হয়ে আইপিএলে কামব্যাক করার আগে থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে। গুজরাট টাইটান্স থেকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হয়ে মাঠে ফেরার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে যা বিতর্ক হয়েছে, তার রেশ টিম ইন্ডিয়ার পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলবে কি না, নিশ্চিতভাবেই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে রোহিতের সিংহাসনে বসতে গিয়ে হার্দিক ভারতীয় ক্রিকেট মহলে এবং টিম ইন্ডিয়ার অন্দরে প্রবলভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। যদিও টি২০ বিশ্বকাপে তিনিই রোহিতের ডেপুটি। দলের অধিনায়ক ও সহ অধিনায়কের সম্পর্কের রসায়ন বিশ্বকাপে অবশ্যই ভারতীয় দলের এক্স ফ্যাক্টর হবেই। ইতিহাস বলছে, ২০০৭ সালের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১১ সালে দেশের মাটিতে একদিনের বিশ্বকাপ জয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতের এক্স ফ্যাক্টর ছিলেন যুবরাজ সিং। হার্দিক যদি ব্যাটেবলে যুবরাজ হয়ে উঠতে পারেন, রোহিতের বহু দুশ্চিন্তা কমে যাবে। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব? তাছাড়া হার্দিককে চাপে রাখার জন্যই অলরাউন্ডার হিসেবে শিবম দুবেকে দলে নেওয়া হয়েছে। আইপিএলে চেন্নাইয়ের হয়ে এক ওভারও বোলিং না করা শিবমকে বিশ্বকাপের আসরে নিয়মিত হাত ঘোরাতে দেখলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
কাঁটা নম্বর দুই, টিম ইন্ডিয়ার কম্বিনেশন। মোট চারজন স্পিনার নিয়ে আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে কুড়ির বিশ্বকাপ খেলতে হাজির হয়েছে ভারত। অথচ, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের একাদশে দেখা গিয়েছে চারজন জোরে বোলার। এমন চমকপ্রদ কম্বিনেশন টিম ইন্ডিয়াকে বাকি বিশ্বকাপে কোন পথে নিয়ে যায়, সেটাই দেখার। যদিও ভারতীয় দলের অন্দরমহল থেকে দাবি করা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের গোলকধাঁধা পিচের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপের পরের পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টিম ইন্ডিয়ার বোলিং আক্রমণ হবে স্পিন নির্ভরই।
কাঁটা নম্বর তিন, টিম ইন্ডিয়ার নয়া ওপেনিং জুটি। ঋষভ পন্থকে তিন নম্বর জায়গা নিশ্চিত করার পাশে রোহিত ও বিরাট কোহলির ওপেনিং জুটি নিশ্চিতভাবেই বিপক্ষ দলের কাছে চমক। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বকাপের আগে মাত্র একবারই রোহিত-বিরাট ওপেন করেছিলেন। আয়ারল্যান্ড ম্যাচে তাঁদের জুটির জোশ দেখা যায়নি। বাকি বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার নয়া ওপেনিং জুটির উপর অনেকটাই নির্ভর করবে দলের চরৈবেতি। কারণ, মার্কিন মুলুকে চলতি বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই ভ্যাবচ্যাক পিচের পাশে টসও যে মহা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, সেটাও প্রমাণিত। ফলে টস হেরে শুরুতে ভারতকে ব্যাটিং করতে হলে রোহিত-বিরাটরাও বড় সমস্যায় পড়বেন নিশ্চিতভাবেই।
কাঁটা নম্বর চার, কোচ দ্রাবিড়। চলতি বিশ্বকাপের পরই তিনি দায়িত্ব ছাড়ছেন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে প্রবলভাবে নাম ভাসছে গৌতম গম্ভীরের। দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার পর যদি গম্ভীর আগ্রাসী জমানা ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয়, তাহলে এখন থেকেই বলা যেতে পারে বড় পালাবদলের পথে টিম ইন্ডিয়া। দ্রাবিড়ের একসময় সতীর্থ গম্ভীর কিন্তু বরাবরই আগ্রাসী ও ঠোঁটকাটা। ফলে রোহিত-বিরাটদের কীভাবে তিনি ম্যানেজ করবেন, সেটাও আগামীর ভারতীয় ক্রিকেটে বিশাল চর্চার বিষয় হতে চলেছে।
৩৬ বছরের বিরাট ও ৩৮-এর রোহিত সম্ভবত তাঁদের কেরিয়ারের শেষ কুড়ির বিশ্বকাপ খেলছেন। এবারও প্রত্যাশার ঝুলি শূন্য থাকলে ফের ১৯ নভেম্বরের সেই রাতটা তাঁদের তাড়া করবে। সেই রাত, যার সকাল হয়নি আজও।
সমীর দাস, কালচিনি: তিন বছর আগে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তবে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট (Hathras Stampede) হয়ে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ছুটির দিনে বাড়িতে ভিন্ন স্বাদের কী খাবার বানানো যায় ভেবে পাচ্ছেন…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ডাক্তারির স্নাতকত্তোর স্তরের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-পিজির (NEET-PG 2024) নতুন দিনক্ষণ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: পড়াশোনায় একদমই মন বসছে না? রোজকার ছোটখাটো বিষয়গুলোও ভুলে যাচ্ছেন? বা…
This website uses cookies.