ভাইজাগ: ক্রিজে যখন নেমেছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালস ৬৫/৫ স্কোরে ধুঁকছে। ২১০-এর জয়-লক্ষ্য তখন বহুদূর। জয়ের গন্ধে ঋষভ পন্থের লখনউ সুপার জায়েন্টস ফুরফুরে মেজাজে। মাঠে হাজির ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ। উলটো ছবি দিল্লি শিবিরে। যদিও অন্যরকম স্ক্রিপ্ট ভেবে রেখেছিলেন আশুতোষ শর্মা। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে খেলতে নেমে প্রায় হারা ম্যাচে দিল্লিকে জিতিয়ে ফিরলেন!
৩১ বলে অপরাজিত ৬৬-র লড়াকু ইনিংসে লখনউয়ের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন। ম্যাচের শেষ ওভারের তৃতীয় বল সোজা গ্যালারিতে ফেলে জয় নিশ্চিত করে নেন আশুতোষ। ৫টি ছক্কা, সমসংখ্যক বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসের সুবাদে ম্যাচের সেরা, যা নিজের মেন্টর শিখর ধাওয়ানকে উৎসর্গ করলেন। জানান, তাঁর ব্যাটিংয়ে বরাবর বিশ্বাস দেখিয়েছেন শিখরপাজি। যাঁর উৎসাহ তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
গতবার পাঞ্জাব কিংসের জার্সিতেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন। যার সুবাদে ৩.৮ কোটিতে দিল্লি এবার নিলামে তুলে নেয় আশুতোষকে। প্রথম ম্যাচেই যার মর্যাদা রাখলেন। সাজঘরে ফিরে প্রথম ফোনটাই করেন ধাওয়ানকে। ভিডিও কল। শিখরের চোখেমুখে ছাত্রের সাফল্যের খুশি। গুরুদক্ষিণা দিতে পেরে খুশি আশুতোষও কথা হারালেন। বার পাঁচেক শুধু ‘স্যর থ্যাংক ইউ’-তেই আটকে থাকলেন। ছাত্র-মেন্টরের যে আবেগঘন ভিডিও কলের ছবি পোস্ট করে দিল্লি ক্যাপিটালস।
ভিডিওতে ম্যাচের নায়ক আরও বলেছেন, ‘শিখরপাজি খুব খুশি। লাভ ইউ পাজি। ম্যাচের সেরা পুরস্কার আমার মেন্টর শিখরপাজিকে উৎসর্গ করতে চাই।’ হিসেব কষা ইনিংস। ১৫ ওভারে আশুতোষের স্কোর ছিল ২০ বলে ২০। পরের ১১ বলে ৪৬ রান যোগ করে ম্যাচের রং বদলে দেন প্রবল চাপের মুখে।
ক্রিজে শেষ ব্যাটার মোহিত শর্মা। নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আশুতোষের শুধু একটাই প্রার্থনা, স্ট্রাইক যেন পান। বলেছেন, ‘আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছিলাম। শুধু মনকে বলছিলাম, মোহিত এক রান নিক। স্ট্রাইক পেলে ছক্কা মেরে ম্যাচে ইতি টেনে দেব। নিজের ওপর পূর্ণ আস্থা ছিল। ইনিংসটা উপভোগ করেছি। ভালো লাগছে পরিশ্রমের মূল্য পেয়ে।’
প্রাথমিক টার্গেট ছিল দলকে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরানো। ম্যাচটাকে শেষপর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া। ম্যাচ জেতানো ইনিংসের রহস্যভেদ করে বলেছেন, ‘ক্রিকেট-বেসিকে জোর দিয়েছিলাম। চাইছিলাম, শেষপর্যন্ত ম্যাচটা নিয়ে যেতে। ২০ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থেকে স্লগ ওভারে রানের গতি বাড়াব।’
আশুতোষের যে হিসেব কষা ইনিংসে মজে মাইকেল ক্লার্ক বলেছেন, ‘চলতি আইপিএলে অবিশ্বাস্য বেশকিছু ইনিংস দেখতে পাব আমরা। তবে এটুকু বলতে পারি, টুর্নামেন্ট শেষে সেরা পাঁচে থাকবে এই ইনিংসটা।’ আম্বাতি রায়াডুর মতে, গতবার পাঞ্জাবের হয়েও ঠান্ডা মাথায় চাপ সামলেছিল। এবার প্রথম ম্যাচেই কাজ শুরু।
কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকারের কথায়, গত আইপিএলের ইনিংসগুলি ওঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ইনিংসের প্রথম বল থেকে যা দেখা যাচ্ছিল। একেবারে ক্লিন হিটিং। প্রবল চাপের মুখে দুরন্ত ইনিংস, যা দীর্ঘদিন ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবেন। সূর্যকুমার যাদবও তাঁর প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘দৃঢ়তা, সংকল্প এবং চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস। একেবারে সংহারক ইনিংস।’