সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: স্বামীহারা তরুণীর জীবনে একঝলক আলো নিয়ে এসেছিল দীর্ঘদিন ভিনরাজ্যে কাজ করা প্রেমিক। কিন্তু সেই আলোর নীচে যে এতটা অন্ধকার, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি ওই তরুণী। সন্তানদের ছেড়ে, প্রেমিকের ডাকে ছুটে গিয়েছিলেন সুদূর গুরুগ্রামে (Gurugram)। কিন্তু সেখানে পৌঁছোতেই প্রেমিকের ভোল বদল দেখে চমকে ওঠেন তিনি। জোর করে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিতে শুরু করেছিল প্রেমিক। প্রতিবাদ করলে জোটে মারধর। অবশেষে সুযোগ পেতেই ওই মহিলা অন্ধকার জগতের গোপন ডেরা থেকে পালিয়ে যান। অচেনা জায়গায় সারারাত দৌড়ে আশ্রয় নেন একটি মন্দিরে। পরে পুলিশের সহায়তায় বাড়ি ফিরে আসেন ওই তরুণী। তবে এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার পরেও বাড়ি ফিরে এসে তিনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চান না। ওই তরুণীকে এদিন তাঁর মায়ের হাতে তুলে দিয়েছে বালুরঘাট থানার পুলিশ (Balurghat Police)।
বালুরঘাট (Balurghat) শহরের বাসিন্দা ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছিল তপনের একটি গ্রামে। বছর তিনেক আগে স্বামী মারা যাওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি চলে এসেছিলেন তাঁর বিধবা মায়ের কাছে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন ধরেই ওই তরুণী মোবাইলে ব্যস্ত থাকতেন। এরপর মাসখানেক আগে তিনি আচমকা নিখোঁজ হয়ে যান। কোথাও খোঁজ না পেয়ে অবশেষে গত ২৫ জুন বালুরঘাট থানায় মেয়ের নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণীর বৃদ্ধা মা। কিন্তু তাঁর কোনও হদিস করতে পারেনি পুলিশ। শেষপর্যন্ত বুধবার ওই তরুণী নিজেই বালুরঘাট থানায় এসে জানান, তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন। তড়িঘড়ি পুলিশ তাঁর মাকে ডেকে পাঠায়। ওই তরুণীকে তাঁর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে ওই তরুণী এদিন তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শোনান সকলকে। তাঁর কথায়, ভিনরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এক তরুণের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই তরুণ তাঁকে বিয়ে করবে বলে গুরুগ্রামে ডেকে পাঠিয়েছিল। সেখানে দুজনে সংসার করবে বলে তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছিল। কিন্তু গুরুগ্রামে পৌঁছে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর প্রেমিকেরই মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। সারাদিন কাজ করে এসে রাতের বেলায় একটি ভাড়া ঘরে আরও কয়েকজন মহিলা ও পুরুষের সঙ্গেই থাকতে হত তাঁদের। শুধু তাই নয়, এরপর ওই প্রেমিক খরিদ্দার ডেকে ওই তরুণীকে তাদের সঙ্গে পাঠানোর চেষ্টা করে। তরুণী প্রতিবাদ করায় তাঁকে আটকে রাখা হয় একটি গোপন ডেরায়। মারধরও শুরু হয়।
তরুণী জানান, এক রাতে সুযোগ মিলতেই, সোজা ওই ডেরা থেকে বেরিয়ে প্রায় দশ কিলোমিটার দৌড়ে অচেনা একটি জায়গায় পৌঁছান তিনি। পথেই একটি মন্দিরে কিছুক্ষণ আশ্রয় নিয়ে ও প্রসাদ খেয়ে ফের চলতে শুরু করেন। এভাবেই চলতে চলতে হঠাৎ রাস্তায় কয়েকজন পুলিশকর্মীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তাঁরাই তাঁকে ট্রেনের ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেন। অনেক কষ্টে তিনি বালুরঘাটে ফিরে আসেন। বালুরঘাট থানার আইসি সুমন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘এক মহিলা নিখোঁজ থাকার অভিযোগ হয়েছিল। তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে।’