রূপক সরকার, বালুরঘাট: পুনর্জন্ম বোধহয় একেই বলে। জন্মের আগেই বাবা-মা ভেবে রেখেছিল মেয়ে হলে নাম রাখবে ‘সাথি’। কিন্তু বিধির বিধান। জন্মের সময় ওজন ছিল মাত্র ৬৯৫ গ্রাম। এরকম ওজনের অপরিণত শিশুর জন্মের পরেই হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলেই ভেবেছিল এই শিশুকে আর বাঁচানো যাবে না। কিন্তু হার মানতে নারাজ হাসপাতালের সকলের শুরু হয় দীর্ঘ সংগ্রাম। যে-কোনও মূল্যে ওই শিশুকে বাঁচাতে হবে। এরপর দীর্ঘ ৯২ দিন হাসপাতালের সিসিইউ-তে রাখার পর বুধবার বিকেলে শিশুটিকে ছুটি দিয়ে তাঁর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের (Balurghat District Hospital) এই জীবনদানে বর্তমানে শিশুটি সুস্থ রয়েছে এবং তিনমাসে ওজন প্রায় এক কিলো বেড়েছে। চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন সফলতায় খুশি বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ৮ অক্টোবর প্রসববেদনা নিয়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন তপন থানার অন্তশিমুল এলাকার পার্বতী ওরাওঁ। তৃতীয় সন্তানের প্রসবের সময় দেখা যায় সমস্যা। ২৬ সপ্তাহে হঠাৎই শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টি নজরে আসতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আনার কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালেই অপরিণত কন্যাসন্তানের জন্ম দেন পার্বতীদেবী। জন্মের সময় মেয়ের ওজন ছিল মাত্র ৬৯৫ গ্রাম।
অপরিণত শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য জেলা হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স থেকে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেন। সেইমতো শিশুটিকে সঙ্গে-সঙ্গে এসএনসিইউ-তে ভর্তি করা। শিশুটির পাশাপাশি তার মাও শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিল। তাকেও হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা। এসএনসিউ-তে চিকিৎসাধীন ছিল মেয়ে সাথী। দীর্ঘ ৯২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সাথীর ওজন বর্তমানে এক কিলো ৬২০ গ্রামে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই আজ তাকে ছুটি দিয়ে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শিশুর মা পার্বতী ওরাওঁ বলেন, ‘আমার সন্তান বেঁচে আছে সেটা হাসপাতালের ডাক্তারবাবু দিদিমণিদের জন্য। ওনারা যেভাবে আমার মেয়েকে দেখভাল করেছেন তার জন্য তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। ওনারা ভালোভাবে না দেখলে মেয়েকে আমি ফিরে পেতাম না।’
শিশুর বাবা রাজীব ওরাওঁ জানান, ‘র্যাশনের দোকানে কাজ করি। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কী করব বুঝতে না পেরে প্রথমে তপন গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে সন্তান জন্মাল। তার ওজন খুব কম ছিল। ভেবেছিলাম মেয়েকে হয়তো আর বাঁচাতে পারব না। কিন্তু বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল ও নার্সদের চিকিৎসায় মেয়ে সুস্থ হয়েছে।’
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগের কথায়, ‘২৬ সপ্তাহের প্রসূতি হাসপাতালে শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়। ভর্তির কিছু বাদেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। তাই আজ তাকে ছুটি দিয়ে মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স থেকে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা শিশুটিকে বাঁচাতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন।’