নীলাদ্রি বিশ্বাস
দাঁড়ান দাঁড়ান। দোষারোপ পালটা দোষারোপের খেলাগুলো বন্ধ হোক এবার। মূল সমস্যার গোড়া ধরে টান মারুন না ভাই। নীতি, মূল্যবোধ, আদর্শ- এই শব্দেরা বনবাসে গিয়েছে বহুদিন তো হল। সমাজ ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধে ঢুকে যাওয়া দুর্নীতির ঘুণপোকারা এমনি এমনি তো বসে থাকবে না। প্রচুর ক্ষতি, অনেক রক্তক্ষরণ করে যাবে তারা। তাই ধর্ষক এবং ধর্ষিতা সৃষ্টি হওয়ার উৎকৃষ্ট এই সামাজিক যন্ত্রের রিমডেলিং প্রয়োজন।
বাড়ি থেকে তৈরি হয় প্রকৃত মানুষ। অভিভাবকদের তাই সচেতনভাবে প্রকৃত শিক্ষক হয়ে উঠতেই হবে। আজকের যাঁরা নব্য অভিভাবক তাঁদের দায়িত্বটাই তো সবচেয়ে বেশি। হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে শর্টকাট পদ্ধতিতে বড় করে তোলা নয়। একটু ঘাম রক্ত ঝরিয়ে নিজেদের সুখের রুটিন যাপনকে ছেঁটে ছেলে বা মেয়েটাকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য আসুন না ঝাঁপাই।
সমাজের বদলে যাওয়ার শুরু যবে থেকে, সেই একান্নবর্তী পরিবারের চুরমার হওয়ার শুরুর সময় থেকেই ঘুণপোকারা তাদের কাজ শুরু করেছিল। নিরাময় শুরু হোক সে কথা ভেবে। অর্ধেক আকাশের দাবিতে রাত দখলের জন্য আজ সোচ্চার হতে হবে কেন? স্বাভাবিক নিয়মেই পুরুষ এবং মহিলারা রাত এবং দিনের কাজ ভাগ করে নিতেই তো পারেন। শুধু প্রয়োজন ইগো বিসর্জন এবং একে অপরকে সম্মানপ্রদর্শন। বর্তমান দূষিত পরিবেশ পরিমার্জন করে বিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করা বড় প্রয়োজন। এর সঙ্গেই খুব প্রয়োজন শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করা। শুধুই মিড-ডে মিল খাওয়ার ব্যবস্থা নয়।
প্রকৃত ডিগ্রি পাক পরবর্তী প্রজন্ম কষ্ট করে অর্জনের মাধ্যমে। চাকরিপ্রাপ্তি, সাকার হওয়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা তৈরি হলেই লুম্পেনরাজ ধূলিসাৎ হতে পারে। নতুবা নয়। দশ-বারো হাজার টাকার মাইনের অস্থায়ী চাকরির জন্য ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ানো উচ্চশিক্ষিত নবপ্রজন্ম চোখের সামনেই। এদের মধ্যে থাকা একটা গরিষ্ঠ অংশ এবং রাস্তায় জন্মানো ও বেড়ে ওঠা নর্দমায় মুখ গুঁজে জীবন শেষ করা একটা সামাজিক গোষ্ঠী কিন্তু আরজি করের সে রাতের বিপুল সরকারি ধ্বংসলীলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে আত্মসুখ অনুভব করে। তাই প্রত্যেক প্রতিবাদী কণ্ঠ নেমে পড়ুক পথে, নিজের পরিবার, পরিপার্শ্বকে শুদ্ধিকরণের কাজে। না হলে এই রাত দখলের কর্মসূচি শুধু প্রতীকী হয়েই থেকে যাবে। গুগা বাবার সেই রাজার মতো শাসকের কণ্ঠ থেকে শুধু শুনতে হবে, ‘চেঁচাইছিলি কেনে?’ এ কারণেই শিক্ষার আলো জ্বালাবার ভীষণ প্রয়োজন।
প্রয়োজন দালালরাজ কিংবা মিডলম্যানগিরি অবসানের। বিপুল বেকারসমস্যার কারণে এই ধান্দাটাতেই তো হাতের গুলি এবং বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো লোকগুলো সাধারণ মানুষদের চুষে যাচ্ছে। প্রতিবাদী হতে না চাওয়া এই নরম মানুষের দল এটাকেই সরকারি ব্যবস্থা বলে মেনে নিয়ে বিপুল অর্থের অতিরিক্ত খরচে পরিষেবা গ্রহণ করছেন। এই সবধরনের বেনিয়মের বিরুদ্ধেই গোড়া থেকে সবাইকে শুদ্ধিকরণের পথে নামতে হবে। না হলে মাঝেসাঝে এমন দু’একটা রাত দখল কর্মসূচি আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বীরপুংগবদের চ্যাঁচামেচি ছাড়া কাজের কাজ কিছু হবে না।
(লেখক কোচবিহারের সংস্কৃতিকর্মী)