সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

নাড়ু হাতেই বিগ্রহে মিলিয়ে যান নাড়ুগোপাল

শেষ আপডেট:

  • পূর্বা সেনগুপ্ত

বর্ধমান জেলার বৈষ্ণব তীর্থ বলতে কাটোয়া, কালনা ও শ্রীখণ্ডের নাম মনের মধ্যে ভেসে ওঠে। আজ আমাদের আলোচনার কেন্দ্র বৈষ্ণবতীর্থ শ্রীপাঠ শ্রীখণ্ড। শ্রীখণ্ড বলতে আমার কাছে শুধু একটি বৈষ্ণব তীর্থ নয়। শ্রীখণ্ড আমার কাছে আরও অনেক কিছু, আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ছোট থেকে জানতাম, আমাদের দেশ পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে। স্বাধীনতা আন্দোলনে  যুক্ত  বিপ্লবী হওয়ার কারণে আমার ঠাকুমা ও ঠাকুরদাদা মেদিনীপুরের তমলুকে চলে আসেন। সেখানেই আমার বাবার জন্ম। বাবা কোনও দিনও পূর্ববঙ্গ দেখেননি, আমার জেঠু, পিসিদের কিছু স্মৃতি ছিল।

ফরিদপুরের মূল পরিবার থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে পরিবারের ইতিহাস আমার কাছে কিছুটা অস্পষ্ট, আমার যদিও বা আছে অন্য ভাইবোনদের ততটুকুও নেই।  মূলস্রোতের সঙ্গে  আমার পরিচয় হল আমার বাংলাদেশ যাওয়ার সুবাদে। ধীরে পরিবারের ইতিহাস আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল, যখন আমার জ্ঞাতি কাকা বা নতুন কাকা পবিত্র সেনগুপ্তের কাছাকাছি হলাম। নতুন কাকা দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। তিনি ‘উত্তরপুরুষ’ নামে দুটি খণ্ডের গ্রন্থে পূর্বপুরুষদের ভিটের বর্ণনা দিয়েছেন।

এতদিন আমি শুনেছি আমরা শাক্ত। সেই অনুযায়ী আমাদের পরিবারের আচার-আচরণ রীতিনীতি। কিন্তু মূলেও কি আমরা তাই-ই ছিলাম? কারণ আমাদের সাতপুরুষেরও বেশ আগে আমাদের বাসস্থান ছিল বর্ধমানের শ্রীখণ্ডে। যেখানে শ্রীচৈতন্যের পার্ষদ নরহরি সরকার বাস করতেন। বহুদিন ধরে শুনেছি, আমার পূর্বপুরুষ রাজবৈদ্য ছিলেন। কিন্তু এই তথ্যের প্রমাণস্বরূপ কিছু পাইনি। শোনা যায়, শ্রীখণ্ড অঞ্চলে একবার ধর্মীয় দাঙ্গা হয়। তার পরে কালিকাপ্রসাদ সেনগুপ্ত শ্রীখণ্ড ত্যাগ করে ফরিদপুরে চলে যান। তিনিই আমাদের বংশধারার প্রধান পুরুষ। কিন্তু শ্রীখণ্ডের ইতিহাসে কোনও দাঙ্গার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে কালিকাপ্রসাদের সময়কাল অনুযায়ী একেবারেই নয়।

তবে প্রকৃত ইতিহাসের গতি কী? আমরা এই প্রবন্ধে পরিবারের মধ্যে গুঞ্জরিত হওয়া ছিন্নভিন্ন কথার মালার সঙ্গে নরহরি সরকারের গৃহদেবতার ইতিহাস এবং শ্রীচৈতন্য পার্ষদরূপে তাঁর অবস্থানটিকে তুলে ধরতে চেষ্টা করব।

 গৃহদেবতার ইতিহাস যেন হঠাৎ দেখা কোনও জগৎ। আমরা গৃহদেবতার ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে যখনই কোনও গৃহের সদস্যকে জিজ্ঞাসা করেছি, তখনই হয় কিছু এলোমেলো তথ্য পেয়েছি, যা কিছুটা কল্পিত, কিছুটা সত্যরূপে ধরা দেয়। কারণ ইতিহাস রচনার ধারাটি আমাদের অজ্ঞাত। দ্বিতীয়ত, ‘আমরা খুব বেশি জানি’ – এই ধারণায় অন্যের কাছে নিজ গৃহদেবতার কাহিনী বর্ণনায় চূড়ান্ত অনীহা প্রকাশ করে থাকি! তারপর ‘তিনি আমাদের সব! তিনি খুব জাগ্রত! তিনি যেন কথা বলেন!’

এই সব আবেগতাড়িত বক্তব্য উঠে আসে। কিন্তু এই আবেগ কোনও ইতিহাসের অঙ্গ হতে পারে না। ভগিনী নিবেদিতা একবার  প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দীনেশচন্দ্র সেনকে বলেছিলেন, আমাদের কুলের ইতিহাসের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন হয়ে বিরাজ করছে আমাদের বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস। তাই সম্পূর্ণ জাতীয় ইতিহাস জানতে গেলে  বিভিন্ন বংশের ইতিহাস জানা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিবারের ইতিহাসের সঙ্গে জাতীয় ইতিহাসকে সংযুক্ত করার পদ্ধতি একজন গবেষকই জানেন। তাই তাঁর কাছে মন খুলে কথা বললে আখেরে পরিবারগুলিরই  লাভ। কারণ এর ফলে তাঁরা বিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব নিয়ে বিরাজ করবেন না, জাতীয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত হবেন নিবিড়ভাবে।

সমাজ হল, এমন এক অস্তিত্ব যা মানুষ তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু মানবমনের ধারাকে পরিচালিত করে সামাজিক প্রবণতা– এ তথ্য অস্বীকার করা সমাজবিজ্ঞানীর কাছে সম্ভব নয়। আবার দেখেছি অনেক সময় অনেকেই পারিবারিক ইতিহাস বলছেন বটে, কোনওমতেই বিগ্রহের ফোটো দেখাতে বা তুলতে দিতে রাজি নন। রাজ পরিবার বা জমিদারদের পূজিত বিগ্রহগুলিতে এই মানসিকতা দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণ যে দুর্মূল্য প্রাচীন গয়না তাঁদের অঙ্গে থাকে বা বিগ্রহটিই অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু নির্মিত। সেটি প্রকাশ করলে তা অসাধু মানুষের নজরে চলে আসার ভয় আছে। এইভাবে বিখ্যাত মূর্তির গা থেকে গয়না, কখনও বা স্বয়ং মূর্তিই অন্তর্হিত হয়েছেন বারবার।

এইভাবে চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় পরিবারের সদস্যদের ভীত করে। সেই কারণে তাঁরা ফোটো দিতে অস্বীকার করেন। অনেক গৃহদেবতার সঙ্গে থাকে দুষ্প্রাপ্য পুঁথি। সেগুলি দেখতে পাওয়াও সম্ভব হয় না সহজে।  এখানে দুটি দিক চিন্তনীয়, কোনও বিষয়ই চিরকালীন নয়। একদিন না একদিন তার ধ্বংস অনিবার্য! যদি তা গবেষকের দৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্যরূপে জগতে প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তার গৌরব কিন্তু চিরকালীন তথ্যে আবদ্ধ থাকবে। তবে এও সত্য এই জাতীয় সম্পদগুলিকে রক্ষার দিকে আমাদের সরকারিভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। এটি জানতে হবে, প্রাচীনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে নবীন। ইতিহাস তাই অমূল্য, গৃহদেবতার মহিমা কেবল গৃহে আবদ্ধ নয়, তা জগৎ পরিব্যাপ্ত এক অস্তিত্ব।  তাই আজ গৃহদেবতার অন্বেষণে আবার আমরা ফিরে যাব বর্ধমানের শ্রীপাট শ্রীখণ্ডে।

 বৈদ্যজাতি অধ্যুষিত শ্রীখণ্ডে নরহরি সরকারের (১৪৪৮-১৫৮২) জন্ম হয় এক বৈদ্য পরিবারেই। তখন পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ও ষোড়শ শতাব্দীর শুরু। নরহরি সরকার ছিলেন সংস্কৃত সাহিত্যে অত্যন্ত বুতপত্তিসম্পন্ন  ব্যক্তিত্ব। তাঁর রচিত ‘ভক্তিচন্দ্রিকা পাটল’  ‘কৃষ্ণভজনামৃত’,  ‘ভক্তমরিষ্টক’ ইত্যাদি গ্রন্থ বৈষ্ণব শাস্ত্রে উল্লেখযোগ্য সংযোজন।  নরহরি সামান্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। বলা হয় ব্রজের লীলায় যিনি মধুমতী নামে কৃষ্ণ সখী ছিলেন তিনিই গৌড় লীলায় নরহরি রূপ ধারণ করেছেন। কৃষ্ণ সখীর অবতরণ হয়েছে গৌড়ীয় দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। শ্রীপাট শ্রীখণ্ডে নরহরি সরকারের ভবনে তাঁর ভজন কুঠীর এখনও দেখা যায়। যার উপরে লেখা আছে ,

‘মধুমতী নামে সখী ছিল বৃন্দাবনে।

 নরহরি নাম হল গৌড় ভক্তগণে।।

যে দর্শন ‘গৌরাঙ্গ বাদ’ নামে পরিচিত নরহরি তারই ধারক ছিলেন। বৈষ্ণব শাস্ত্রে শ্রীচৈতন্যকে বলা হয়  ‘নাগর’ আর সকলে ‘নাগরী’। অর্থাৎ পুরুষ প্রেমাস্পদ আর সকলে তাঁর প্রেয়সী।  নরহরি সরকার এই  ‘নাগরবাদে’ বিশ্বাসী ছিলেন। চৈতন্য পরবর্তী যুগে শ্রীচৈতন্যলীলা মোটামুটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল, একটি নবদ্বীপের ভাব, অন্যটি  বৃন্দাবনের ভাব। নবদ্বীপ মূলত নরহরি সরকারের প্রদর্শিত ভাব অনুযায়ী পরিচালিত ছিল। সংস্কৃত সাহিত্যে অত্যন্ত বুতপত্তিসম্পন্ন নরহরি সরকার শুধু নিজে গ্রন্থ রচনা করেননি। তাঁর শিষ্য লোচন দাস এই শ্রীখণ্ডে বসেই   ‘শ্রীচৈতন্যমঙ্গল’ গ্রন্থ রচনা করে বিখ্যাত হন।

নরহরি সরকারের জন্ম ১৪৪৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ছিল নারায়ণদেব সরকার। তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মুকুন্দদেব সরকার ছিলেন গৌড় রাজ্যের পাঠান রাজার রাজবৈদ্য  আমরা জানি যে স্থানে ভগবান জন্মগ্রহণ করেন সেই স্থানকে বলা হয়  ‘শ্রীধাম’। আর যে স্থানে ভগবানের অবতারের পার্ষদদের জন্ম ও লীলা, সেই  স্থানটিকে ‘শ্রীপাট’ নামে চিহ্নিত করা হয়। নরহরি সরকারের জন্মস্থান ‘শ্রীপাট শ্রীখণ্ড’ কেবল তাঁর লীলাস্থান নয়। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের পাঁচজন পার্ষদের বা পঞ্চসখার লীলাস্থল রূপে চিহ্নিত ও বন্দিত। চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে,

‘খণ্ডবাসী মুকুন্দদাস শ্রীরঘুনন্দন।

নরহরি দাস, চিরঞ্জীব, সুলোচন’।।

এই সব মহাশাখা- চৈতন্য কৃপাধাম।

প্রেম-ফল-ফুল করে যাঁহা তাঁহা দান।। (চৈঃ চঃ , আদি , ১০/৭৮-৭৯)

আমরা নরহরি দাস বা অন্য পাঁচজনের সঙ্গে নদিয়ার গোরা রায়ের লীলা বর্ণনা করব না। আমরা সেই লীলাকে পাশে রেখে  নরহরি দাসের ভ্রাতা মুকুন্দদেবের পুত্র রঘুনন্দনের সঙ্গে গৃহদেবতা গোবিন্দের লীলাকে বেশি প্রাধান্য দেব। এ প্রসঙ্গে আমরা যে কাহিনীর বর্ণনা করব সেই কাহিনী বাংলার বহু গোপাল মন্দিরে, বহু স্থানে বহুভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু  প্রকৃত ঘটনাটি ঘটেছিল এই শ্রীপাট শ্রীখণ্ডে। মুকুন্দদেব ছিলেন স্বনামধন্য কবিরাজ। তিনি কবিরাজ রূপে এত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে দুরারোগ্য রোগীরা তাঁর কাছে চিকিৎসা করতে উপস্থিত হত। প্রতিদিন গৃহদেবতা গোপীনাথের পুজো সেবা করে চিকিত্সা করতে বসতেন। শোনা যায় একদিন তিনি স্নান সমাপনে গোপীনাথের পুজোর জন্য তৈরি হচ্ছেন এমন সময় পার্শ্ববর্তী কোনও গ্রাম থেকে একটি ছেলে দৌড়াতে দৌড়াতে তার কাছে উপস্থিত হল,  ‘কবিরাজ মশাই, আমার বাবা খুব অসুস্থ, মরণাপন্ন অবস্থা। আপনি এক্ষুনি চলুন।’ মুকুন্দদেব পুজো করেই রোগী দেখতে যাবেন এমন কথা বললেও সেই ছেলেটি জানালেন ক্ষণমাত্র দেরি হলে তাঁর পিতাকে বাঁচানো আর সম্ভব হবে না। একথা শুনে তিনি স্ত্রীকে কিছু নাড়ু বা ভিন্নমতে দুধের ছাঁচি দিয়ে গোপীনাথের সেবা দিতে বললেন আর জানালেন সেদিন যেন পুত্র রঘুনাথ বা রঘুনন্দন বিগ্রহের সেবাদান করে। সেবাতে যেন ত্রুটি না হয়। যে রঘুনাথ চৈতন্য পার্ষদ,  মাত্র ছয় বছর বয়স যখন, তখন চৈতন্য পার্ষদ অভিরাম গোস্বামী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে শ্রীখণ্ডে উপস্থিত হন! তিনি কি সামান্যভাবে সেবা দেবেন? বালক তো কী হয়েছে, মায়ের দেওয়া নাড়ু নিয়ে তিনি গোপীনাথের সম্মুখে উপস্থিত হলেন রঘুনন্দন। তারপর  বিগ্রহের সম্মুখে নাড়ু রেখে গোপীনাথকে অনুরোধ করতে শুরু করলেন, ‘এস ঠাকুর, মা নাড়ু করে দিয়েছেন তোমার জন্য। তুমি খেয়ে নাও।’

সেই ছোট্ট গোপীনাথের দুষ্টু মুখের মূর্তি। তিনি মূর্তির মধ্যে থেকেই মনে মনে হাসেন। আর এদিকে রঘুনন্দনও প্রাণপণে অনুরোধ করে চলেছেন। তিনিও ছোট্ট বালক।  একদম স্থির জানে পিতা প্রতিদিন গোপীনাথকে যা প্রদান করেন গোপীনাথ দেহ ধারণ করে তা গ্রহণ করেন। তাই  ডেকে চলেছেন, ‘এস ঠাকুর! খেয়ে যাও!’ কিন্তু মূর্তি স্থির। অনেক অনুরোধের পরও যখন মূর্তি এতটুকু নড়েচড়ে না তখন হাতের কাছে দরজায় খিল দেওয়ার হুড়কো ছিল, সেটাকেই তুলে নিলেন রঘুনন্দন। তখন স্বয়ং গোপীনাথ বিগ্রহের মধ্য থেকে বেরিয়ে এলেন। এবার জ্যান্ত গোপীনাথ ভালো করে নাড়ু খেয়ে, দু’একটা রঘুনন্দনের মুখে তুলে দিয়ে আবার দিব্য বিগ্রহে সেঁধিয়ে গেলেন।

এদিকে মুকুন্দদেব রোগী দেখে ঘরে ফিরলেন। সেদিন পুজো দিতে অক্ষম হয়েছেন, তাই বিগ্রহের প্রসাদ গ্রহণ করে দিনের উপবাস ভঙ্গ করবেন। কিন্তু রঘুনন্দনকে ‘প্রসাদ কই’ জিজ্ঞাসা করাতে  উত্তর আসে,  ‘কেন? গোপীনাথ সবটা খেয়েছেন যে! আমাকেও দিয়েছেন দু’একটা। আমিও তাঁর মুখে তুলে দিয়েছি। ভালো করে সেবা দিয়েছি!’ মুকুন্দদেব আর তাঁর স্ত্রী দুজনেই অবাক বিস্ময়ে পরস্পর পরস্পরের দিকে দৃষ্টিপাত করেন! এ কী বলে রঘুনন্দন? বোধহয় নিজেই প্রসাদের সবটুকু খেয়ে নিয়েছে! যত হোক বালক তো! সেদিন আর কিছুই বলেন না মুকুন্দদেব! মনের মধ্যে কেমন যেন সন্দেহ হয়! রঘুনন্দন যেভাবে বর্ণনা দিচ্ছে তাতে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলা যাচ্ছে না! কিন্তু যা বলছে তা কি সম্ভব? সেইদিন কেটে যায়। পরদিন সকালে উঠে মুকুন্দদেব স্ত্রীকে বলেন, ‘আজও  রঘু বিগ্রহের সেবা দিক! তুমি সব ব্যবস্থা করে দিও’। মুকুন্দদেবের কথামতো সব ব্যবস্থা হল। রঘুনন্দন  মায়ের দেওয়া নাড়ু নিয়ে মন্দিরে সেবা দিতে উপস্থিত হলেন।  পুজো, নিবেদন সম্পন্ন করে আগের দিনের মতো গোপীনাথকে ডাকেন রঘুনন্দন, ‘গোপীনাথ, আজও আমি তোমায় সেবা দিতে এসেছি! তুমি এসে খেয়ে যাও’।

রঘুনন্দনের ডাকে বিগ্রহ থেকে জীবন্ত অস্তিত্ব নিয়ে দৃশ্যমান হলেন নাড়ুগোপাল! এবার চলল নাড়ু খাওয়া,  একবার দেবতা নিজে খান, ক্ষণমুহূর্ত পরে রঘুনন্দনের মুখে তুলে দেন। দুই সরল শিশুর মধ্যে এই খেলা জমে ওঠে। কিন্তু  দরজা ফাঁক করে আজ পিতা মুকুন্দদেব এই লীলা প্রত্যক্ষ করছেন তার আভাস রঘুনন্দন বিন্দুমাত্র পাননি। যতক্ষণ মুকুন্দদেব দিব্যদৃশ্য সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গর্ভগৃহের মধ্যে পড়ে না যান ততক্ষণ  দিব্যলীলা চলতে থাকে। যেই মুকুন্দদেবের অস্তিত্ব সম্বন্ধে টের পেয়ে যান গোপীনাথ, তখনই হাতে অর্ধেক নাড়ু নিয়েই বিগ্রহের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হন। সেই থেকে গোপীনাথ হয়ে ওঠেন নাড়ুগোপাল গোপীনাথ।  যেহেতু এই বিগ্রহ শ্রীচৈতন্য বা গৌড়চন্দ্রের লীলা আস্বাদন করেছেন তাই তিনি ‘গৌড়-গোপীনাথ’ নামে পরিচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...