শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

Alipurduar | শেষবেলায় ভিড় টানল বইমেলা, খুশি বিক্রেতারা  

শেষ আপডেট:

আলিপুরদুয়ার: রবিবার। প্যারেড গ্রাউন্ডের প্রবেশের মুখের আলোর বেলুনের ভিড়। বাইক রাখতে ঠেলাঠেলি। খাবারের দোকানগুলো পর্যন্ত জনতার দখলে। এ তো গেল বাইরের ছবি। আবার ব্যারিকেডের ভিতরে স্টলগুলোতে পছন্দের বইয়ের খোঁজে ভিড়। পরিবেশ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ‘মেলা জমে উঠেছে’। আমরা বলছি ১১তম আলিপুরদুয়ার জেলা বইমেলার কথা। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলার শেষদিন যে ভিড় ছিল সেটা অন্যদিনের থেকে অনেকটাই বেশি।

‘আজকে কিন্তু ভালো ভিড় হয়েছে বল!’ বইমেলার গেটে ঢুকেই প্রথমে কানে এল এই কথাটাই। গেটের পাশে মূল মঞ্চের দিকে এক তরুণকে বলছিলেন এক তরুণী। সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁরা দুজন মূল মঞ্চের ভিড়ে গিয়ে মিশে গেলেন। ভিড় যে ভালোই সেটা একবার দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অন্যদিকে, শেষ ছয়দিন যখন বইয়ের স্টলগুলোকে পিছনে ফেলে বইমেলায় থাকা ফুড কোর্ট ভিড় টেনেছিল। এদিন দেখা গেল উলটো ছবি। বইয়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়ছে বইপ্রেমীদের ভিড়। তবে এই ভিড়, লোকসমাগম, হাসিমুখের মাঝেও এক উজ্জ্বল নিরাশার ছবি নজরে এল। বইমেলার মাঝে একটা সাদা বোর্ড রাখা হয়েছিল মেলা কমিটির তরফে। মেলায় আসা লোকেদের পছন্দের লেখক বা কবির নাম লেখার কথা বলা হয়েছিল সেই বোর্ডে। সেই জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারদের নাম লিখেছিলেন অনেকেই। তবে বোর্ড তাও ভরেনি সাতদিনে। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ ছিল না তা বোর্ডের দশা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

শেষ দিনে বই বিক্রি নিয়েও আশা-নিরাশার কথা শোনা গেল। কথা হচ্ছিল সুশোভন মণ্ডল নামে এক প্রকাশকের সঙ্গে। এবছরই প্রথম আলিপুরদুয়ার বইমেলায় আসার অভিজ্ঞতা জানালেন সুশোভন। অভিজ্ঞতার ভালো ডালি নিয়ে ফিরছেন বলে জানালেন। তাঁর কথায়, ‘অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমার স্টলে ভালো বিক্রি হয়েছে। আগামীবারও আসার চেষ্টা করব।’ ভালো বিক্রি হবেই না বা কেন! তাঁর স্টলে পাওয়া যাচ্ছিল ছবি আঁকার বই, কমিকস, ছোটদের গল্পের বই।

মেলায় এই কয়েকদিন এই বইগুলোর দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল। বড়দের হাত ধরে ছোটরা মেলায় এসে প্রিয় বইগুলোর খোঁজ করছিল। মেলায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল এক স্টলে হ্যারি পটারের পুরো সিরিজ সাজিয়ে থাকতে দেখে এক খুদে বাবার হাত ধরে এগিয়ে গেল সেই দোকানে। সেই সিরিজের ৫ হাজার টাকা দাম শুনে বাবা অন্য দোকানের কিনে দেবেন বলে ছেলেকে ভুলিয়ে নিয়ে গেলেন।

কয়েকদিনের মতো শেষ দিনেও এই বই দেখে না কেনার বিষয়টিও দেখা গেল। শ্রীকান্ত কুণ্ডু নামে এক প্রকাশকের কথায়, ‘বই তো অনেক লোক দেখছেন। কিনছেন হাতেগোনা কয়েকজন। এবছর বিক্রি তেমন হয়নি। গত বছর ফালাকাটায় এর থেকে ভালো বিক্রি হয়েছে।’ আগামী বছর স্টল দেবেন কি না সেটা নিয়েও ভাববেন বলে শোনা গেল তাঁর কাছে।

রিতা দাস চাকি নামে আরেক প্রকাশক জানালেন, যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকাও ওঠেনি। শেষ দিন ভিড় হলেও সেটা যে অনেক বেশি হবে না সেটা বুঝে কয়েকটি স্টল বই গোছানোও শুরু করে দিয়েছিল এদিন সন্ধ্যা থেকেই। সোমবার সকালে সব স্টল একসঙ্গে চলে যাবে ময়নাগুড়ি। জলপাইগুড়ি জেলা বইমেলায়। শেষ দিনের মেলায় বই কেনার সঙ্গে ভাপা পিঠে, চাট, ভেলপুরি খাওয়ার জন্য যেমন ভিড় দেখা গিয়েছে, তেমনি আবার ছোট নাগরদোলা, মিকিমাউস, জ্যাম্পিংয়ে বাচ্চাদের উঠতে দেখা গেল। তবে প্রায় বাড়ি ফেরার সময় অনেকের হাতে দেখা গেল এক-দুটো বই। ছেলেকে নিয়ে বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার সময় কলেজপাড়ার বাসিন্দা পিংকি কুণ্ডু নামে এক মহিলা বললেন, ‘শেষ দিন বলে বইমেলায় এলাম। এসে ভালোই লাগাল। ছেলের জন্য একটা বই নিলাম। আমার জন্য একটা নিলাম।’

তবে বইমেলায় এদিন ভিড়ের পিছনে আরেকটি কারণও ছিল। গত সাতদিন থেকে হয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতার এদিন পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সেজন্যও অনেকে মেলায় এসেছিলেন

Mistushree Guha
Mistushree Guhahttps://uttarbangasambad.com/
Mistushree Guha is working as Sub Editor. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Online. Mistushree is involved in Copy Editing, Uploading in website.

Share post:

Popular

More like this
Related

Jalpaiguri | নাচে জাতীয় স্কলারশিপ পেল দুই কন্যা

অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়িকে গর্বিত করল দুই কিশোরী (Jalpaiguri)।...

Kaliachak | একসঙ্গে পরিবারের চার সদস্যকে খুন! দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত

মালদা: একই সঙ্গে বাবা, মা, বোন, ঠাকুরমাকে খুন করে...

Kaliachak | পুলিশি অভিযানে উদ্ধার কোটি টাকার ব্রাউন সুগার! ধৃত ২

কালিয়াচক: প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ব্রাউন সুগার সহ ২...

John Barla | ‘রাজ্যের ১০০ দিনের টাকা আটকেছে কেন্দ্র, সব জানাবো’, ডুয়ার্সে ফিরেই বিজেপিকে নিশানা বারলার

নাগরাকাটা: কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে এরাজ্যের ১০০ দিনের টাকা আটকেছে,...