শুরুটা দেখে কি অনুমান করা যায়, দিনের বাকি সময়টা কেমন কাটবে? যদি তাই-ই হয়, তাহলে বলে নেওয়া ভালো, ইন্ডিয়া নামে বিরোধীদের যে পাঁচমিশালি জোট তৈরি হয়েছে, আগামীদিনে তাকে অনেক ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
সাধারণত, নতুন সরকারের আমলে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে খুব একটা ঝামেলা হয় না। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে আসার পর স্পিকার পদে খুব কম সময়েই বিরোধীরা প্রার্থী দেন। দিলে বুঝতে হবে, কোনও কিছুর প্রতিবাদ করতে বা বিশেষ কোনও বার্তা দিতে তাঁরা এই কাজ করছেন। এবার স্পিকার পদে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মনোমালিন্য সামনে এসেছে। মমতা থেকে অভিযেক যেভাবে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন, জোটের মধ্যে কংগ্রেসের দাদাগিরি না মানার বার্তা দিয়েছেন, তার থেকে একটা কথা স্পষ্ট, সামনের দিনগুলিতে দুই দলের সম্পর্ক খুব একটা মসৃণ হবে না।
কোনও সন্দেহ নেই, কংগ্রেস ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলির সঙ্গে কথা না বলেই স্পিকারের পদে প্রার্থী হিসাবে সুরেশের নাম ঘোষণা করে দেয়। কেন এরকমভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, তার যুক্তিও দেয় সোনিয়া গান্ধির দল। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কংগ্রেস একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমে অভিষেক ও পরে মমতার সঙ্গে কথা বলেন রাহুল গান্ধি। এরপর তৃণমূল জানায়, তারা সুরেশকে সমর্থন করবে।
তবে ধ্বনিভোটেই স্পিকার নির্বাচন হয়েছে। এরপর অভিষেক বলেছিলেন, ‘বিরোধীরা ভোটাভুটির দাবি করেছিল। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার মানেননি। এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ। একজনও যদি দাবি করেন, ভোটাভুটি করতে হবে, তাহলে সেই দাবি মানতে হবে।’ অভিষেকের প্রশ্ন, হেরে যাওয়ার ভয়ে কি বিজেপি ভোটাভুটি এড়িয়ে গেল?
এনডিএ সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। ফলে স্পিকার নির্বাচনে তারা হেরে যাবে, এমন কোনও দূরতম সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। এরপরেও অভিষেক ওই অভিযোগ করেছিলেন। এরপর কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ জয়রাম রমেশ টুইট করে জানান, সুরেশকে প্রার্থী করে ইন্ডিয়ার দলগুলি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছিল। ধ্বনিভোট হয়েছে। তারপর ইন্ডিয়ার দলগুলি ভোটাভুটির জন্য চাপ দিতে পারত। তারা সেটা করেনি। তারা মতৈক্য ও সহযোগিতার মনোভাবকে নষ্ট করতে চায়নি। প্রধানমন্ত্রী ও এনডিএ-র কাজে কিন্তু এই মনোভাবের প্রতিফলন ছিল না। মনে রাখতে হবে জয়রাম রাহুলের খুবই ঘনিষ্ঠ নেতা।
জয়রাম ও অভিষেকের কথার মধ্যে আশমানজমিন ফারাক। অভিষেক বলছেন, অনেক বিরোধী সাংসদ ভোটাভুটির দাবি জানালেও প্রোটেম স্পিকার মানেননি। আর জয়রাম বলছেন, কৌশলগত কারণে দাবিই জানানো হয়নি। জয়রাম যেটা বোঝাতে চেয়েছেন, কংগ্রেস একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল। আটবারের সাংসদ ও দলিত নেতা সুরেশকে প্রোটেম স্পিকার করা হয়নি। ডেপুটি স্পিকারের পদও দেওয়া হচ্ছে না। তাই কংগ্রেস তাকে স্পিকার পদে প্রার্থী করেছে। এতে করে দলিতদের প্রতি বার্তা দিতে চেয়েছেন রাহুলরা। কিন্তু স্পষ্ট হল না, কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েও কেন ভোটাভুটি থেকে পিছিয়ে গেল। রাহুলের সঙ্গে অভিষেক বা মমতার এত কথার পরেও স্পিকারকে কেন্দ্র করে পরে কেন দু’রকম কথা শুনতে হল সবাইকে। স্পষ্ট করে ইন্ডিয়া জোটের কোনও বিবৃতিও এল না। যা এল, তা তৃণমূলের এবং কংগ্রেসের। এখানেই ধাঁধা থেকে গেল।
আসলে এই জোটের মধ্যে অনেক জায়গাতেই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের স্বার্থ মিলবে না। গত দশ বছরে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা ৫০-এর আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। ফলে লোকসভায় তাদের অবস্থান ছিল বেশ দুর্বল। এবার কংগ্রেস ৯৯টি আসন পেয়েছে। রাহুল গান্ধিও বিরোধী নেতা হয়েছেন। এইসব ঘটনায় তৃণমূলের খুব একটা খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই। কংগ্রেস শক্তিশালী হলে, তারাই জোটে ছড়ি ঘোরাবে, বিরোধী জোটে তৃণমূলের গুরুত্ব কম হবে। আর রাহুল গান্ধির সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সম্পর্ক যে খুব একটা মধুর নয়, তা ইতিমধ্যে সকলেই জেনে গিয়েছেন।
সেজন্য লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর ইন্ডিয়ার বৈঠকে মমতা দিল্লিতে আসেননি। অভিষেককে পাঠিয়েছিলেন। অভিষেক খাড়গের ডাকা বৈঠকে যোগ দেন। তারপর তিনি সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন। আপ-এর নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। দিল্লি থেকে মুম্বই গিয়ে তিনি উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও কথা বলেন। তখন তৃণমূল নেতারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা জোটের মধ্যে আরেকটা জোট করতে চান, যাতে আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্ব পায়। এই ব্যাপারটাও কেমন অদ্ভূত লাগতে পারে আমজনতার চোখে।
এই প্রয়াস যে কংগ্রেস খুব ভালোভাবে দেখবে এমন নয়। অতীতেও তৃণমূল এই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ঘটনা হল, এখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ছেড়ে তৃণমূলের আচমকা চলে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার কংগ্রেসেরও তৃণমূলকে দরকার। কারণ, তাদের হাতে এতজন সাংসদ আছে। বিরোধীরা একযোগে দাবি করলে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে সংসদে কিঞ্চিৎ বিপদে ফেলতে পারবে। সেজন্য তৃণমূলকেও কংগ্রেসের চাই।
ইন্ডিয়ায় বাকি যে দলগুলি আছে, তারা কংগ্রেসের জোটসঙ্গী। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, শরদ পাওয়ারের এনসিপি, বিহারে আরজেডি, অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি, কেরলের দলগুলি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা সবাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আছে। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও জোট নেই। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে তারা সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছে। একটিমাত্র আসনে জিতেছে।
ভবিষ্যতেও তারা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবে এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। ফলে দুই দলের রাজনৈতিক সখ্য নেই। দিল্লিতে তারা একই জোটের শরিক নেহাতই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য। সে কারণেই কংগ্রেস শক্তিশালী হোক এবং জোটের অবিসংবাদী নেতৃত্ব দিক, এটা তৃণমূল চাইবে না। তাতে তাদের গুরুত্ব কমবে। তৃণমূল চাইবে, বিরোধী জোট তাদের উপর নির্ভরশীল থাক। সেজন্যই তারা অন্য আ়ঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করতে চেয়েছিল। সেই কাজে তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা কম। কারণ, অন্য দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আছে। তাদের স্বার্থের সংঘাতও কম।
ফলে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে যে বিরোধ দেখা দিয়েছিল, এটা সাময়িক মনে করা ভুল হবে। বরং এই বিরোধটা থাকবে। প্রয়োজনের খাতিরে দুই দল কখনও কাছাকাছি আসবে, আবার কখনও দূরে যাবে।
(লেখক সাংবাদিক)
চোপড়া: প্রবল চাপের মুখে চোপড়ায় (Chopra) যুগলকে নির্যাতনের (Couple Thrashed) ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জেসিবিকে গ্রেপ্তার…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০৭ সালের পর ফের টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাকে…
কোচবিহার: কোচবিহারে (Coochbehar) বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় সঠিকভাবে পুলিশি তদন্ত হচ্ছে না। রবিবার…
গাজোল: দুটি বাসের রেষারেষির জেরে প্রাণ গেল এক কৃষকের। রবিবার দুর্ঘটনাটি (Road Accident) ঘটেছে মালদার…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি ইউপিএসসি (UPSC Preliminary Exam)। মাত্র…
নয়াদিল্লি: জুনের শুরুতে রিয়াসিতে তীর্থযাত্রী বোঝাই বাসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাঁচটি স্থানে তল্লাশি অভিযান চালাল…
This website uses cookies.