বাগডোগরা: বিকেলবেলা ছাদে উঠতেই দেখা গেল জলের ট্যাংকের ঢাকনা ভাঙা। কী করে হল? ভাবতে ভাবতে একটু এগিয়ে গিয়ে ট্যাংকের ভেতরে উঁকি মারতেই দেখা গেল, মনের আনন্দে সেখানে স্নান করছে বঁাদর। তাড়ানোর চেষ্টা করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে উলটে আক্রমণ করছে তারা। কয়েকদিন যাবৎ এমনই ছবি ধরা পড়ছে বাগডোগরার বেশ কয়েকটি এলাকায়। বাঁদরের বাঁদরামিতে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা।
হরেকৃষ্ণপল্লির বেশ কয়েকটি বাড়ির ছাদে জামাকাপড় শুকোতে দেওয়া ছিল। ছিল অনেকগুলি ফুলের টব। সমস্ত কিছু লন্ডভন্ড করে গিয়েছে বাঁদরের দল। যেমন কয়েকদিন আগে ওই এলাকার বাসিন্দা সুনীতা দেবীর বাড়ির ছাদে এসে জামাকাপড় ফেলে দিয়েছে, তছনছ করে দিয়েছে ফুলের টব। তিনি বলছেন, ‘ভয় দেখাতে গেলে উলটে আক্রমণ করতে আসে।’ কোথাও সপরিবারে বাঁদরামি করছে, কোথাও আবার ‘একাই একশো’। জলের লাইনের পাইপ ভেঙে দেওয়া কিংবা ঘরে ঢুকে খাবার তুলে নিয়ে চম্পট দেওয়াতে একাই যেন সিদ্ধহস্ত। সপরিবারে এসে বাড়ির গাছ থেকে ফল পেড়ে নিচ্ছে। তারপর রীতিমতো ‘বুক বাজিয়ে’ খেতে খেতে সেখান থেকে ‘হাওয়া’ হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী বাঁদরের উৎপাত থেকে পরিত্রাণ চাইছেন। বিষয়টি নিয়ে কার্সিয়াং বন বিভাগের বাগডোগরার রেঞ্জ অফিসার সোনম ভুটিয়া বলছেন, ‘লোকালয়ে বাঁদরের বাঁদরামি বেড়েছে একথা ঠিকই। বিভিন্ন পাড়ায় চলে যাচ্ছে। বাগডোগরা রেঞ্জ অফিসের ক্যাম্পাসে, ব্যাংডুবি সেনাছাউনি এলাকা থেকেও খবর আসছে। শুক্রবার একটা মিটিং রয়েছে। আমরা সেখানে আলোচনা করে দেখি কী করা যায়।’
হঠাৎ করে এই সমস্যা তৈরি হল কীভাবে? স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে ‘রামভক্তকে’ কলা, আপেল, পেয়ারা, রুটি, বিস্কুট, কেক সহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খেতে দেন অনেকেই। এর ফলে লোকালয়ে বাঁদরের আনাগোনা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। আর যত আনাগোনা বাড়ছে, ততই বাড়ছে বাঁদরামি। হাতের কাছে সুস্বাদু খাবারের লোভে বন ছেড়ে লোকালয়কেই বেছে নিচ্ছে বঁাদরের দল। অন্যদিকে, এই মুহূর্তে সমস্যা সমাধানের কোনও পথ না দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ব্যাংডুবি সামরিক বিভাগের বি-জোনের আবাসিক হেমন্ত সিং বলছেন, ‘বাঁদরের অত্যাচারে দরজা-জানলা সবসময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমাদের আবাসনের কাছেই জঙ্গল। বাঁদররা এখন আর সেখানে থাকতেই চায় না। সবসময় আবাসনে কিংবা রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।’ আরেক বাসিন্দা নীলম দেবী বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। বলছিলেন, ‘বাচ্চার হাত থেকে টিফিনবাক্স কেড়ে নিয়ে চলে যায়। আমরা আতঙ্কিত।’ আপার থেকে লোয়ার বাগডোগরা, সর্বত্র কান পাতলেই বাঁদরামির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সকলেই চাইছেন, বন বিভাগের একটা বিহিত করুক।