- পরাগ মিত্র
‘জান পে ভি খেলেঙ্গে/ তেরে লিয়ে লে লেঙ্গে / সব সে দুশমনী’
‘মুভিজ’ যখন ‘ফিললিম’ বা ‘বই’ সেই মান্ধাতার আজও বন্ধুযাপনের অবিসংবাদী সিগনেচার টিউন। শুধু গান? ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিচারে ভারতের সর্বকালের টপার ‘শোলে’। প্রথমে একটিমাত্র ‘ফিল্মফেয়ার’ জোটা ‘শোলে’ই ফিল্মফেয়ারের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ‘অর্ধশতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের’ তাজ জয়ী। বাড়ন্ত সময়ের বর্তমানেও সাড়ে তিন ঘণ্টার এই ছবি চল্লিশ বছরে ডিজিটাইজড হয়, উনপঞ্চাশের ‘স্পেশাল স্ক্রিনিং’-এ টেকনো স্যাভি প্রজন্মের উচ্ছ্বাসে বিস্ময়াপ্লুত জাভেদ আখতার।
বদলা, গান, হাসি, কান্না… বলিউডের মশলা প্যাকেজ, শোলে’র আগেও ছিল, পরেও। তবুও হাজার কোটির ‘দঙ্গল’, ‘আরআরআরে’র বর্তমানেও শোলে শোলেই- ব্লকবাস্টারের একমেবাদ্বিতীয়ম মাইলস্টোন। শেখর কাপুর বলিউডকে ভাগ করেছেন ‘প্রি শোলে’ আর ‘পোস্ট শোলে’র যুগে। রিলিজের দশ বছর পরেও টানা দু’মাস হাউসফুলের মৌতাত অমলিন অলিম্পিক পিকচার্সের প্রাক্তন কর্মী সনৎ সরকারের। দেখাটা নয়, ইম্পরট্যান্ট ক’বার দেখেছে…
বিদেশি ছবির প্রভাব, কৃৎকৌশল, স্টিরিওফোনিক সাউন্ড, প্লট, মিউজিক, অভিনয়, স্টারকাস্টেই শোলে ব্লকবাস্টার? সব থাকলেও গুচ্ছের ছবি মুখ থুবড়ে পড়ে কেন? মঞ্চের অভিঘাত দর্শককে দৈনন্দিনের অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করানোর লক্ষ্যে জরুরি অবস্থায় উৎপল দত্ত ‘ম্যাকবেথ’ মঞ্চস্থ করতেন। শোলেও পঁচাত্তরের। ‘আংরেজোঁ কি জমানার’ জেলারের নাস্তানাবুদপনা দর্শক কি ‘রাষ্ট্রীয় দাপ’ বা ‘অতীত বিলাসীদের’ কমিক রিলিফে দেখে?
‘ইতনা সন্নাটা কিউ!’ মৌলভীর সঙ্গে ‘তিমিরের ছিন্ন শির তুলে নেওয়া’ শঙ্খ ঘোষের দূরত্ব কতটা? হাহাকারেও যুক্তির কথা বলা আসানসোলের ইমামের মধ্যে বর্তমান কি হাঙ্গলকে দেখে? আজও গোত্র ম্যাটার্স। ‘ঠাকুর’ নিছক পদবি নয়, শোণিতে লালিত জাত্যভিমানও। শুধু পোয়েটিক জাস্টিস নয়, বহমান সামন্ততান্ত্রিক বিশ্বাসের স্বার্থেই ঠাকুর গব্বরকে পায়ে পিষবে। নিঃস্বর চরাচরে নিভু লন্ঠনের আবহে সি শার্পের মাউথ অর্গান আবহমানের আর্তি। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সংস্কারের ক্লাস ডিভিশনেই কি বাসন্তী-বীরু আর রাধা-জয়ের পরিণতির ভিন্নতা! লভি মোক্ষ যে কোনও কৌশলে- সফল হলে নিকুম্ভিলায় লক্ষ্মণ, দ্বৈপায়নে ভীম, জলের ট্যাংকে বীরু- সবাই সিকন্দর। মুৎসুদ্দি শ্রেণির সুরমা ভুপালিরাই ভাবী বনস্পতি, জয়-বীরুও টাকা পাওয়ার প্রশ্ন নেই।
হেড কল অলওয়েজ উইনার জয়। জীবনকে ভালোবেসে মৃত্যুবরণ করে দণ্ডকারণ্য থেকে করোনার ত্রাণে…।
লেভিয়াথান ‘শোলে’র পরানভোমরা গব্বর। খৌফ ছেয়ে থাকে মহল্লায়, অফিস, রাজনীতি, সংসারে…। আত্মা অবিনাশী। যুগে যুগে সর্দার শাম্ভারা আসে নতুন পোশাকে। গব্বরের হাতকড়াতেই ‘দ্য এন্ড’। প্রশ্ন ওঠে না- এত পুলিশ কোথায় ছিল? পাবলিক জানে, এরপর আদালত… তারিখ… ভোটে জেতা… বায়োপিক… সুতরাং আপসেই শরণং ব্রজ।
ডরের ফেরিওয়ালার ‘যো ডর গয়া, সমঝো উও মর গয়া’ আয়রনিক্যাল হল প্রতিস্পর্ধার অনুরণনে। রামগড়বাসীও গব্বরের ডেরায় পৌঁছাল, দেশ দেখল এমারজেন্সির বিরুদ্ধে তর্জনী… কপিলের ১৭৫… চিপকো… নন্দীগ্রাম… রাতজাগা…
‘নেহি ইয়ার, গয়ি, পিকচার ফ্লপ হো গয়ি’ শশী কাপুরকে বলেছিলেন অমিতাভ। ঋণগ্রস্ত সিপ্পিদের দেশান্তরীর গুজব, ম্যাগাজিনে বিঘোষণা – ‘মৃত অঙ্গার’, রি-শুটের ভাবনার মধ্যেই জনতা-জনার্দনের ভালো লাগাতেই মিনার্ভার অদূরে ‘শোলে স্টপেজ’, ছবিও তুঙ্গিয়ান। সেদিনের ক্রিটিকদের মতোই আজকেও সেফোলজিস্টরা ব্যর্থ হয়। ক্যাথারসিস না সময়ের প্রতিফলন- শোলের ট্রাম্প কার্ড কী?