রূপক সরকার, বালুরঘাট: এ যেন নিজভূমে পরবাসী! ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে চাষবাস করতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়ছেন ভারতীয় কৃষকরা। আর হয়রানির অভিযোগ ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে। এমনই অভিযোগ তুলে সরব হলেন বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুলকিপুরের বাসিন্দারা। এমনকি গণস্বাক্ষর সংবলিত পত্র জেলা শাসক, পঞ্চায়েত ও বিডিওকে দিয়েছেন স্থানীয়রা। আমন ধান রোপণের সময় বিএসএফের হয়রানির মুখে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এবিষয়ে জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’এনিয়ে বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি গ্রামের মানুষ ও বিএসএফের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রায় ২৫২ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। এখনও ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত। যার মধ্যে বালুরঘাট ব্লকের ভুলকিপুর অন্যতম। আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। পুরো ভুলকিপুরে স্থায়ী কাঁটাতার নেই। মাস তিন-চার আগে অরক্ষিত এলাকায় কাঁটাতার দেওয়াকে কেন্দ্র করেও বিএসএফের সঙ্গে প্রথম বচসা হয়। ভুলকিপুরের বহু কৃষকের জমি কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে। বর্তমানে কাঁটাতারের ওপারে জমিতে যাওয়া নিয়েও সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। নিয়ম মেনেও কাঁটাতারের ওপারে যেতে পারছেন না কৃষকরা। এমনকি অনুমতি নিতে গেলেও দ্রুত অনুমতি দিচ্ছে না বিএসএফ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তল্লাশি করতে গিয়েও তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে। এনিয়ে শুক্রবার জেলা শাসক সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিতভাবে অভিযোগ জানান গ্রামবাসীরা।
অভিযোগকারী কৃষক নীলমণি মুর্মুর কথায়, ‘কাঁটাতারের পাশে আমার বাড়ি। বর্তমানে এলাকায় বিএসএফের নতুন কোম্পানি এসেছে। কাঁটাতারের ওপারে চাষবাস করতে গেলে আমাদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। তল্লাশি চালানোর নাম করেও হয়রানি করা হচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের যেভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এমনভাবে চললে ভুলকিপুরে আমরা আর বসবাস করতে পারব না।’
যদিও বিএসএফের আধিকারিকরা কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বিএসএফ সূত্রে খবর, বাংলাদেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় প্রত্যেকটি সীমান্তেই কড়াকড়ি চলছে। চাষিদের কাঁটাতারের ওপারে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কোনও হয়রানি করা হচ্ছে না। এপ্রসঙ্গে বালুরঘাটের বিডিও সম্বল ঝাঁ বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।’
বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরূপ সরকার জানান, ওই গ্রামগুলির মানুষ সত্যিকারের সমস্যায় পড়েছেন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।