ছবি: সংগৃহীত
যা করে দেখালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, এরপর কোনও অরাজনৈতিক বাঙালি ভদ্রলোক রাজনীতিতে এলে তাঁর প্রতি আর বিন্দুমাত্র ভরসা পাবে না বাঙালি। যতদিন অভিজিৎ রাজনীতিতে আসেননি, ততদিন একটা ভরসা মনে মনে কাজ করত আমাদের। একজন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসে রাজনীতির চিত্রপটই পালটে দেবেন রাতারাতি।
এখনকার বঙ্গীয় রাজনীতি একেবারে অসহ্য করে তুলেছে সব দল। সব পার্টি সমান। নতুন কিছু চাই। আনকোরা নতুন মুখ, যাঁর কথা বা কাজে শ্রদ্ধা জেগে উঠবে।
সুপারহিট সিনেমায় যা করে দেখিয়েছেন দক্ষিণী তারকা অর্জুন, অনিল কাপুর বা রঞ্জিত মল্লিক। আমরা বাস্তবেই না হয় একটা সিনেমা দেখব, মুধালভন, নায়ক : দ্য রিয়েল হিরো বা মুখ্যমন্ত্রীর মতো। সাধারণ হয়েও যিনি অসাধারণ। টিপিক্যাল রাজনীতির বাইরে আমরা ভদ্রলোক দেখব। অকারণ ভুরু কুঁচকে অশ্রাব্য গালাগাল দেবেন না যিনি।
অভিজিৎ অশালীন কথার বিষে সেই স্বপ্নের ফুলটিকে শেষ করে দিলেন একেবারে। ভুল লিখলাম। একটা নয়, এককথায় বহু স্বপ্নের ফুলের অপমৃত্যু। ভবিষ্যতের ভদ্রলোকদের রাজনীতিতে প্রবেশের পথটিও একই সঙ্গে পাথুরে ও কর্দমাক্ত করে দিলেন। লোকে আবার বলবে, দূর মশাই, রাজনীতিটা আর ভদ্রলোকদের জন্য নয়। ওখানে গেলে, ওই মঞ্চে দাঁড়ালে পাড়ার কালু মস্তানের ভাষায় কথা বলে সবাই। একজন প্রাক্তন বিচারপতির রাজনীতিতে এসে ভাষার সমাহার দেখলেন তো!
অরাজনৈতিক ভদ্রলোকদের মতো সৎ এবং নিরপেক্ষ বিচারপতিদেরও বড় ক্ষতি করে দিয়ে গেলেন অভিজিৎ। এসব ক্ষতিপূরণ হতে সময় লাগবে। ভদ্রলোকরা এমনিতেই রাজনীতিতে আসেন না। আরও আসবেন না। সামান্য কিছু রুচিবান, সংস্কৃতিবান নেতা বাংলাতেও রয়েছেন। তাঁরাও আজ ভাববেন, অভিজিতের মতো বিচারপতি যখন বলেছেন, তখন এমন রুচিহীন বলাই আদর্শ পথ। এমন না বললে রাজনীতিতে ব্যর্থ ধরা হবে।
এ তো সেই এক কার্বন কপি– রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে যা দেখে থাকি। ধরাকে সরা জ্ঞান করা। যা মুখে আসে, বলে যাওয়া। বাঙালি সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতেরও অতীব ক্ষতি করে দিয়ে গেলেন অভিজিৎ। ওই একই ক্ষতি করে দিলেন সন্ন্যাসী কার্তিকও। সরকারে থেকে সিপিএম এবং তৃণমূলের সিন্ডিকেটরাজ মিলেও এত বড় ক্ষতি করেছে কি না সন্দেহ। দুই পার্টির সিন্ডিকেটের ক্ষতি করার রীতিটা সবাই জানে। জানত, এরা অশিক্ষিত। দাদাগিরি ছাড়া কিছু জানে না। কোনও প্রত্যাশা ছিল না এদের ওপর। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থাকা অভিজিৎদের ওপর প্রত্যাশাটা ছিল অনেক। ওখান থেকে দাদাগিরির ভূত এভাবে তাড়া করবে ভাবেনি কেউ। অভিজিতের আগে তাঁর চেয়েও সাড়া ফেলেছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, চাঞ্চল্যকর রায় দিয়ে। সমাজ ব্যবস্থায় যা বদল ঘটিয়েছে বারবার। সঞ্জীব কিন্তু মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন চিরদিন।
অভিধানে অভিজিৎ মানেটাই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে, যখন তিনি এক বিশিষ্ট মহিলার দাম কত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গ্রামীণ রাজনীতিতে এসব কথা শোনা যায়। যা আবার লিখতে যাওয়াও অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে। তাঁর আগের সব ভালো কাজ তখন অর্থহীন হয়ে যায়। যেতে বাধ্য। তাঁর এখনকার সংলাপের সঙ্গে বিচারপতি থাকাকালীন পর্যবেক্ষণগুলো মেলাতে বসলে কোনও না কোনও সূত্র আবিষ্কার করবে লোকে। তাতে আগের ভগবানকে অন্য কিছু মনে হবে। মনে পড়বে বিপরীতার্থক কিছু শব্দ। একজন লোক কী করে তাঁর বহু কষ্টে সোপার্জিত ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেন, অভিজিৎ বাংলায় গত ২৫ বছরে সেরা উদাহরণ। আত্মঘাতী গোলে ওস্তাদ।
মেদিনীপুরের সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে শুনলাম, অভিজিতের হামবড়াই ভাবের কিছু গল্প। একে তো তিনি নামী দু’-একজন সাংবাদিক বা মিডিয়া হাউস ছাড়া পাত্তা দেন না কাউকে। মানুষকে মানুষ জ্ঞান করেন না। নেতারা এত উদ্ধত হলে মুশকিল। তা হলে এতদিন আদালতে কোন মানবিক মুখ দেখতাম আমরা? সব কি ছিল প্রচার পাওয়ার জন্য, বিজেপির মহারথী জেটলি যা বলতে চেয়েছিলেন এক যুগ আগে? অভিজিৎ যদি তমলুকে জেতেন, জিতবেন ওখানে বিজেপির জনপ্রিয়তা এবং শুভেন্দু অধিকারীর শক্তিশালী সংগঠনের জন্য। এই কথাটা তাঁর মনে রাখা খুব দরকার। নির্বাচনি বক্তৃতায় যে সব অবিশ্বাস্য ‘মণিমুক্তো’ ছড়াচ্ছেন, তাতে তাঁর কিছু ভোট কমলে অবাক হব না। ওই মণিমুক্তো স্ববিরোধিতাপূর্ণ। বিচারপতি থাকার সময় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছিলেন কয়েকবার। তারপর আবার দরদাম, ফেসিয়ালের ভাষণে চলে গেলেন। স্ববিরোধিতার বদলে আরও কঠিন কোনও শব্দ দরকার তাঁকে ব্যাখ্যা করতে।
শুনলাম, ক’দিন আগে হলদিয়ার দুর্গাচকে স্টেডিয়ামের কাছে পথসভায় শুভেন্দুর সঙ্গে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন অভিজিৎ। ভরা সভা। ভালো ভিড়। ওখান থেকে বাগনান যাবেন বলে শুভেন্দু বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর বক্তৃতা দিতে ওঠেন অভিজিৎ। তখন সামনে খালি চেয়ার। শ্রোতা প্রায় নেই-ই। এ থেকে কী সিদ্ধান্তে আসা যায়? অভিজিৎ যদি ভাবেন, ভোট আসছে তাঁর নামে, তাঁকে দেখে– সেই ভাবনাটা ভুল। তাঁকে নির্বাচনি নদী পেরোতে হবে শুভেন্দু এবং মোদির কাঁধে চড়ে। অথচ তিনি সেই ছোটবেলার বহু পরিচিত ‘মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী’ কবিতা ভুলে গিয়েছেন। এখনকার ভোটে দলই সব। লোকে প্রার্থী দেখে ভোট কম দেয়। অভিজিতের বিবর্তন দেখার পর প্রার্থী দেখে ভোট দেওয়ার অভ্যাস তো আরও দ্রুত মুছে যাবে বাংলা থেকে।
প্রায় বারো বছর আগে সংসদে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির একটা ভাষণ এখন ভাইরাল। প্রাক্তন আইনমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘অধিকাংশ বিচারপতি অবসরের পর পদ চান। আমরা না করলে ওঁরাই একটা পদ তৈরি করে নেন। অবসরের পর পদ পাওয়ার ইচ্ছে তাঁদের অবসরের আগের সিদ্ধান্তকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে আমাদের বিচার ব্যবস্থার ক্ষতিই হয়। দু’রকম বিচারপতি রয়েছেন। এক দল আইন জানে। এক দল আইনমন্ত্রীকে জানে। আমাদের দেশেই শুধু বিচারপতিরা বিচারপতিদের নিয়োগ করেন।’ ওই সময় নীতিন গড়করি বিজেপি সভাপতি। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘বিচারপতিরা অবসর নেওয়ার পর অন্তত দু’বছরের অপেক্ষা করা দরকার। তারপর তাঁদের ট্রাইবিউনালে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’ ঠেঁাটকাটা অভিজাত জেটলি আজ বেঁচে থাকলে অভিজিৎ সম্পর্কে কী বলতেন, কল্পনা করতে পারি।
রবীন্দ্রনাথের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পে ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিয়াছিল, সে মরে নাই।’ অভিজিৎ ভোটে দাঁড়িয়ে বহু উলটোপালটা বকে প্রমাণ করে দিলেন, তিনি আদৌ ভগবান ছিলেন না। আমরা তো সবাই ভীরু, সাহস দেখাতে পারি না। কারও মধ্যে সেই সাহস খুঁজতে যাই ভরসা পাব বলে। আমরা ভুল লোককে আমাদের ভিতরের আত্মার, সমাজের আদর্শ প্রতিবিম্ব ভেবেছিলাম।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ দিল্লিতে মমতার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। উনি দিল্লিতে না থাকায় কথা…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ সোমবার সকালে কেরলের সাংসদ কে জে সুরেশকে স্পিকার পদের জন্য প্রার্থী…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ গোলের বন্যা বয়ে গেল কলকাতার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে। উয়াড়ি অ্যাথলেটিক ক্লাবকে…
দুর্গাপুরঃ জাতীয় সড়ক এখন যেন মৃত্যু ফাঁদ। নিত্যদিন এই সড়কে দুর্ঘটনা লেগেই আছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলনেতা (Opposition leader) হচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি (Rahul…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বিরিয়ানিতে নেই কেন চিকেন লেগপিস, তা নিয়েই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গেল…
This website uses cookies.