রণজিৎ ঘোষ : রাজনৈতিক মতপার্থক্য বিস্তর। কিন্তু তাতে কী? সিন্ডিকেট চালাতে মিলে গিয়েছে দুই শিবিরের দুই প্রভাবশালী নেতা। কারণ কয়েকশো কোটি টাকার কাজ যেখানে। বাগডোগরা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে বালি, পাথর, লোহা, সিমেন্ট প্রয়োজন হবে। কয়েকশো কোটি টাকার কারবার। এই সমস্ত জিনিসপত্র স্থানীয়ভাবেই নেওয়া হবে।
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণত সেগুলি শাসকদলের সিন্ডিকেট থেকে নিতে বাধ্য হয় বরাতপ্রাপ্ত এজেন্সি। বিমানবন্দরের কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও শিলিগুড়িতে বিজেপির সেই শক্তি না থাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে দলের এক প্রভাবশালী বলে অভিযোগ। জিনিসপত্র সরবরাহের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরুণ নেতাকে। যা নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় দলেই ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। ফলে এই কাজ নিয়ে দুটি দলেই বিদ্রোহের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য দু’দলই মুখে কুলুপ এঁটেছে। তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ এই ধরনের কিছু জানা নেই বলে দাবি করেছেন।
বাগডোগরা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। ১৫৬০ কোটি টাকার ৫০ হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে এই প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানের তৈরি হবে বাগডোগরা বিমানবন্দর। এই কাজের জন্য বিপুল পরিমাণ বালি, পাথর, মাটি যেমন প্রয়োজন হবে, তেমনই লোহার রড, সিমেন্ট সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রেরও প্রয়োজন। সব মিলিয়ে কয়েকশো কোটি টাকার জিনিসপত্র স্থানীয়ভাবেই নেবে বরাতপ্রাপ্ত এজেন্সি।
রাজ্য সরকারের যে কোনও দপ্তরের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী শাসকদলের নেতাদের এজেন্সিই পেয়ে থাকে। বাম আমলের ধারা এই তৃণমূলের আমলেও সমানভাবে চলছে। সেই হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজের টেন্ডার বিজেপি নেতাদের পাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে তৃণমূলকে অন্ধকারে রেখে বিজেপির যে গুটিকয়েক লোকজন রয়েছে তাঁদের দিয়ে কাজ করালে গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকছে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাতের সিদ্ধান্ত বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতার। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই বিজেপি নেতা শিলিগুড়ি শহরের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার সঙ্গে মিলে এই সমস্ত কাজ করার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব লুফে নেন তৃণমূল নেতাও।
দুজনের মধ্যে গোপন বৈঠকে বিমানবন্দরের কাজের রুটম্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে আনুমানিক কত পরিমাণ বালি, পাথর, মাটি, সিমেন্ট, রড প্রয়োজন সমস্তকিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আর এখানেই তৃণমূলের ওই প্রভাবশালী নেতার প্রস্তাব মেনে শহরের তৃণমূলের এক তরুণ নেতাকে পুরো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ওই যুব নেতার মাটিগাড়ার উপনগরীতে ব্যবসাও রয়েছে। ওই তরুণ নেতা একাই সমস্ত জিনিস সরবরাহ করবেন, নাকি সঙ্গে অন্যদেরও নেবেন সেটা তিনিই ঠিক করবেন। এই কাজ করে যে কমিশন আসবে সেখান থেকে তৃণমূল এবং বিজেপির দুই নেতাকেই হিসাব চুকিয়ে দেওয়া হবে।
এই ঘটনা চাউর হতেই বিজেপি এবং তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের জেলা নেতা-নেত্রীদের কাছে গিয়ে দরবার করছে পার্টির করে খাওয়া ছেলেপুলেরা। আমরা কেন কাজ পাব না, একাই ওই তরুণ নেতা কাজ কেন করবে সেই প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলে। আবার বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের কাজও তৃণমূল তরুণ নেতাকে দিয়ে করানো হচ্ছে, তাহলে তাঁরা পার্টি করে কী করবেন? যদিও বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলেছেন, ‘এমন কোনও বিষয় জানা নেই।’