বাঘের পিঠে সওয়ার ইউনূস বাহিনী। যাঁদের জুলাই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন, বেঁকে বসেছে তাঁদের একাংশই। সেই অসন্তোষের মাত্রা এমনই যে, মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবনে পৌঁছে গিয়েছেন সেই বিক্ষুব্ধরা। ব্যারিকেড ভেঙে জুলাই আন্দোলনে আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্র দলের এই অভিযান হাসিনা তাড়াও পরিস্থিতির স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। স্বীকৃতি এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে এই অভিযান আর সরকারের শরিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কথাও শুনছে না।
বৈষম্যবিরোধী ওই আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং নতুন এই অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। চাপের মুখে হাসনাতকে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করতে হয়েছে। ইউনূস সরকার অতিরিক্ত আমলা নির্ভর হয়ে উঠেছে বলে তিনি প্রবল সমালোচনা করেছেন। সরকারের সমর্থক শক্তি এভাবে বেঁকে বসায় প্রমাদ গুনছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী এখন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা।
নির্বাচন পিছিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ইউনূস শেষপর্যন্ত ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনার দিকে অভিযোগের কামান দেগে নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন। ঢাকার যমুনা অতিথিশালা এখন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন। বিক্ষোভ থেকে রক্ষা করতে সেই অতিথিশালা এখন কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। তার মধ্যে বসে পরিস্থিতি সামলাতে দেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে এই বিশৃঙ্খলার পিছনে হাসিনা বাহিনীর উসকানি আছে বলে অভিযোগ করেছেন।
আওয়ামি লিগ ইতিমধ্যে পথে নেমেছে ঠিকই। দীর্ঘ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার সূত্রপাত হয়েছে, দেশজুড়ে দলের বক্তব্য জানাতে লিফলেট বিলির মধ্যে দিয়ে। শেষ পর্যায়ে রয়েছে অবরোধ ও ধর্মঘট। ভারতের মাটিতে বসেই সেই আন্দোলনকে কার্যত ভার্চুয়াল পরামর্শ দিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুজিব-কন্যা। তিনি বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, ‘আমাকে সরিয়ে কী লাভ হল?’ যে উত্তর জানা নেই জুলাইয়ের আন্দোলনকারীদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধকে হাসিনা ব্যবহার করতে চাইবেন সন্দেহ নেই। ঠিক যেভাবে সংরক্ষণবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যবহার করেছিল বিএনপি, জামাত সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসিনাবিরোধী শক্তি। সেই ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটছে বাংলাদেশে। যে কারণে প্রধান উপদেষ্টা পদে ইউনূসের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
মাঝে ইউনূস সহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে গুজবের ঝড় ওঠে। তাতে সরকারের ওপর দেশবাসীর মনে এমন অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয় যে, বিবৃতি দিয়ে ওই রটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বলতে হয় উপদেষ্টাদের। কিন্তু শেখ হাসিনার মতো এই উপদেষ্টাদের পালিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি ক্রমশ তৈরি হচ্ছে বলে বাংলাদেশে এখন জোর আলোচনা চলছে। ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে পদ্মাপারের দেশটি। আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য, চরম বেকারত্ব, ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই ক্ষোভে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
সব শাসকের মতো মুহাম্মদ ইউনূসও বলপ্রয়োগে সেই ক্ষোভের ব্যারিকেড ভাঙতে সচেষ্ট হচ্ছেন। জুলাই আন্দোলনে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তরা যখন তাঁর সরকারি বাসভবনের দুয়ারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তিনি তখন নিরাপত্তাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এমনকি যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখাতে বলছেন। তাঁর সরকার ইতিমধ্যে আওয়ামি লিগের কর্মসূচি আটকাতে মরিয়া সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে সংঘাতের মেঘ নতুন করে বাংলাদেশের আকাশে ঘন হচ্ছে।
যদিও জনরোষ প্রবল হয়ে উঠলে কোনও ব্যারিকেডেই যে আটকানো যায় না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার হাজার উদাহরণ ছড়িয়ে। হাসিনাকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করার টাটকা নজির হাতের সামনেই রয়েছে। তার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনে ইউনূসের আপত্তি সরকারের অন্তর্বিরোধকে তীব্র করছে। ঘরে-বাইরে প্রবল অসন্তোষের আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ শুরু হলে আরও একবার বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়বে সন্দেহ নেই।