অরিন্দম বাগ, মালদা: বাবলা সরকারকে খুনের ঘটনায় ধৃত অভিজিৎ ঘোষ ঘটনার আগের দিন বাড়ি ছিল না। ঘটনার দিন বাড়ি ফিরে মাংস-ভাত খেয়ে ঘুমিয়েছিল। এমন নির্লিপ্ত আচরণে তদন্তকারী থেকে পরিবারের সদস্যরা বিস্মিত।
খুনের ঘটনায় তিনজনের পর আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজন ঘটনার আগের দিন বাড়িতেই ছিল না বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। তবে কি সারারাত ধরে বাবলা সরকারের বাড়ির ওপর নজরদারি চালানো হয়েছিল, সেই প্রশ্নই উঠে আসছে। ধৃতদের নাম অভিজিৎ ঘোষ (১৮) এবং অমিত রজক (২০) ওরফে অরুণ। এদিকে, অমিতের দাদা রোহন, যার নাম প্রথম থেকে ঘটনায় উঠে আসছে সে এখনও ফেরার। স্থানীয় সূত্রে খবর, মাতাল মোড় এলাকায় ওই তরুণ বহিরাগত কয়েকজনের সঙ্গে দিদার পরিত্যক্ত বাড়িতে ছিল কয়েকদিন। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি।
বাবলা খুনের ঘটনায় মালদা শহরের ঘোড়াপির ঘোষপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিজিৎ ঘোষকে। কিন্তু ছেলে যে এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে তা মানতেই পারছেন না অভিজিতের মা। তিনি জানান, ‘বড় ছেলে মাধ্যমিকে ফেল করার পর আর পড়াশোনা করেনি। রথবাড়ি এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করত। সেখানে কাজ ছেড়ে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় পাইপের দোকানে কাজ শুরু করে। সেটাও দিন পনেরো আগে ছেড়ে দেয়। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ছেলে গাঁজার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। ওকে বকাবকিও করেছিলাম। ফোন ভেঙে যাওয়ায় গত ১ তারিখ ছেলে আমার ফোন নিয়ে গিয়েছিল। রাতে বাড়ি ফেরেনি। পরের দিন সকাল ১১টা নাগাদ অন্য একজনের ফোন থেকে ছেলেকে ফোন করি। ও জানায়, ঘোড়াপিরে রয়েছে।’
অভিজিতের মা আরও জানান, ‘দুপুর দেড়টা নাগাদ ছেলে বাড়ি ফেরার পর আমি ওকে বাবলা সরকারের খুনের কথা বলি। ও তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এরপর মাংস-ভাত খেয়ে মোবাইল দেখতে থাকে। রাত তিনটে নাগাদ আমাদের বাড়িতে কয়েকজন এসে স্বামীর নাম ধরে ডাকতে থাকে। ড্রাইভার হওয়ায় মাঝেমধ্যে রাতে স্বামীর ডাক পড়ত। তেমনই ভেবেছিলাম। পরে বুঝতে পারি পুলিশ এসেছে। ওনারা ছেলের সম্বন্ধে জানতে চান। ছেলে কিছু নিয়ে এসেছে কি না তাও জিজ্ঞেস করেন। পুরো বাড়িতে তল্লাশিও চালান। কিছু না পেয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান। আমরা পরে ছেলের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। আজ সকালে টিভিতে দেখি বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা মানতেই পারছি না, ছেলে এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।’
এই ঘটনায় ইতিপূর্বেই ধৃত টিঙ্কুর ছবি দেখাতেই অভিজিতের মা এবং ভাই বলে ওঠে, ‘একে আগে দেখেছি। তবে আমাদের বাড়িতে আগে কখনও আসেনি।’
এদিকে শনিবার দুপুর একটা নাগাদ ধৃত অমিত রজক ওরফে অরুণের বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা যায়। স্থানীয়দের দাবি, ওই বাড়িতে দুই ছেলে, মাকে নিয়ে থাকতেন। বড় ছেলেকে এলাকায় দেখা যেত না। তবে অরুণ দুধ বিলি করত। বড় ছেলে সম্বন্ধে এলাকাবাসীর তেমন ধারণা না থাকলেও অরুণ এমন কাজ করতে পারে তা বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ।