মাঝে মাঝে শিরার ভিতরে বাঁধানো ঘাট থেকে নতুন করে কুড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করে হারিয়ে যাওয়া বসতবাড়ির যাবতীয় স্মৃতির ঝিনুক। যেখান থেকে সুনিবিড় এক আম বাগানের ছবি ফুটে ওঠে প্রথমেই। গ্রামে ঝড় এলে সেই আম বাগানে ছুটে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আম কুড়োনোর প্রতিযোগিতা, বৃষ্টিতে ভিজে আম খোঁজার আনন্দ সেইসব চির রঙিন ঐশ্বরিক স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায় অচিরেই। কিন্তু যে দিনগুলো গিয়েছে তা কি আর ফিরে পাওয়া যায়? তবুও নিভে যাওয়া স্মৃতির মৌন উৎসব শেষ হতে চায় না যেন সহজেই।
আষাঢ় মাস আসতে দিন সাতেক বাকি। খোলানের পুরোনো আম গাছটিতে আম পেকে হলুদ আর রসালো। এমন সময় কালবৈশাখীর দমকা হাওয়া এলে মন ছুটে যায় ছেলেবেলার স্মৃতিকথায়। আহ, এরকম দিনে গোটা পাড়ার ছেলেরা মিলে ছুটে যেতাম হাজরা বুড়ির আম বাগানে। বৃষ্টিতে ভিজে কুড়িয়ে আনতাম ঝুড়িভর্তি আম। সেই পাকা আম আঁটি সহ চুষে খাওয়ার স্বাদ এখনও জিভে লেগে আছে। কেউ লংকা গুঁড়ো ও লবণ মিশিয়ে কাঁচা আমগুলো খেতে পছন্দ করত। কেউ বা সেই আমের আচার তৈরি করে রাখত। ইত্যাদি স্মৃতি ঝরে গিয়েছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো। আজ আম বাগানের অস্তিত্ব বিরল। যদিও কোথাও আছে সেখানে আম কুড়ড়োনোর দৃশ্য নিদারুণ প্রাচীন।
শুধু কি আম কুড়োনোর স্মৃতি নাকি? মনে পড়ে যায় এরকম আরও কত মরশুমি ফল কুড়োনোর বিচিত্র ধুম। কখনও ছুটে গিয়েছি পাশের বাড়িতে বিশালাকার লিচু গাছটির লিচু কুড়োতে, কখনও বা পাশের পাড়ার এক বাড়িতে গোলাপজাম কুড়োতে, ছুটে গিয়েছি এক কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে ডাবরিবাড়ির জামতলায় জাম কুড়োতেও। একই অভিজ্ঞতা কামরাঙা থেকে তেঁতুল কিংবা জলপাই কুড়োনোর পদাবলিতেও।
আজকের দিনে সদ্য বাড়তে থাকা প্রজন্মের কাছে সেই স্মৃতিধন্য কথাদের আয়োজন বড়ই বেমানান। বরং তাদের মনে শুধুই গুনগুন সব আধুনিক আনন্দ ও উল্লাস। তারা আজকের সমাজের যান্ত্রিকতার অন্তর্জালে ঘিরে ধরা নীলবর্ণ থেকে চোখ ফেরাবে কী করে সেই প্রশ্ন বজ্রপাতের মতো ভয়ানক। খোলা মাঠে চু-কিতকিত, গোল্লাছুট, হাডুডু, ভলিবল, ক্রিকেট ও ফুটবল কিংবা সকলের পছন্দের লুকোচুরি এখন ক’জন খেলে? কোথায় খেলে? দুই দশক আগের সেই খেলাধুলোময় ছেলেবেলাটি আজ যেন কোত্থাও নেই। অথচ প্রতিযোগিতা আছে যান্ত্রিক হওয়ার।
কেরোসিন ঢেলে হ্যারিকেনের হলুদ আলো অথবা কুপির লালচে আলোয় পড়াশোনার ছবিটি এলইডি লাইটের আলোয় ছেয়ে থাকা অন্ধকার জীবনে যে কতটা আলো ছড়িয়েছিল একদা, তা নিঃসঙ্গ চাঁদটির জ্যোৎস্নাময় রাত ছাড়া আর কেউই মনে রাখেনি। ঝিরি হাওয়া টেনে বাঁশঝাড়ের পাতাদের নাচ কেউ দেখে না আর। ঠাকুমার ঝুলির গল্পগুলো ঠাকুমার কাছেই অসার। জোলা–জুলির কেচ্ছা কাহিনী পরিযায়ী পাখিদের মতোই নিখোঁজ আজ। ফ্যান–কুলার এসিতে হারিয়ে গিয়েছে গরমের হাতপাখাটি। ছেলেবেলাটি যেন মগ্ন শুধু শর্টস–রিলস–গেম’এ।
এইসব স্মৃতির ব্যথা মনে লেগে থাকবে আজীবন। কিন্তু যা ছিল, তা আমাদেরই ছিল। এই ভাবনায় বিরহ কমে আসে কিছু।
(লেখক দিনহাটার নয়ারহাটের বাসিন্দা)
নকশালবাড়ি: উপস্বাস্থকেন্দ্রের বেহাল দশায় ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের। সাপের ভয়ে রোগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না। এলাকার একমাত্র…
শিলিগুড়ি: সম্প্রতি সরকারি জমি জবরদখল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তার জের। গ্রেপ্তার হলেন শিলিগুড়ির…
শিলিগুড়ি: সেবক রোডের পাঞ্জাবিপাড়ার শিব মন্দির মোড়ে এসে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বাইকচালক অসিত রায়।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ভাগ্যদ্বয় হল সায়ন্তিকা ও রায়াতের। অবশেষে বিধায়ক হিসেবে…
শিলিগুড়ি: বড়সড়ো ডাকাতির ছক (Robbery attempt)! ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার (Arrest) করল প্রধাননগর থানার পুলিশ…
গৌরহরি দাস, কোচবিহার: কোচবিহার থেকে কলকাতা (Coochbehar-Kolkata Train) যাতায়াতে বাংলাদেশের ভিতর লালমণিরহাট, রংপুর দিয়ে পুরোনো…
This website uses cookies.