নয়াদিল্লি: বত্রিশ বছর আগের কথা। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। শাবল, গাঁইতি, হাতুড়ি, ডায়নামাইট নিয়ে ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদের মাথায় উঠে পড়েছিল উন্মত্ত জনতা। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই মসজিদ। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা-যমুনা দিয়ে। অযোধ্যার বাবরি মসজিদের সেই বিতর্কিত জমিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্মিত হয়েছে রাম মন্দির। প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে রামলালার। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালত অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণের জন্যও জমি বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু অর্থ ও উদ্যোগের অভাবে বিশবাঁও জলে সে মসজিদ নির্মাণ।
এই প্রেক্ষিতে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে এতদিন পরে আক্ষেপ ঝরে পড়ল সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আরএফ নরিম্যানের গলায়। রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার ২০১৯ সালের রায়কে ‘বিচার প্রক্রিয়ার চরম বিপর্যয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। নরিম্যান বলেছেন, ‘এই রায়ে সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
শনিবার প্রথম জাস্টিস এএম আহমদি মেমোরিয়াল লেকচারে ‘ভারতীয় সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি নরিম্যান বলেন, ‘আমার মতে, বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এটি একটি বড় ব্যর্থতা যে, অযোধ্যা মামলায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’ তবে তিনি রায়ের একটি ইতিবাচক দিকও উল্লেখ করে বলেন, ‘ধর্মস্থান সম্পর্কিত বিশেষ বিধান আইন, ১৯৯১’ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। এই আইনটি ভবিষ্যতে ধর্মস্থান নিয়ে নতুন বিরোধ এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
অযোধ্যা মামলার রায়ে মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে অবৈধ বলে স্বীকার করা হলেও বিতর্কিত জমি হিন্দুপক্ষকে প্রদান করা হয়। বিচারপতি নরিম্যান সুপ্রিম কোর্টের সেই যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ধর্মস্থান নিয়ে একের পর এক মামলা উঠে আসছে, যা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। মসজিদ ছাড়াও দরগাহের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান হল এই রায়ের সেই পাঁচটি পৃষ্ঠা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা এবং প্রতিটি জেলা ও উচ্চ আদালতে এগুলি পাঠ করানো।’
সরকার ও বিচার বিভাগের কার্যকলাপ নিয়েও উদ্বেগ ঝরে পড়েছে প্রাক্তন সুপ্রিম বিচারপতির গলায়। নরিম্যান বলেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়া সিবিআই বিচারক সুরেন্দ্র যাদব পরে উত্তরপ্রদেশে ডেপুটি লোকায়ুক্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। এই ঘটনা বিচার ব্যবস্থার বর্তমান নড়বড়ে অবস্থার প্রতিফলন ছাড়া কিছু নয়। তাঁর মতে, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এবং এই আদর্শ রক্ষায় আদালত সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।