পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরির কথা সকলের জানা আছে। অনেকে আবার কাঠের মূর্তিও তৈরি করেন। মূর্তি তৈরি হয় আরও অনেক কিছু দিয়ে। সে সবের কথা কমবেশি সকলের জানা। তাই বলে ফাটা পাইপলাইন জোড়ার জন্য ব্যবহৃত সামগ্রী দিয়ে মূর্তি? অবাক করার ঘটনা হলেও বাস্তবে সেটাই করে দেখিয়েছেন বালুরঘাট (Balurghat) শহরের সুভাষ কর্নারের শিল্পী ভাস্কর বসাক।
পাইপলাইনের কাজে ব্যবহৃত এই সামগ্রীর গালভরা নাম ইপক্সি। এটা এক ধরনের আঠা, তৈরি হয় এপিক্লোরোহাইড্রিন এবং বিসফেনল দিয়ে। সঙ্গে মেশাতে হয় –একটি হার্ডেনারের মিশ্রণ। দ্রুত ব্যবহার করতে না পারলে মুহূর্তের মধ্যে শুকিয়ে যায়। আর সেটা দিয়েই মূর্তি তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন ভাস্কর।
ইপক্সি দিয়ে মূর্তি তৈরির বরাত এসেছিল তামিলনাড়ু থেকে। বিষয়টা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল ভাস্করের কাছে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। টানা তিন মাস ধৈর্য ধরে তিনি একটি কৃষ্ণমূর্তি তৈরি করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। মূর্তির উচ্চতা প্রায় ১৪ ইঞ্চি।
ইপক্সি দিয়ে মূর্তি তৈরি করতে ভাস্করকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি। মূর্তি তৈরির জন্য প্রথমে তাঁকে একটি লোহার কাঠামো তৈরি করতে হয়। তার ওপর ইপক্সি দিয়ে কৃষ্ণের প্রতিকৃতি তৈরি করেন। এরপর মূর্তিতে লাগে লাল, কালো ও সাদা রংয়ের প্রলেপ। জরি ও ময়ূরপুচ্ছ দিয়ে মুকুট। মূর্তিতে পরান অলংকার। সেজে ওঠে বাঁশি হাতে শ্রীকৃষ্ণ।
শিল্পী ভাস্কর বসাক জানান, ‘এর আগে ছোট আকারের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছি। তাছাড়া একাধিক মিনিয়েচার ভাস্কর্য তৈরি করি। তামিলনাড়ু থেকে ইপক্সি দিয়ে কৃষ্ণমূর্তি তৈরির বরাত আসায় একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। পরে বিষয়টি বুঝতে পারি। কারণ এই কম্পাউন্ড শুকিয়ে গেলে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। নষ্ট হওয়ার কোনও ভয় নেই। এমনকি এটি সম্পূর্ণ জল নিরোধক। তবে দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কাজের সময় বেশ কষ্ট হয়েছে। অনেক সময় ভেঙে আবার নতুন করে গড়তে হয়েছে।তামিলনাড়ুর ওই বাসিন্দা আমার কাজে যথেষ্ট খুশি। পরিচিতরাও আমার এই কাজ দেখে মূর্তি বরাত দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন।’