উত্তরবঙ্গে এসে প্রথম কয়েকমাস টানা ছোট পাহাড়ি গ্রাম চুইখিমে ছিলাম। আর সেখানকার একমাত্র জুনিয়ার হাইস্কুলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদেই উত্তরবঙ্গে আমার প্রথম রবীন্দ্র জন্মোৎসব পালনের সুযোগ ঘটে। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অবহেলিত ও অনগ্রসর এবং বাংলা ভাষা না জানা কয়েকটি ছেলেমেয়ে এবং তরুণ শিক্ষকবৃন্দ পরিবেশিত গান, আবৃত্তি, নাচ আমায় মুগ্ধ করেছিল সেই অমল প্রভাতে। অত্যন্ত অনাড়ম্বর আয়োজনে যে আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে তারা উপস্থিত করেছিল, তা এককথায় অতুলনীয়!
উত্তরবঙ্গে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের পরবর্তী অভিজ্ঞতা হয় জলপাইগুড়ি রবীন্দ্র ভবনে, গান গাইতে গিয়ে। সেও এক মনে রাখা সন্ধ্যা। বহুদিন পর দর্শকঠাসা একটি প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছিলাম, যাঁরা প্রকৃতই সংস্কৃতিমনস্ক। বেশ মনে পড়ছে, কলকাতায় এই অভিজ্ঞতা ক্রমশ বিরল হয়ে পড়ছিল। যতজন শিল্পী মঞ্চে, দর্শকাসনে তার চেয়েও কম মানুষ। শিলিগুড়ি শহরে বসবাস শুরুর পর প্রথম রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের সন্ধ্যাটি ছিল বেশ মনোরম ও নিবিষ্ট ছিল সেই সন্ধ্যাটিও।
উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের কথায়, শিলিগুড়ির তুলনায় বঙ্গ সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঐতিহ্যবাহী জলপাইগুড়ি, মালদা, রায়গঞ্জ, কোচবিহার ও বালুরঘাট। এই অঞ্চলগুলির সাংস্কৃতিক ইতিহাসও প্রাচীন। মালদা শহরে সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান। অন্যদিকে রায়গঞ্জ পুরসভা, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য কেন্দ্রে দারুণভাবে পালিত হয় রবীন্দ্র জয়ন্তী। পিছিয়ে নেই বালুরঘাটও। প্রতি বছরই ঐতিহ্যের শহর জলপাইগুড়িতে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপনে ধুমধাম থাকে লক্ষণীয় মাত্রায়। এই প্রসঙ্গে আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সাহিত্য-সংগীত-নৃত্য-নাটক ইত্যাদির ধারাবাহিক চর্চায় বরাবর নিবিষ্ট এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষ।
শিলিগুড়ি সেই তুলনায় মিশ্র সংস্কৃতির শহর। তার শরীরে যৌবনের উচ্ছলতা! ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড যেমনই হোক, রবীন্দ্র জন্মোৎসব পালনে ঘটাপটা এখানেও কিছু কম নেই। সরকারি স্তরে অনুষ্ঠান তো আছেই। ক্লাব-সংগঠনের ভূমিকাও এক্ষেত্রে চোখে পড়ে। এইসব অনুষ্ঠানে নিয়মিত সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা এক তরুণ বাচিকশিল্পীর বক্তব্য, ‘প্রচুর অনুষ্ঠান হয় এই সময়। আমাদের মধ্যে অনেকেরই তো প্রায় রোজই অনুষ্ঠান থাকে কোনও না কোনও মঞ্চে।’
অন্তত তিন-চারজন সংগীত শিক্ষককে জানি, যাঁরা প্রতি বছরই রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত এক বাচিকশিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম এই বিষয়ে। তিনি অবশ্য মনে করেন, জলপাইগুড়ি অনেক বেশি আন্তরিক ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে কবিপক্ষ। কোচবিহারে তুলনায় অনুষ্ঠান কম হলেও, তাতে আন্তরিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। খ্যাতনামা আর একজন বাচিকশিল্পীর বক্তব্য, শিলিগুড়ি তো কলকাতারই ক্ষুদ্র সংস্করণ। এখানেও ইদানীং দেখি যতজন শিল্পী, দর্শকাসন সেই অনুপাতে ভর্তি হয় না। আসলে বিনোদনের অন্যান্য আকর্ষণ এখন নতুন প্রজন্মের আগ্রহের জায়গাটা অনেক বেশি অধিকার করে নিয়েছে। মা-কাকিমার শাড়ি দিয়ে প্যান্ডেল বানিয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের দিন এখন ইতিহাস। রবীন্দ্র জয়ন্তীও এখন স্পনসর অধ্যুষিত ও কর্পোরেট হয়ে উঠেছে। সেই অনুষঙ্গেই রঙিন আজকের যাবতীয় পালন-উদযাপন। কবিপক্ষ শেষের মুখে এটাই উপলব্ধি।
(লেখক শিলিগুড়ির বাসিন্দা। সাংবাদিক)
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ রবিবার সন্ধ্যায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের নিয়ে রাজভবনে গিয়ে দেখা করলেন রাজ্যের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ৪ জুন নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্ত ভোট…
বালুরঘাট: বর্ষার শুরুতে কিছুটা হলেও বেড়েছে আত্রেয়ী নদীর জল। কিন্তু সেই জলের রং কুচকুচে কালো।…
দুর্গাপরঃ লোকসভা নির্বাচন মিটতে না মিটতেই এক সময়ের লালদুর্গ বলে পরিচিত ইস্পাত নগর দুর্গাপুরে সিপিএমে…
রায়গঞ্জঃ বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এক প্রান্তিক কৃষকের জমি দখল করে কংক্রিটের দেওয়াল নির্মাণের অভিযোগ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: টি২০ বিশ্বকাপে বৃষ্টির জন্য ভেস্তে যাচ্ছে একের পর এক ম্যাচ। মঙ্গলবার…
This website uses cookies.