সে আছে। প্রবলভাবেই আছে। সে জেলে আছে তাতে কী, জেলে থেকেও সে এই ভোটের বাজারে সর্বত্র আছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে চুনোপুঁটি নেতাদের গরম গরম বক্তৃতায় সে আছে। তার সুবাদেই বিখ্যাত হয়েছে সন্দেশখালি নামে বাংলার এক দুর্গম এলাকা। কস্মিনকালেও এই নাম দেশবাসী আগে শুনেছেন কি না সন্দেহ।
সে শেখ শাহজাহান। প্রবল প্রতাপ ছিল তার। তার নামে পার্টি আর পুলিশ এক ঘাটে জল খেত কিছুদিন আগেও। আগে সে সর্বহারা পার্টিতে ছিল, এখন সে মা, মাটি, মানুষের। যত দিন গড়াচ্ছে ততই বেরোচ্ছে তার এবং তস্য চেলাদের অবাক করা কাজকারবার। খোদ হাইকোর্ট বলছে, যা অভিযোগ তার এক শতাংশও সত্যি হলে তা মারাত্মক। অবাক রাজ্যের মানুষও। ইতিমধ্যেই সেসব কাহিনী জানতে বাকি নেই কারও। এখন বেরোচ্ছে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সম্পত্তির হালহকিকত। নিজের নামে একটা আস্ত বাজার ক’জনের থাকে। বেরোচ্ছে আরও কত কেচ্ছা।
এবং তা অফুরন্ত। কী নেই! হিন্দি সিনেমার কোনও ডনকে যদি তুলে এনে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়, শাহজাহানের দাপট তার থেকেও ভয়ংকর। অবাধ ছিল তার রাজ্যপাট। তার হুকুমে যেমন চলতে হত গ্রামের লোকজনকে, তেমনই জো হুজুর থানা-পুলিশ। একদিন, দু’দিন নয়, দিনের পর দিন তার কারবার চলেছে। কেউ নাকি কিছু জানত না। শাহজাহানের মাথার ওপর ছিল পার্টির বড় বড় নেতাদের হাত। সেই বলে বলীয়ান হয়ে শাহজাহানের সাম্রাজ্য ছিল পাকাপোক্ত। নিজের নামে জমি লিখিয়ে নেওয়া, চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে তাকে ভেড়ি বানিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার সব চলেছে বলতে গেলে পুলিশ প্রশাসনের পাহারায়। কেউ প্রতিবাদ করার হিম্মত দেখায়নি কখনও। রাতদুপুরে মা-বোনদের শাহজাহানের শাগরেদদের ডেরায় পাঠিয়ে চোখের জল ফেলতে হয়েছে অনেককে।
ইডি আদালতে দাবি করছে, কে এমএলএ হবেন, কে এমপি, কে পঞ্চায়েত মেম্বার সব সেই ঠিক করত বলে জেরায় জানিয়েছে শাহজাহান। বলেছে, সন্দেশখালি এলাকায় সেই ছিল শেষকথা। সেখানে তার কথাতেই সব কাজ হয়। যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেষকথা বলত সে-ই। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও তার কথাই শুনে চলতেন। শাহজাহান অবশ্য জানিয়েছে, সে ওসব বলেনি। ইডি জোর করে বলিয়ে নিয়েছে। তবে ইডি যাই বলুক, সেখানকার মানুষ জানেন, কথাগুলো কতটা সত্যি।
তাকে ধরতে নাটকও নেহাত কম হয়নি। টানা ৫৫ দিন স্রেফ উবে গিয়েছিল সে। কেউ নাকি খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে সবাইকে বিস্তর ঘোল খাইয়ে আদালতের গুঁতোয় যখন ধরা পড়ল কিংবা ধরা দিল, তখনও তার কী দাপট। হাঁটাচলায় একেবারে ডোন্ট কেয়ার ভাব। সেই শাহজাহান ক্রমে নরম হয়েছে৷ গোড়ার দিকে বলল বিজেপির ষড়যন্ত্র। তারপর বলল, ইডির থেকে সিবিআই ভালো। তবে ক্রমে যখন চাকরি কেলেঙ্কারি, র্যাশন দুর্নীতি থেকে লোকের নজর খানিকটা ঘুরেছে বলে মনে হচ্ছিল ঠিক তখনই সন্দেশখালি নিয়ে কোর্টের আদেশে তদন্তে নামছে সিবিআই। ফলে আবার খবরে উঠে এসেছে সন্দেশখালি। চাইলেই ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না।
এই শাহজাহানরা একদিনে গজায়নি। ভোটে জিততে তাদের তৈরি করা হয়েছে, বছরের পর বছর ব্যবহার করা হয়েছে। এই অত্যাচারের কথা বাইরে বেরোত না যদি না দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সন্দেশখালির মেয়েরা লাঠিঝাঁটা হাতে পথে নামতেন। নইলে এখনকার সিস্টেমের অঙ্গ হয়ে যাওয়া এমন কত সন্দেশখালি নানারকম প্রচার পালটা প্রচারের তোড়ে ভেসে গিয়েছে কে জানে! কে জানে আরও কত কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই বাংলায়! ভয়ে কাঠ হয়ে থাকাটা যাদের ভবিতব্য তারা মুখ বুজে থাকে বছরের পর বছর। সুটিয়া, ধানতলা, বানতলা, হাঁসখালি, কামদুনি আরও কত জায়গায়।
এইসব ডন আস্তে ধীরে কবজা করে ফেলেছে রাজনীতিকে। এদের কাজে লাগে ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে। দখলদারি কায়েম রাখতে তাদের ব্যবহার করা হয়। উলটে তারাও তাদের পাওনা বুঝে নেয়। একসময় এরাই চেপে বসে ঘাড়ে, দলকে চালায়। সেখানে রং আলাদা করা মুশকিল। তবে যখন সাধারণ মানুষ ভয় ভেঙে উঠে দাঁড়ায় তখন ওলটপালট হয়ে যায় সব ছক। শাহজাহানও হয়তো ভাবেননি একদিন এমনও আসতে পারে। ঘুরে দাঁড়াতে পারে মাথা নীচু করে থাকা গাঁয়ের সাধারণ লোকজন। একজোট হয়ে তল্লাটছাড়া করতে পারে এমন এক দাপুটে ডনকে।
‘এ কথা জানিতে তুমি ভারত-ঈশ্বর শা-জাহান/কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধন মান।’ হঠাৎই গুরুদেবের লাইন দুটো মাথায় এল। তবে ভারতের জায়গায় সন্দেশখালি বসিয়ে নেবেন প্লিজ।
শিলিগুড়ি: গাড়ি ভাড়ায় রাশ টানতে পদক্ষেপ করল সিকিম। এবিষয়ে কমিটি গঠন, নজরদারি, অভিযোগ জানানোর সেল…
রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি, ২০ মে : ফুলবাড়ি থেকে ক্যানাল রোড ধরে যতই গজলডোবার দিকে এগোনো…
সানি সরকার, শিলিগুড়ি: রাতভর বৃষ্টি, সকাল হলেই চড়া রোদ। কখনও একধাক্কায় তাপমাত্রার পতন, কখনও আবার…
হিলি: যৌনাঙ্গে লুকিয়ে শোনা পাচারের ছক ভেস্তে দিল সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সোমবার বিকেলে হিলি সীমান্ত…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বলিউডের অভিনেত্রীকে সামনে দেখেও নিষ্পৃহ একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের ডেলিভারি বয়।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বিক্ষিপ্ত কিছু উত্তেজনার ঘটনা ছাড়া মোটের উপর শান্তিতেই মিটল পঞ্চম দফার…
This website uses cookies.