রাজনীতি একটি বিচিত্র খেলা। এই খেলায় আদর্শের পাট অনেকদিন আগেই ঘুচে গিয়েছে। আদর্শের জায়গাটি দখল করেছে স্বার্থ এবং নানাবিধ হিসেবনিকেশ। হয়তো এই কারণেই রাজনীতিতে এখন চিরস্থায়ী বন্ধু বা চিরস্থায়ী শত্রু বলে কিছু হয় না। বন্ধু এবং শত্রু ঘনঘন বদল হয়।
যে নীতীশ কুমারের জন্য বিজেপির দরজা বন্ধ বলে ঘোষণা করেছিলেন অমিত শা, ভোটের আগে সেই নীতীশ কুমারকেই হাট করে দরজা খুলে বুকে টেনে নিল বিজেপি। যে কংগ্রেসকে পুঁজিপতিদের দালাল বলে বরাবর মনে করে এসেছে সিপিএম, এবার ভোটে সেই কংগ্রেসের হাত ধরেই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মরিয়া তারা। যে কংগ্রেস সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের জন্য সিপিএমকে কাঠগড়ায় তুলে এসেছে, তারাই আজ সিপিএমের ভিতর তাদের নির্ভরযোগ্য বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছে।
এই বিচিত্র রাজনীতির খেলায় এই বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে একটা কথা বেশ চলছে। গট আপ বা সেটিং। কথাটি বাজারে এনেছে কংগ্রেস-সিপিএম। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই এই গট আপের তত্ত্বটি বাজারে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে চলেছে। তাঁদের বক্তব্য মোদি-মমতা, আরও খোলসা করে বললে বিজেপি-তৃণমূলের ভিতরে একটি গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। এদের লড়াইটা ওপর ওপর। তলায় তলায় এরা দু’পক্ষই পরস্পরের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে।
গট আপ বা সেটিংয়ের এই তত্ত্বটি বাজারে বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে দিতে পেরেছে কংগ্রেস-সিপিএম। অনেকেই এই তত্ত্বে বিশ্বাসও করছেন। আমিই অনেকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি, তাঁরা বিশ্বাস করেন বিজেপি এবং তৃণমূলের ভিতর কিছু একটা বোঝাপড়া আছে।
বিজেপি এবং তৃণমূল দু’পক্ষই অবশ্য এই তত্ত্বের ঘোর বিরোধী। তারা প্রথমাবধি এর বিরোধিতা করে চলেছে।
এইরকম একটি তত্ত্ব বাজারে চালু করে দিতে পারলে রাজনৈতিকভাবে অবশ্যই কংগ্রেস-সিপিএমের লাভ। রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দলের তকমা এই দুটি দল বহুদিন আগেই হারিয়েছে। এই রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বর্তমানে বিজেপি। ভোটের বাজারেও আলোচনা কে বেশি আসন এই রাজ্যে পাবে – তৃণমূল, না বিজেপি। সেই আলোচনায় কংগ্রেস বা সিপিএমের কোনও স্থান নেই। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে যদি গট আপ বা সেটিং তত্ত্ব বাজারে চালিয়ে দেওয়া যায় তাহলে বিজেপি এবং তৃণমূল দু’দলের সম্পর্কেই একটি সংশয় মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। তৃণমূল বিরোধী ভোটারকে বোঝানো যাবে, বিজেপি নয়, তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারে বাম এবং কংগ্রেসই।
এই গট আপ তত্ত্বে শেষপর্যন্ত কে কতখানি লাভবান হবে জানি না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে রাজ্য বিজেপির এক নেতার সঙ্গে একান্ত কথাবার্তা হচ্ছিল। উত্তরবঙ্গের ভোটের পাট মিটিয়েই তিনি কিছুদিন আগে কলকাতা ফিরেছেন। তিনি এই প্রসঙ্গে কী বললেন, সেই কথাগুলিই পাঠকের কাছে তুলে ধরছি শুধু।
ওই বিজেপি নেতা যা বলেছিলেন, তা সংক্ষেপ করলে দাঁড়ায় এরকম। এক, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে আটকাতে সিপিএমের একটি বড় অংশের ভোট বিজেপির দিকে এসেছিল। কোনও বোঝাপড়ার কারণে এই ভোটটা বিজেপির দিকে এসেছিল, নাকি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সিপিএম কর্মীরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন তা পরিষ্কার নয়। তবে, নীচুতলায় অনেক ক্ষেত্রেই একটি বোঝাপড়া হয়েছিল। কারণ সিপিএমের এই উপলব্ধি হয়েছিল ভাঙা কোমর নিয়ে তৃণমূলের মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই তারা করতে পারবে না।
দুই, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ও অনেক জায়গায় পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমের ভিতর অলিখিত বোঝাপড়া হয়েছে এবং এটা হয়েছে এই তিন দলের জেলা নেতৃত্বের জ্ঞাতসারেই।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। এরপর ওই বিজেপি নেতাটি যে কথা বললেন তা চমকিত করে তুলেছিল আমাকে। তিনি বললেন — এবার লোকসভা ভোটে দুটি কেন্দ্রের দিকে নজর রাখবেন। একটি বহরমপুর, অন্যটি মুর্শিদাবাদ। বহরমপুরে কংগ্রেস প্রার্থী ওই দলের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী ওই দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। দুজনেই হাই প্রোফাইল প্রার্থী। এই কেন্দ্র দুটিতে কংগ্রেস এবং সিপিএম হাতধরাধরি করে লড়ছে। হাতধরাধরি না করে তাদের উপায় নেই। কারণ, একক শক্তিতে তৃণমূলকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা বর্তমানে অধীর বা সেলিম কারও নেই। আবার হাত ধরাধরি করে হেঁটেও যে এই দুই কেন্দ্রে, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদে, জয় সম্পর্কে তারা যে পুরোপুরি নিশ্চিত তাও নয়।
বিজেপি নেতাটি বললেন, এই দুই কেন্দ্রেই কংগ্রেস -সিপিএমের আড়ালে একজন বন্ধুও আছে। সেই বন্ধুও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওই দুই দলের প্রতি। আড়ালে থাকা এই বন্ধুটির নাম বিজেপি।
বিজেপি নেতার কথায়, অধীর এবং সেলিমের কেন্দ্রে ওই দুই নেতার জয়ের পথ সুগম করতে বিজেপি যা যা করার করবে। বিজেপি এই দুটি কেন্দ্রেই দুর্বল প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপি জানে এই দুটি কেন্দ্র তাদের জেতার নয়। অতএব সেখানে তাদের যেটুকু শক্তি আছে তা নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএমের পিছনে তারা রয়েছে। আড়ালে থাকা এই বন্ধুটি সম্পর্কে কংগ্রেস-সিপিএম দুই দলই সচেতন।
এই দুই কেন্দ্রে বিজেপির ভোট কি তাহলে কংগ্রেস-সিপিএমের দিকে যাবে? বিজেপি নেতার জবাব – সেটাই তো স্বাভাবিক।
নেতাটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আর কোন কোন কেন্দ্রে আড়ালে-আবডালে এরকম খেলার সম্ভাবনা আছে? মুচকি হেসে নেতাটি বললেন, উত্তরবঙ্গের একটি কেন্দ্রে হয়েছে। দেখা যাক, দক্ষিণবঙ্গের আর কোথায় কোথায় হয়।
এত কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কাজেই বাজিয়ে দেখতে ফোন করেছিলাম এক রাজ্য কংগ্রেস নেতাকে। সব শুনে তিনি ছোট্ট একটি জবাব দিলেন। বললেন, ‘অধীরের বিজেপি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আমাদের দলের ভিতরেই তো অনেক কথা আছে। তাছাড়া, বহরমপুর আসন যে কোনও উপায়ে জিততে পারলেই অধীর নিশ্চিন্ত। বাকি রাজ্যে কংগ্রেস চুলোয় গেলেও অধীরের কিছু যায় আসে না।’
কার সঙ্গে কার কোথায় যে কী সেটিং হচ্ছে কেউ জানে না। এই সেটিং তত্ত্বের বাজারে এমনই তত্ত্ব কিন্তু বাজারে উঠছে।
শিলিগুড়িঃ মঙ্গলবার সন্ধ্যে রাতে দু:সাহসিক চুরির ঘটনা ঘটলো আশিঘর ফাঁড়ির মধ্যশান্তিনগর এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর,…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেজ ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হেলায় হারিয়ে দিল…
শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার ঘটনায় এবার মিশনের সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধেই পালটা মামলা দায়ের…
শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির (Siliguri) সেবক রোডের রামকৃষ্ণ মিশনে (Ramkrishna mission) হামলার ঘটনায় শীঘ্রই আন্দোলনে নামছে বিজেপি…
শিলিগুড়ি: শাশুড়ি ভর্তি নার্সিংহোমে। কাজের সূত্রে ছেলে থাকে দিল্লিতে। সেই সুযোগে ৩৪ বছর বয়সি পুত্রবধূকে…
This website uses cookies.