হঠাৎ রাষ্ট্রপতি শাসনের জল্পনা বঙ্গে। যে জল্পনার কোনও বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের খোঁজ মেলেনি এখনও। শুধু হাওয়ায় ভাসছে খবর। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের এই মর্মে চিঠি নাকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পৌঁছেছে। সেই চিঠির প্রতিলিপি নাকি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো হয়েছে। সবই নাকি! খবরের সত্যতা নিশ্চিত নয়। বর্তমান রাজ্যপাল তাঁর সমস্ত তৎপরতা ও মনোভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে অভ্যস্ত।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ তিনি সত্যি করেছেন কি না, তা নিয়ে তাঁর মুখে টুঁ শব্দ নেই। না সাংবাদিকদের কাছে, না বিবৃতিতে, না সোশ্যাল মিডিয়ায়। রাজভবন সূত্রে এরকম কোনও খবর নিশ্চিত করা যায়নি। রাজ্যপালের এ ধরনের সুপারিশ পাওয়ার খবর স্বীকার করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কোনও বিবৃতি দেয়নি বা মন্ত্রকের কোনও কর্তার মুখে আভাস মেলেনি। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি কয়েকজন বিজেপি নেতা মাঝেমধ্যে করে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি শাসন না হলেও বাংলায় সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ বলবৎ করার দাবি কখনো-কখনো শোনা যায়। আরজি কর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমনকি রাজ্য সরকারকে বাঁচিয়ে রেখে কিছু কিছু দপ্তরকে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় আনার দাবিও শোনা গিয়েছে। অথচ হাওয়ায় যখন রাজ্যপালের রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশের খবর ভেসে বেড়াচ্ছে, তখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ দূরে থাক, মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন বিজেপি নেতারা।
জল্পনা যেটুকু হচ্ছে, তার একমাত্র সূত্র তৃণমূল। দলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় প্রথম সান্ধ্য সংস্করণে ও পরেরদিন প্রভাতি সংস্করণের প্রথম পাতায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করে সিভি আনন্দ বোসের চিঠি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জমা পড়ে গিয়েছে। রাজ্যপালকে দিয়ে এই চিঠি লেখানোর নেপথ্যে বিজেপি আছে বলে ওই মুখপত্রের খবরে কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে।
যে খবরে দলের নেতা কুণাল ঘোষের বিবৃতি হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘রাজ্যপাল বিজেপির লোক। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর রয়েছে, রাজ্যপালের ওপরে প্রবল চাপ তৈরি করা হচ্ছে।’ এরপরই কুণালের বয়ানে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘এটা সত্যি না মিথ্যে রাজ্যপাল বলুন।’ তৃণমূলের মুখপত্রে মণিপুরে জাতিদাঙ্গাজনিত কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হলেও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি না করায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকারকে অগণতান্ত্রিকভাবে ফেলে দেওয়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করানোর ‘চক্রান্ত’ হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। দুয়ে দুয়ে চার করানোর প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের তরফে। দলের নেতা কুণাল ঘোষ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রাজ্যপালের সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সাক্ষাতের প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘রহস্যময় বৈঠক। নজর থাকবে। সত্য জানার চেষ্টা চলবে।’ তৃণমূলের পক্ষ থেকে এত অভিযোগ করা হলেও বিজেপি কিন্তু রহস্যজনকভাবে এখনও একেবারে চুপ।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, খবরটি যদি সত্যি হয়, তাহলে কি বিজেপি বা রাজ্যপাল বা কেন্দ্র নীরবে রাজ্যে ক্ষমতার পাশা উলটে দেওয়ার চেষ্টা করছে? ধন্দ কিছু থেকেই যায়। যে রাষ্ট্রপতি শাসন বিজেপির মুখে পরিচিত দাবি, তা নিয়ে ঢাকঢাক-গুড়গুড় করবে কেন তারা? সুপারিশ করে থাকলে রাজ্যপালই বা চুপ থাকবেন কেন?
সেই সূত্রে দ্বিতীয় প্রশ্ন আসে, তাহলে কি অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক কোনও মহল এই জল্পনাটি ছড়িয়ে দিচ্ছে? রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে বিজেপি ছাড়া আরও কোনও মহলের কি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে? এই দুই প্রশ্নের জবাবে লুকিয়ে আছে আসল সত্যটি। তা জানতে হয়তো আরেকটু অপেক্ষা দরকার।