কল্লোল মজুমদার ও অরিন্দম বাগ, মালদা: পাইপ ফ্যাক্টরি মোড়ে বাবলা সরকারের কারখানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি প্রায় পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। ভাঙাচোরা ওই বাড়িতে দলবল নিয়ে থেকে রেইকি চালিয়েছিল খুনে জড়িত অন্যতম অভিযুক্ত যদিও সে এখনও অধরা। এলাকাবাসীর দাবি। গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ওই বাড়িতে কয়েকজনকে নিয়ে আশ্রয় নেয় সে। কিন্তু ওই বাড়িটি তার এক আত্মীয়ের হওয়ায় প্রতিবেশীরা কেউই সন্দেহ করেননি। আর তাই নিশ্চিন্তে সেখান থেকেই করা হয়েছিল খুনের ছক।
শুধু তাই নয় গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে আসছে মালদা শহরের বাঁধরোডের একটি হোটেলে বসে সুপারি কিলারদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়। যদিও তদন্তের স্বার্থে মুখে কুলুপ এঁটেছেন পুলিশকর্তারা।
পাইপ ফ্যাক্টরি মোড়কে এলাকার মানুষ মূলত মাতাল মোড় নামেই পরিচিত। সেখানেই বাবলা সরকারের কারখানা। কারখানার পাশে এক ঝুপড়ি বাড়িতে থাকছিল। এমনই তথ্য উঠে এসেছে ধৃত অমিত রজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অমিতের বাড়িও ঝলঝলিয়াতে। এই ঝলঝলিয়া এলাকাতেই বাবলা সরকারের বাড়ি এবং অফিস। তবে ওই বাড়িটি অমিতের নিজের নয়। সম্পর্কিত দিদার বাড়ি। দিদা মারা যাওয়ার পর মাঝেমধ্যেই অমিত এসে থাকেন সেখানে। প্রতিবেশীদের দাবি, কেউই তাদের চিনতেন না। রাতে অমিতের বাড়িতে অপরিচিত ওই তরুণরা রান্না করেও খেতেন। তবে কেউই চেনা মুখ নয়। বাইকে চেপে আসতেন ওই তরুণরা।
কেন অপরিচিত তরুণদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। স্থানীয়দের দাবি, খুনের ঘটনার পর থেকেই ওই বাড়িতে আর কোনও অপরিচিত কাউকে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে ধৃত অভিজিৎ ঘোষের বাড়ি মালদা শহরের ঘোড়াপির ঘোষপাড়ায়। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল অভিজিৎ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করে পড়াশোনা ছেড়ে পাইপের দোকানে কাজ করছিল। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে সে দোকানে যাচ্ছিল না। এমনকি গত ১ তারিখ রাতে সে বাড়িও ফেরেনি। এরপর ২ তারিখ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাবলা সরকার খুন হন। এরপর বেলা ১২টা নাগাদ অভিজিৎ বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে। ওই দিন ভোর রাতেই পুলিশ অভিজিৎকে তুলে নিয়ে যায়। অভিজিতের মা সুমিতা ঘোষের দাবি, ‘এরমধ্যে কোনও পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। সে মাঝেমধ্যে নেশাও করত।’ তবে বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় সে জড়িত রয়েছে এমনটাই মানতে নারাজ পরিবারের সদস্যরা।
যদিও ঘটনার নেপথ্যে মূলচক্রী কে বা কারা এবং খুনের কারণ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন অমিত।
বাবলা সরকার খুনের পরেই ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান ঘটনার পিছোনে সুপারিক কিলারদের যোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি বারবার দাবি করেন, ১০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। এরপরেই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে বাঁধরোডের একটি হোটেলে বসে সুপারি কিলারদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়। তবে চিরকালের মতো কোনও তথ্যই সংবাদমাধ্যমকে দেননি পুলিশ সুপার।