কল্লোল মজুমদার, মালদা: বাবলা সরকার খুন কাণ্ডে প্রথমদিন থেকেই জোর চর্চা চলছিল রোহনের নাম নিয়ে। অবশেষে সেই নামে সিলমোহর দিল পুলিশ প্রশাসনও। একইসঙ্গে উঠে এল আরেকটি নাম বাবলু যাদবের। ঘটনার তিনদিন পর পলাতক ওই দুই তরুণকে ধরতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভরসা রাখল মালদা জেলা পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ছবি দিয়ে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। দিনভর যা নিয়ে জোর চর্চা চলল জেলাজুড়ে।
পুলিশের পোস্টার অনুযায়ী, দুই সন্দেহভাজনের মধ্যে একজনের নাম কৃষ্ণা রজক ওরফে রোহন, (৩০)। তার বাড়ি মালদা শহরের ঝলঝলিয়া রেলওয়ে ব্যারাক কলোনিতে এবং অপরজন বাবলু যাদবের (৩১) বাড়ি মালদা শহরের মহানন্দাপল্লিতে। বাবলা খুনের পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে। তাদের সন্ধান দিলে দুই লক্ষ টাকা করে মোট চার লক্ষ টাকা পুরস্কার মিলবে।
যদিও পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এদের মধ্যে কৃষ্ণা রজক (রোহন)কে ধরতে পারলে আরও বহু তথ্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কে এই রোহন? এলাকাবাসীর দাবি, দুধ বিক্রির আড়ালে ড্রাগসের ব্যবসা করত রোহন। একটা সময়ে বাবলা কৃষ্ণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং ড্রাগসের ব্যবসা বন্ধ করে দেন। সেই রাগও থাকতে পারে অভিযুক্তের। যদিও বাবলু যাদবের মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়। বাবলা ঘনিষ্ঠ অনন্ত চক্রবর্তীর দাবি, ‘দাদা ওর মেয়েকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ওর মেয়ের সমস্ত পড়ার খরচ বাবলাদাই চালাতেন।’
তবে দীর্ঘদিন থেকেই বাবলুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও জানা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ত্রীর দাবি, ‘আমাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। আমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। দু’-আড়াই বছর ধরে কোনও সম্পর্ক নেই।’
বাবলুর সঙ্গে যে তৃণমূল নেতাদের পরিচয় ছিল তাও মানছেন স্ত্রী। তবে কোন কোন নেতার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল, সেই নাম সামনে আনতে চাননি। শুধু বললেন, ‘আমার স্বামী তৃণমূল করত। আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না বলে খুব বেশি কথা বলতাম না। যতটা দরকার ততটুকুই কথা হত। তবে বাড়িতে বেশিক্ষণ থাকত না।’
বাবলা সরকার খুনের সঙ্গে স্বামীর নাম উঠে আসা প্রসঙ্গে স্ত্রী বলেন, ‘যদি ও এই কাজ করে থাকে হবে যেন ফাঁসি হয়।’
জেলা পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্য, ‘এদের ব্যবহার করা হত খুব কাছ থেকে বাবলা সরকারের গতিবিধির উপর নজর রেখে ছক করার জন্য। কারণ, বাবলা সরকারের একটি ফ্ল্যাটের ঠিক সামনের গলিতে কিছুটা দূরে বাবলুর বাড়ি। ফলে বাড়িতে বসেই নজর রাখা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল।’
আরও সংযোজন, ‘কৃষ্ণা রজকের ব্যাপারটা ছিল একেবারেই আলাদা। দীর্ঘদিন ড্রাগস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভয়ডর ছিল অত্যন্ত কম। এক কথায় ডাকাবুকো। আর ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় বাবলার উপর রাগ ছিল আগে থেকেই। সেই রাগকেই সম্ভবত কাজে লাগাতে চেয়েছে মাথারা।’