মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: অন্তরালে তিনি। তবু অনুগামীদের ওপর প্রভাব এতটুকু কমেনি কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহের (Jiban Singha)। তাই কখনও পৃথক রাজ্যের দাবি তোলা হোক কিংবা তাঁর নির্দেশে কোনও কর্মসূচি, সবক্ষেত্রেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন অনুগামীরা। এবারও তার অন্যথা হল না। জীবন সিংহের নির্দেশে চৈত্র সংক্রান্তিতে মাদারিহাটের পশ্চিম খয়েরবাড়িতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বিষমাপুজো থেকে শুরু করে চাউল কালাই বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করেই যে রাজবংশীদের ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছেন জীবন সেটা স্পষ্ট।
চৈত্র সংক্রান্তিতে রাজবংশীরা বিষমাপুজো করে থাকেন। হরগৌরীর মূর্তিকেই তাঁরা বিষমা রূপে পুজো করে। এদিন পশ্চিম খয়েরবাড়িতে বিষমাপুজোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন। জীবন সিংহের নির্দেশেই যে ওই অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটা জানিয়েছে ওই সংগঠন। এদিন ভাওয়াইয়া গান, নাচ এবং ‘ক্ষত্রিয় রক্ষা’ নামে একটি নাটক পরিবেশিত হয়। রীতি মেনে শুকটা, সিদল, সাতসাগি, ছেকা দিয়ে ভূরিভোজ সারেন অনুষ্ঠানে আগতরা।
সংগঠনের আলিপুরদুয়ার জেলার সহ সভাপতি সুভাষ রায় বলেন, ‘জীবন সিংহের সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে রাজবংশী সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চান জীবন। তাই সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করেছেন তিনি। আজ বিষমাপুজো উপলক্ষ্যে ব্লকে ব্লকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।’
রাজবংশীদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে কোনও খামতিই রাখা হয়নি এদিন। চৈত্র সংক্রান্তিতে চাউল কালাই খাওয়ার রীতি প্রচলিত রাজবংশী সমাজে। এমনকি, উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ভাষাভাষী মুসলিমরাও চাউল কালাই খান। চাল, চিঁড়ে, বিভিন্ন ডাল একসঙ্গে ভেজে তৈরি করা হয় চাউল কালাই। এদিন অনুষ্ঠানে চাউল কালাই বিতরণ করা হয়। সংগঠনের এথনিক কালচারাল সম্পাদক দীপেন রায় বলেন, ‘একসময় চৈত্র সংক্রান্তির দিনে রাজবংশী সমাজে শিকার করে মাংস খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। তবে বন্যপ্রাণ আইনের জেরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে আজও চৈত্র সংক্রান্তিতে মাংস দিয়ে ভূরিভোজ সারেন তাঁরা।’
এতদিন রাজবংশীরা নিজেদের বাড়িতে দিনটি পালন করতেন। তবে এবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ভানু রায়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অল কামতাপুর কোচ রাজবংশী সমাজ নামে আরেক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অসমের বাসিন্দা অনিল রায়ও।
নদীর কুচো মাছের সঙ্গে কচু মিশিয়ে কয়েক ধাপে তৈরি করা হয় সিদল। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে। এছাড়া, সাত রকমের শাক একসঙ্গে রান্না হয়। এটি পরিচিত সাতসাগি নামে। এদিন পাতে ডাল, সবজি, পাঁপড়ের সঙ্গে শুকটা, সিদল, সাতসাগি, ছেকা পরিবেশন করা হয়। পাটশাক কিংবা বাঁধাকপির সঙ্গে আলু, শিমের বীজ, শুঁটকি মাছ এবং সোডা মিশিয়ে তৈরি করা হয় ছেকা নামের একটি পদ বলে জানান রাঁধুনি খগেশ্বর রায়।
রাজবংশী সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই এই অনুষ্ঠান বলে জানিয়েছেন সংগঠনের ব্লক সভাপতি সুরেশ রায়।