প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা ভোটের পর্ব আজ চুকে যাবে। এতক্ষণে সবাই জেনে গিয়েছেন হাওয়া কোনদিকে, কে এবং কারা দখল করছে দিল্লির গদি। কে কত ভোট পেতে চলেছে জানা গিয়েছে তাও। গোড়ায় ওপিনিয়ন পোল, অন্তিমে এগজিট পোল নিয়ে বিস্তর গরম হয়েছে বাজার। মাইকে, বক্তৃতায় কান ঝালাপালা। এত লম্বা ভোটের কীর্তন আগে কখনও হয়নি। এতদিন ধরে ভোটওয়ালাদের গলার শির ফোলানো বাণী শুনেছি আমরা।
আজ নিছক ভোট নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। আসুন, বরং এবারের ভোটে নেতা-নেত্রীদের মুখনিঃসৃত কথামালা নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। ভোটের বাজারে নেতারা কী বলছেন তার তাল হুঁশ থাকে না অনেক সময়। হয়তো পরে তা শুনে লজ্জায় জিভ কাটেন তাঁরা। তাতে কী, তারা ভদ্রলোকের গণ্ডি ছাপিয়ে চলে যান যেখানে সেখানে কান চেপে ধরতে হয়। কুকথায় খ্যাতিমান বাহুবলী নেতাদের কেউ কেউ এখন জেলে। তাই এবারের ভোটে চড়াম চড়াম, গুড় বাতাসা কিংবা পথে উন্নয়নের দাঁড়িয়ে থাকা নেই বটে, তবে তা শতগুণে পুষিয়ে দিয়েছেন বিজেপির নেতারা। মেরে সিধে করে দেব, হাফ প্যান্ট পরিয়ে দেব গোছের হুমকি দেওয়া গেরুয়া শিবিরের বীরপুঙ্গব এবার মুখ্যমন্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গাল পেড়ে নির্বাচন কমিশনের শাস্তি পেয়েছেন। তাতেও তিনি তিলমাত্র বিচলিত নন। তাঁর গুন্ডাদের ভাষায় শাসানি চলছেই।
এসবের মধ্যে এবার খোদ প্রধান সেবকের ভাষণ পুরো দেশকে স্তম্ভিত করেছে। তিনি যে ভাষায় মুসলিমদের আক্রমণ করেছেন তা এককথায় নজিরবিহীন। গোড়ার দিকে উন্নয়ন, বিকশিত ভারত গোছের ভালো ভালো কথা বললেও ভোট যত গড়িয়েছে ততই সুর বদলে তা সাম্প্রদায়িক হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে কোনও আগল ছিল না। কখনও বলেছেন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে যাবে। কখনও বলেছেন মঙ্গলসূত্র, মোষ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেওয়া হবে। কখনও বা দলিতদের সম্পত্তি কেড়ে মুসলিমদের দিয়ে দেওয়া হবে বলে হিন্দুদের ভয় পাইয়ে দিয়েছেন। যদিও কংগ্রেসের ইস্তাহারে এমন কোনও কথা কেউ খুঁজে পাবে না। বাবা-মা’র আট সন্তানের একজন আমাদের প্রধান সেবক ‘ওদের’ গন্ডায় গন্ডায় সন্তান উৎপাদন নিয়ে তাঁদের বস্তাপচা তত্ত্ব আউড়ে গিয়েছেন। শেষমেশ বিরোধীরা মুসলিমদের জন্য মুজরা করছে বলেও গাল পেড়েছন। রামনবমীতে মাছমাংস খাওয়া নিয়েও প্রচার করেছেন।
তৃণমূলের বড়-ছোট নেতারাও কম যাননি। এক বিধায়কও পরিষ্কার সাম্প্রদায়িক প্রচার করে নির্বাচন কমিশনের সাজা পেয়েছেন। তবে বাংলার ভোটে সরাসরি এবং খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক প্রচার হয় না বহুদিন ধরেই। কারণ, হলেও তাতে বিশেষ কাজ হয় না। এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক প্রচার এসেছে তোষণকে ঘিরে। বিজেপি খোলাখুলি এই তোষণকে ব্যবহার করেছে সরকারি দলের বিরুদ্ধে। তারই সঙ্গে অনুপ্রবেশ, হাজার হাজার মুসলমান, রোহিঙ্গার এদেশে ঢুকে জমি-চাকরি কেড়ে নেওয়ার প্রচারে ক্রমেই জোর বেড়েছে। ফলে খোলাখুলি মেরুকরণ তাদের প্রচারে বড় জায়গাজুড়ে বসেছে।
কোনও সন্দেহ নেই এবারের ভোটে রাম মন্দিরের হাওয়ায় সব ভাসিয়ে নেওয়া যাবে বলে ভেবে রেখেছিল পদ্ম শিবির। সেইজন্যই হিসেব কষে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে কাজ শেষ হওয়ার ঢের আগেই রামলালার ভব্য মন্দির মহাসমারোহে উদ্বোধন করে রেখেছিল তারা। কিন্তু দেখা গেল, রাম মন্দিরের কোনও ঝড় দূরস্থান, মৃদু হাওয়াও কোথাও নেই। বরং হিন্দি বলয়ে বেকারি, অগ্নিবীর, কৃষক অসন্তোষ ইস্যু হিসেবে উঠে আসছে সামনে। তখনই তড়িঘড়ি সাম্প্রদায়িক অস্ত্রে শান দেওয়া শুরু করেছে পদ্ম শিবির।
এখানে দুর্নীতি ছাড়াও বড় ইস্যু ছিল সন্দেশখালি। বিজেপির ছোট-বড় সব নেতার বক্তৃতায় বড় জায়গাজুড়ে ছিল সন্দেশখালি। প্রাণপণে তা নস্যাৎ করতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তৃণমূলকে। তবে একটা কথা, প্রচারে কান দিয়ে মনে হয়েছে এ যেন রাজ্যের ভোট। দিল্লির ভোট নয়। যেন দু’বছর পরের বিধানসভার ভোটের একটা রিহার্সাল হয়ে গেল। বাড়তি বলতে বিজেপি হটাও আর নতুন সরকার। তবে যেহেতু ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল আছে কি নেই তারা নিজেরাও জানে না তাই তাদের প্রচারে জোর ছিল রাজ্যের দিকেই। জোটে থাকলে বরং বলা যেত দিল্লির সরকারে গিয়ে তৃণমূল কী কী করবে সেকথা। সিএএ নাকচ করতে কী করবে বলা যেত তাও। তার উপায় ছিল না।
সে যাই হোক, ভোটের ভাষণের কথা খবরের ঘনঘটায় হারিয়ে যাবে ক’দিন পরেই। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার যে বিষ ছড়ানো হল তা রয়ে যাবে। ভয়টা সেখানেই।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) সঙ্গে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ…
নকশালবাড়ি: নদীর চর দখলে বাধা দেওয়ায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পার্সোনাল সিকিউরিটি অফিসার (পিএসও) পরিচয় দিয়ে…
গৌরহরি দাস, কোচবিহার: বাণেশ্বর নয়! একটি বড় কচ্ছপ মরে ভেসে উঠল কোচবিহার (Coochbehar) শহরের ঐতিহ্যবাহী…
নয়াদিল্লি: ‘আমাদের সরকার আরও দু’দশক ক্ষমতায় থাকবে’, বুধবার রাজ্যসভায় এমনই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।…
শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: মোরাঘাট চা বাগানের (Moraghat Tea Garden) গিরগিটিয়া লাইন থেকে একেবারে মুম্বইয়ের ভাবা…
This website uses cookies.