রস সাহিত্যিক রাজশেখর বসুর ছোটগল্প, ‘বিরিঞ্চিবাবা’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন৷ প্রথমটি ‘কাপুরুষ’, দ্বিতীয়টি ‘মহাপুরুষ৷’ ধর্মের প্রতি মানুষের সরল বিশ্বাস আর অনুভূতিকে পুঁজি করে ধান্দাবাজরা কীভাবে সমাজের নানা স্তরে ব্যবসার জাল ছড়িয়ে ফুলেফেঁপে উঠছেন পরিচালক সেদিকটিকেই তুলে ধরেছিলেন কমেডির ছলে৷ স্বঘোষিত ধর্মগুরু, ‘বিরিঞ্চিবাবা’র চারুপ্রসাদ ঘোষ এবং তাঁর শিষ্য কেবলরাম চরিত্রে চারুপ্রকাশ এবং রবি ঘোষের অভিনয় দর্শক মনে যেমন ছাপ ফেলে, তেমনই স্বঘোষিত ধর্মগুরুদের প্রতি আঙুল তুলে সাবধান বার্তাও ঘোষিত হয়৷
ছয়ের দশকের পরে কেটেছে অনেকগুলো দশক৷ আমরা সাবধান হইনি৷ ‘উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ’ র মতো বাতাসে উড়েছে সাবধানি বার্তা৷ ধর্মের মোহকে হাতিয়ার করে সময়ের হেরফেরে একের পর এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আবির্ভাব হয়েছে৷ আশ্চর্যের বিষয় প্রত্যেকেই নিজেকে, ‘ভগবান’ বা ‘ভগবানের দূত’ বলেছেন আর ভক্তরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে বারবার লুটিয়ে পড়েছেন ধর্মগুরুদের চরণে৷ এঁদের সবার নামই বহুবার সংবাদপত্রে বেরিয়েছে।
বহুমুখী প্রতিভার ধর্মগুরুদের কেউ আধ্যাত্মিক ঋষি, জনহিতৈষী, বহুমুখী গায়ক, চৌকশ ক্রীড়াবিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক, লেখক, গীতিকার৷ কথা বলতে পারেন চমৎকার। কিন্তু সময়ের নিরিখে প্রমাণিত হয়েছে এঁদের অনেকে ধর্ষক৷ ধর্ষণের দায়ে জেলও খেটেছেন অনেকে৷ তাণ্ডবেও ওস্তাদ অনেকের বাহিনী৷ রাম রহিমের ভক্তদের তাণ্ডবে এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের প্রাণহানি ও দুশোর বেশি আহত হয়েছেন৷
এবার আসি ভোলেবাবার প্রসঙ্গে৷ যিনি দাবি করতেন, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোয় চাকরি করতেন৷ সদ্য উত্তরপ্রদেশের হাথরসে তাঁর ধর্মীয় সভাতেই মারা গেলেন শতাধিক। নানা কীর্তিকলাপ বেরোচ্ছে। তার পরেই যে চমকে দেবার মতো ঘটনা নজরে আসে, ধর্ষণের দায়ে চাকরি যায় হরি সাধক ভোলেবাবার৷ অর্থাৎ ধর্ষকের চরণধূলি নিতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এত মানুষ!
২০১৭ সালে ১৪ জন স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে সামাজিক বহিষ্কারের প্রসঙ্গে মোদি সরকার বলেছিল, এখন থেকে কাউকে ‘সাধু’ ঘোষণার জন্য একটি প্রক্রিয়া তৈরি করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে গুরমিতের মতো কেউ নিজেকে ‘ভগবান’ ঘোষণা করতে না পারে৷ কিন্তু সাধুদের আখড়া পরিষদ ‘জাল সাধু’ঘোষণা করেছিলেন, এমন অনেক সাধুর সামনে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করেছেন নরেন্দ্র মোদি। কাউকে প্রণাম জানিয়েছেন দূর থেকে।
এখন প্রশ্ন থেকে যায়, একদা ধর্ষণ কাণ্ডের জন্য কুখ্যাত হাথরসে এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর দায় কার? সরকারের না সেই ভণ্ডবাবার? আশি হাজার অনুমতির জমায়েতে কী করে আড়াই-তিন লাখ মানুষের প্রবেশাধিকার ঘটে? আর কী করেই বা পূর্ব ঘোষণার পরেও গুরমিতের মতো ভণ্ডর জন্ম হয়?
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, বিজ্ঞানের আকাশচুম্বী সাফল্যের অংশীদার হয়েও ভোলেবাবার ছুটন্ত গাড়ির ধুলো কপালে বা শরীরে মাখলে মানব জন্ম সফল হবে! বিজ্ঞানের প্রচারের পরেও এতটা অন্ধকার কী করে গ্রাস করছে?
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় একটি গল্পে ভূতের তেল বের করার কথা বলেছেন৷ গণতন্ত্রের ভূতে কিন্তু তেল নেই, অন্তত সাধারণ নাগরিকের জন্য৷ যদি থাকত, তবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বারবার ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী ঘটনাগুলোর পারস্পরিক যোগসূত্র রচিত হত না৷ শুধুমাত্র শোক প্রকাশ করে, মৃতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দিয়েই কি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব?
(লেখক গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা। সাহিত্যিক)
চ্যাংরাবান্ধাঃ পুরোনো কমিটির মেয়াদ শেষ। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হল চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের। এই…
কোচবিহারঃ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি হারতেই বিজেপির হাতে থাকা একের পর এক পঞ্চায়েত দখল করছে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: জগন্নাথদেবের (Lord Jagannath) রথযাত্রায় মাতল শ্রীক্ষেত্র পুরী। শ্রী মন্দির থেকে মাসির…
দুর্গাপুরঃ নার্সিং পড়তে গিয়ে ভিনরাজ্যে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের কাঁকসার গোপালুপরের এক…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে প্রথম টি টোয়েন্টিতে ১৩ রানে হেরে গিয়েছিল ভারত। রবিবার…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত নেপাল। গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে…
This website uses cookies.